বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারকে বাগাড়ম্বর না করে গুরুত্ব অনুধাবন করে করোনা আক্রান্ত রোগিদের জন্য পৃথক চিকিৎসা সেবাপ্রদান এবং বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেয়ে আংশিক বা সম্পূর্ণ লকডাউনের দাবি জানিয়েছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ড্যাব। না হলে ভয়াবহ দিন আসছে। মঙ্গলবার সংগঠনের সভাপতি প্রফেসর ডা: হারুন আল রশিদ এবং মহাসচিব প্রফেসর ডা: মো: আব্দুস সালাম এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। এরআগে সভাপতি হারুন আল রশিদ ফেসবুক লাইভে এসব বক্তব্য দেন। বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, করোনা সংক্রমণ পর্যায়ক্রমিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পর্যন্ত বিশে^র প্রায় ১৮৯টি দেশ ও অঞ্চলে ভাইরাসটি মরণ ছোবল এনেছে এবং এর করালগ্রাসে মৃত্যুবরণ করেছে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ। বিশ^ব্যাপী করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা যেভাবে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে তাতে জনবহুল দেশ হিসাবে আমাদের আতংকিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এর থেকে মুক্তি পেতে বিশে^র অধিকাংশ দেশ জরুরী অবস্থা জারি করেছে অথবা আংশিক বা সম্পূর্ণ লকডাউন করেছে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের প্রস্তুতি, কার্যক্রম, অপ্রতুল, দূর্বল, বিশৃংখলা বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) করোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্ভূত এই ‘বৈশি^ক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে গত ১৩ই কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেছিলো, যার মধ্যে অন্যতম ছিলো- বিদেশ ফেরতদের যথাযথ স্ক্রিনিং এবং তদনুযায়ী সনাক্তপূর্বক আইসোলেসন ও কোয়ারেন্টাইন। আক্রান্ত ব্যাক্তিদের যথাযথ চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। চিকিৎসাসেবার সাথে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্টাফদের ব্যাক্তিগত নিরাপত্তার (পিপিই, মাস্ক-৯৫) ব্যবস্থা গ্রহণ। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকার বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব দেননি। এসব করতে এই সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়Ñ ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সরকারীভাবে ৩৯ জনের আক্রান্তের কথা বলা হয়েছে এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৪ জন। কিন্তু কয়েক লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশী দেশে ফিরেছে, এরা কোনো প্রকার স্ক্রিনিং ব্যতীত দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামে চলে গেছে এবং হয়তো এই ভাইরাস বহন ও সংক্রমণ করছে। আপনার নিশ্চিয়ই বুঝতে পারছেন অদূর ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কি ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে। অথচ সরকারকে আমরা দায়িত্বশীল আচরণ করতে দেখছিনা। অদ্যাবধি ভাইরাসটি সনাক্তকরণ কিট্স পর্যাপ্ত নয়। সনাক্তকরণ, আইসোলেসন, কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত। আক্রান্ত ব্যাক্তিদের চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল। চিকিৎসাসেবা প্রদানকারীদের ব্যাক্তিগত নিরাপত্তার (পিপিই, মাস্ক-৯৫ সরবরাহ) উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
ড্যাব দ্ব্যার্থহীনভাবে বলতে চায়- শুধু বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে মরণঘাতক করোনা ভাইরাসের বিষাক্ত ছোবল রক্ষা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশকে রক্ষা করতে চাইলে, এদেশের মানুষকে বাঁচাতে চাইলে জরুরীভাবে সর্বাত্মক প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। পুনরায় সরকারের কাছে জোরালো প্রস্তাব রাখছি- যে, বাংলাদেশের সাধারণ দিনমজুর মানুষের জীবনধারণের ব্যবস্থাপূর্বক বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী প্রযোজ্যক্ষেত্রে আংশিক বা সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হোক। জরুরীভাবে কমপক্ষে প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে একটি করে হাসপাতালে শুধু করোনা ভাইরাসের রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক এবং পর্যায়ক্রে প্রতিটি জেলায় একটি করে হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধার ব্যবস্থা করা হোক। করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণের জন্য প্রয়োজনীয় রি-এজেন্ট শুধু আইইডিসিআর এ সীমাবদ্ধ না রেখে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারী ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বেসরকারী হাসপাতালে সরবরাহ করা হোক। বিদেশ ফেরত বাংলাদেশীদের কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেসনের আওতায় আনা হোক। আইসিইউ ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হোক। করোনায় আক্রান্তদের পৃথকভাবে চিকিৎসা করা হোক। চিকিৎসকদের ও চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সকলস্তরের জনবলের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে যাবতীয় সরঞ্জামাদি সহজলভ্য করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। নতুবা সংক্রমণ এমনভাবে বৃদ্ধি পাবে যা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছি। আমরা এখনো মনে করি শুধু বাগাড়ম্বর না করে সরকার যদি পরিস্থিতি গুরুত্ব অনুধাবন করে জনগণকে সাথে এবং আস্থায় নিয়ে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয় তাহলেই কেবল এই প্রাণঘাতী মহামারি থেকে মহান আল্লাহ আমাদেরকে উদ্ধার করতে পারেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন