শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ঘোরাঘুরি জটলার হুজুগ

বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ২৭ মার্চ, ২০২০, ১২:০৬ এএম

করোনাভাইরাস নামের বৈশ্বিক মহামারী গোটা দুনিয়াবাসীকে কাঁপিয়ে ও কাঁদিয়ে ছাড়ছে। মরছে মানুষ দেশে দেশে। বাংলাদেশেও ধেয়ে এসেছে। কখন তা তীব্র হানা দেয় এ নিয়ে নিরীহ জনগণের মনে নেই শান্তি। সবার ঘুম হারাম। পরিবার-পরিজন নিয়ে মানুষ চিন্তায় বেহাল। ধর্মপ্রাণ জনগণ আল্লাহমুখী।

এহেন ঘোর মহাদুর্যোগের মাঝেও অনেক হুজুগে মানুষের সড়ক, মোড়ে মোড়ে, রাস্তাঘাট, অলি-গলিপথে এলোপাতাড়ি ঘোরাঘুরি, জটলা পাকানো, টহলবাজি, গালগল্প-আড্ডা যেন আর থামতেই চায় না। এমনকি কোথাও কোথাও তাস, ক্যারামের সঙ্গে জুয়ার আড্ডাও। ওরা এলাকাবাসীর শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। এ যেন পিশাচের অট্টহাসি।

গতকাল চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ী, জামাল খান, মোমিন রোড, জুবিলি রোড, স্টেশন রোড, রেয়াজুদ্দিন বাজার, বাটালি রোড, লালখান বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নিছক হুজুগের বশেই মানুষ ঘোরাঘুরি করছে। বেশ ক’জন জড়ো হয়ে আলাপ আড্ডায় মশগুল। মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরেফিরে শহর দেখার যেন এখনই সুখকর সময়! দেখা গেলো, দোকানের দরজা ফাঁক রেখে দিব্যিই হচ্ছে বেচাকেনা।

যদিও বেশিরভাগ বন্ধ। রাস্তাঘাটে মানুষের চলাফেরা কম হলেও অলিগলিজুড়ে আড্ডা ও ঘোরাঘুরির যেন শেষ নেই। মোমিন রোডে আলাপে মগ্ন ৮/১০ জন যুবক। তাদের মুখেই শুনি করোনা সরস কথাবার্তা। সবার মুখে নেই মাস্ক। সিগারেট ফুঁকছে দুজন। এই জটলায় করোনা সংক্রমণের শঙ্কার ছায়া দেখা যায়নি কারও চেহারায়।

তবে একটি বাণিজ্যিক ভবনের নিচে গিয়ে দেখি সুনসান নিরবতা। নিচে টুলে বসা দারোয়ান মানিক। মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরা। তিনি সতর্ক বোঝা গেলো।

অন্যদিকে আশা জাগানো কথা, করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে সবধরনের আড্ডা, জটলা, দোকানপাট বন্ধে প্রশাসনের সঙ্গে সেনাবাহিনী আরও তৎপর এবং কঠোর হচ্ছে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে। জেলা প্রশাসন এবং পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ জানান একথা। গতকাল মাঠেও তা ছিল দৃশ্যমান। সড়ক, মোড়, রাস্তাঘাটে কিংবা অলি-গলি ঘুঁপচিতে অহেতুক ঘোরাঘুরি না করতে দেখলে এদের ধাওয়া এবং নগরীতে মাইকিংও করা হয়। সরকার, স্বাস্থ্য বিভাগ, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগণ আগেই সতর্ক করেন, তিন-চার কারণে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলটি মারাত্মক ছোঁয়াচে ‘করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বৈশ্বিক মহামারী ব্যাধি সংক্রমণের ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা এটি প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল, সমুদ্রপথে বিদেশি ও দেশি জাহাজের নাবিকদের শহরে আসা-যাওয়া, অনেকগুলো প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি নাগরিকের বিচরণস্থল চট্টগ্রাম। মিয়ানমার ও ভারতের সাথে লাগোয়া স্থল ও নৌ-সীমান্ত। আছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে কর্মরত বিদেশি সংস্থা, এনজিও প্রতিনিধিরা।

প্রবীণ অর্থনীতিবিদ চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ হোসেন ক্ষোভ-খেদের সঙ্গে একটি পোস্ট পাঠান: “হোম কোয়ারেন্টাাইন, আইসোলেশন. লকডাউন, শাটডাউন, সামাজিক দূরত্ব, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা- এই সব উচ্চমার্গের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত এ দেশের মানুষেরা কখনোই বুঝতে চাইবে না। এদের সাফ বলতে হবে- কারফিউ, ১৪৪ ধারা, বাহির হইলেই মাইর”। বললেন, ‘প্রশাসন আরও কঠোর হলে আমরাও বাঁচি’।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকাবাসী এরইমধ্যে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন, পুলিশসহ গোটা প্রশাসনের ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে চোখ ফাঁকি দিয়ে এখানে সেখানে বাসাবাড়ি, মেসবাড়িতে বসে তাস-জুয়ার আড্ডায় লিপ্ত হচ্ছে সমাজবিরোধী লোকজন। তারা দেশের লকডাউন শাটডাউন যেন উপভোগ করছে। চলছে ঝুঁকিপূর্ণ জটলা বা আসর। নগরীর হালিশহর, চকবাজার, বন্দরটিলা, ইপিজেড, পতেঙ্গা, বাকলিয়া, বহদ্দারহাট, বায়জিদ, খুলশী, আমবাগানসহ বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের আড্ডা-জুয়ার আসর বসে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

এদিকে বাইরে ঘোরাঘুরি না করতে প্রশাসনের সাথে সেনাবাহিনীর মাইকিং অব্যাহত রয়েছে চট্টগ্রামের সর্বত্র। তারা ৪/৫ জনের জটলা দেখলেই তাড়া করছেন। বাড়িঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তাছাড়া ইতোমধ্যে যারা বিদেশ থেকে এসে হোম কোয়ারেন্টাইন আদেশ মানেননি এবং ঘুরেছেন যথেচ্ছ তাদের খোঁজা হচ্ছে। মার্চ মাসের শুরু থেকে বিদেশ প্রত্যাগত প্রবাসী চট্টগ্রামের লোকজন এবং বিদেশিদের হোম কোয়ারেন্টাইন আদেশ লঙ্ঘনের বিষয়টি কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। কারা কোথায় কী করছে, আদৌ হোম কোয়ান্টোইন ১৪ দিন পালন করছেন কিনা এসব দিক পর্যালোচনা করছে মাঠ প্রশাসন।


সংক্রমণরোধে প্রশাসন সেনাবাহিনীর কড়াকড়ি
নিরীহ মানুষ চান শান্তি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন