শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নতুন দু’জনসহ করোনায় আক্রান্ত ১০

চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন ৩ : দেশে ১৬ জন আইসোলেশনে এবং ৪৩ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে : হাঁচি-কাশি-সর্দিতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ : আইইডিসিআর’র : সউদী থেকে ফিরছেন ৩৯৪ জন : স্ব

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশে আরো দুইজনের মধ্যে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাড়ালো ১০ জনে। নতুন আক্রান্ত দু’জনের একজন প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। অন্যজন বিদেশফেরত একজনের সংস্পর্শে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। লক্ষণ দেখাদিলে হট নম্বরে ফোন করতে হবে, আইইডিসিআর-এ কারো পরীক্ষা করা হবে না। নতুন করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ, নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সারাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ১০ জনের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। যাদের মধ্যে প্রথম দফায় আক্রান্ত তিনজন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাতজন। প্রফেসর ফ্লোরা বলেন, নতুন আক্রান্ত দু’জনই পুরুষ। তাদের মধ্যে একজন ইতালি থেকে ফেরার পর প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। আরেকজন একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি দেশেই ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছেন এমন একজনের সংস্পর্শে এসে তিনি সংক্রমিত হন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সেই ব্যক্তির শরীরে সামান্য জ্বর ছিল। তবে তার সংক্রমণ ধরাপড়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছেন। তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশনকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে দেশে ১৬ জন আইসোলেশনে এবং ৪৩ জন প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন।

প্রফেসর ফ্লোরা বলেন, পারিবারিকভাবে সেলফ কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টি খুব শক্তভাবে পালন করার জন্য আমরা বার বার বলেছি। এখন পর্যন্ত রোগটি কমিউনিটি পর্যায়ে ছড়ায়নি। কিন্তু বিদেশে থেকে এসেছেন বা আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটছে। বিদেশ থেকে এসেছেন এবং জ্বর, গলা ব্যাথা অথবা অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দিয়েছে, কিংবা বিদেশ থেকে আসা কারো সংস্পর্শে এসেছেন- এমন কারো মধ্যে কভিড-১৯ রোগের উপসর্গ দেখা দিলে সরাসরি কোনো হাসপাতালে না গিয়ে আইইডিসিআরের হটলাইনে (০১৯৪৪৩৩৩২২২) ফোন করার পরামর্শ দেন তিনি। আইইডিসিআরের টিম গিয়ে বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে। প্রয়োজনে এম্বুুলেন্সে করে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা হবে। হাঁচি, কাশি, সর্দি হলেই করোনাভাইরাস মনেকরে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়নি। অর্থাৎ রোগটি সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। এ কারণে হাঁচি-কাশি, সর্দি, গলাব্যথা এসব দেখা দিলেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ভেবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন না।

বিশ্বজুড়ে নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম তিনজন এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানায় আইইডিসিআর। ওই তিনজনের মধ্যে দু’জন ইতালি থেকে এসেছিলেন। ইতালি ফেরত একজনের পরিবারের সদস্য ছিলেন আক্রান্ত তৃতীয়জন। ওই সময় আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি আরও চারজনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। এরপর ১৪ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরো দু’জন আক্রান্তের খবর দেন। ওই দু’জনের একজন ইতালি অপরজন জার্মানি থেকে এসেছিলেন। তাদেরই একজনের মাধ্যমে পরিবারের এক নারী ও দুই শিশুর আক্রান্ত হওয়ার তথ্য ১৬ মার্চ নিশ্চিত করে আইইডিসিআর।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৬১টি দেশে ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা ৭ হাজার ১০০ ছাড়িয়েছে। তবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আক্রান্ত দেশের সংখ্যা ১৫২, রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৬৭ হাজার ৫১১ জন। আম এ রোগে মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৬০৬ জনের।

স্বাস্থ্য ভবনে ‘সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ’ চালু : নতুন করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ, নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সারাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন ঠিকঠাক মানা হচ্ছে কি না, সারা দেশে আইসোলেশনে থাকা রোগীদের সবশেষ অবস্থা- সব কিছু সেখান থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় তিনি বলেন, যারা সংক্রামক ব্যাধি আইন অমান্য করবে, দেশের মানুষকে বিপদে ফেলবে, অন্যদের সংক্রমিত করবে, তাদের জরিমানা করা হবে। যদি অপরাধের পরিমাণ বেশি হয় তাহলে তারা বেশি অপরাধ করে, তাদের প্রয়োজনে জেলে দেয়া হবে। আইনে সে ধরনের কথা বলা হয়েছে। তবে করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, পরীক্ষার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় কিট মজুদ রয়েছে। পাইপলাইনে কিট রয়েছে। তবে বিশ্বব্যাপীই কিট সঙ্কট চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও কয়েকটি রাষ্ট্র আমাদের কিট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাই কিটের সঙ্কট হবে না বলে আশা করি। এ সময় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান, অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজদ।

সউদী থেকে ফিরছেন ৩৯৪ জন: সউদী আটকে পড়া ২৯৯ জন ওমরাহ যাত্রীসহ মোট ৩৯৪ জনকে নিয়ে দেশে ফিরেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট। গতকাল বিকেল ৪টায় তাদের বহনকারী ফ্লাইটটি (বিজি-২৩৬) ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর আগে বিমানের বিশেষ এই ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ২৮ মিনিটে জেদ্দার কিং আবদুল আজিজ বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। সউদী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত রোববার থেকে রিয়াদ, দাম্মাম, জেদ্দা ও মদিনায় বিমানের সব ধরনের ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহ এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। এ সময়ের মধ্যে কেউ দেশে ফিরতে পারবেন না। তাই সউদীতে আটকে পড়া ওমরাহ যাত্রীদের আনতে বিশেষ ফ্লাইট পাঠিয় বিমান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
কামাল ১৮ মার্চ, ২০২০, ২:৩০ এএম says : 0
আল্লাহ তুমি সবাই কে হেফাজত করো
Total Reply(0)
মোহাম্মদ স্বপন ১৮ মার্চ, ২০২০, ১২:৫৪ পিএম says : 0
আল্লাহ তুমি আমাদের সাবাইকে সুস্থ রাখো.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন