রেডিওথেরাপির মাধ্যমে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবায় বর্তমান বিশ্বে মেডিক্যাল লিনিয়ার এক্সিলেরেটর মেশিন সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অনকোলজী বিভাগে যুক্তরাজ্য থেকে আমদানীকৃত সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা সম্বলিত সর্বাধুনিক মেডিক্যাল লিনিয়ার এক্সিলেরেটর মেশিন স্থাপন করেছে। বুধবার (১৮ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ে এফ-ব্লকে প্রধান অতিথি হিসেবে লিনিয়ার এক্সিলেরেটর মেশিন-এর শুভ উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর। সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. কনক কান্তি বড়–য়া। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রো-ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কোষাধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রো-ভিসি ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, প্রক্টর ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে মাহবুবুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিভাগীয় চেয়ারম্যানের বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ডা. সারওয়ার আলম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্মানিত রেজিস্ট্রার ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান।
জাহিদ মালেক বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য কাজ করে গেছেন। মুজিব শতবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যান্সারের রোগীদের সেবার জন্য লাইনাক মেশিন চালু করা হয়েছে। ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার জন্য একটি কোবল্ট-৬০ মেশিনও এই বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়া হবে। করোনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৬২টি দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। ৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। করোনা রোগীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। বিদেশ ফেরতদের অবশ্যই সেলফ আইসোলেশনে থাকতে হবে। করোনা মোকাবেলায় কোয়ারেন্টাইনই সর্বোত্তম পদ্ধতি। চীন এই পদ্ধতিতে সফল হয়েছে। বিদেশ ফেরতরা এই নির্দেশ না মানলে তাকে জেলেও যেতে হতে পারে।
মো. আলী নূর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাধুনিক লিনিয়ার এক্সিলেরেটর মেশিন চালু বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবায় একটি বড় অর্জন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো। করোনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে করোনাকে মোকাবেলা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. কনক কান্তি বড়–য়া বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছা ও আর্থিক সহায়তা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তা, নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থের যোগান নিশ্চিত করাসহ যাথাযথ মনিটরিং এর কারণে সেন্টার অব এক্সিলেন্স খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে লিনিয়ার এক্সিলেরেটর মেশিন চালু করা সম্ভব হয়েছে। এটা হল মুজিব বর্ষে ক্যান্সার রোগীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার।
প্রফেসর ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। লিনিয়ার এক্সিলেরেটর মেশিন সংযোজন সেই উন্নয়নেরই ফসল।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছা ও আর্থিক সহায়তা ছাড়া লিনিয়ার এক্সিলেরেটর মেশিন ক্রয় সম্ভব হতো না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও সহায়তায় এবং বর্তমান প্রশাসনের নিরলস প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ও চিকিৎসাসেবা, শিক্ষা ও গবেষণায় দিন দিন আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
বিভাগীয় চেয়ারম্যানের প্রপেসর ডা. সারওয়ার আলম জানান, ফোটন ও ইলেকট্রন এনার্জি সম্বলিত সর্বাধুনিক লিনিয়ার এক্সিলেরেটর মেশিনে মানবদেহের যেকোনো ক্যান্সার আক্রান্ত কোষে রেডিওথেরাপি দেয়া যায়। এই মেশিনে ৩টি নমিনাল ফোটন এনার্জি ও দুটি হাইডোজ রেট সম্পূর্ণ ফোটন এনার্জি এবং ৬টি ইলেকট্রন এনার্জি সংযুক্ত আছে। এছাড়া আনুষঙ্গিক বিভিন্ন যন্ত্র সংযুক্ত করা হয়েছে। এরমাধ্যমে রোগীর টিউমার লোকালাইজেশন ও ইমেজ সংগ্রহ, কনটউরিং ও প্ল্যানিং, সঠিকভাবে রোগীর পজিশনিং এবং সঠিক ডোজ পরিমাপের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা যায়। এই মেশিনের মাধ্যমে ১টি শিফটে ৪০ জন রোগীকে রেডিওথেরাপি দেয়া যায় এবং শিফট বৃদ্ধি করলে অধিক সংখ্যক রোগীকে সেবা দেয়া সম্ভব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক কম ব্যয়ে এই সেবাটি নিতে পারবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন