করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারাদেশে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে টানা ১০ দিনের ছুটি। সবাইকে নিজ ঘরে অবস্থান করতে সরকার এই ছুটি ঘোষণা করেছে। ছুটিতে ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারি-বেসরকারি কর্মজীবীরা এখন ঘরে অবস্থান করছেন। পাশাপাশি সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখতে কাজের বুয়াদেরও ছুটি দিয়েছেন। এর ফলে কর্মজীবী মহিলারা এখন নিজেরাই তাদের ঘরের কাজ করছেন। রান্না-বান্না থেকে শুরু করে ঘর মোছা, কাপড় ধোয়া এসব কাজ এখন নিজ হাতে করছেন।
প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করতে সব কর্মজীবী মহিলা অত্যন্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ হাতে ঘরের কাজ করছেন। শুধু তাই নয়, ঘরের সব কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখতে সব সময় তৎপর আছেন। জীবাণুনাশক স্প্রে করছেন প্রতিটি রুমের কোণে কোণে। এ ছাড়া যাদের ঘরে ছোট ছেলে মেয়ে আছে তারা তাদের অতিরিক্ত যত্ন নিচ্ছেন। তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামা-কাপড় পরতে দিচ্ছেন। খাবার-দাবারের ব্যাপারে রয়েছেন অনেক সতর্ক। অনেকে বাচ্চাদের লেবুর শরবত, বা লেবু-মধু হালকা গরম পানিতে খেতে দিচ্ছেন। যাদের বাসায় বয়স্ক লোক আছেন তাদেরও বিশেষ যত্ন নিচ্ছেন। লেবুর শরবতসহ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি দিচ্ছেন। ঠান্ডাজনিক সর্দি-কাশি যাতে না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখছেন। অর্থাৎ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে তারা এক সতর্ক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাজধানীর সিদ্ধেশরীতে বসবাস করেন মোবাশ্বেরা ইসলাম। তিনি ভিকারুন নেছা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। তার স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। তাদের সংসারে এক ছেলে এক মেয়ে, আর আছেন বৃদ্ধ শাশুড়ি। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই চাকরি করেন বলে সংসারের কাজ করার জন্য ছিল এক বুয়া। করোনাভাইরাসের কারণে এবার কাজের বুয়াকে ছুটি দিয়েছেন। ঘরের যাবতীয় কাজ এখন তিনি নিজেই করছেন। সংসারের কাজ করতে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার পরিবারের সদস্যদের সুুুুস্থ রাখতে যে কাজ করছি এটাতো অবশ্যই আমার কাছে আনন্দের এবং তৃপ্তির। এ কাজে আমার কোন ক্লান্তি নেই। পত্র-পত্রিকায় এবং টিভিতে প্রচার হচ্ছে করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কি কি করতে হবে। তাই আমাদের প্রত্যেকের এব্যাপারে সচেতন থেকে কাজ করতে হবে। সবাইকে ঘরে থাকতে হবে। ঘরে থাকাই এখন সবচেয়ে নিরাপদ। আর শধ ঘরে থাকলেই চলবে না। ঘরকে রাখতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, জীবাণুমুক্ত।
এছাড়া খাবার-দাবারের ব্যাপারে এখন থাকতে হবে সচেতন। বেশি তেলাক্ত খাবার, যেমন- পোলা, বিরিয়ানি এবং ভাঁজা পোড়া জাতীয় খাবার এখন এড়িয়ে চলতে হবে। শাক-সবজি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। প্রাণঘাতী এই অদৃশ্য শত্রুর আক্রমণ থেকে পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করার কাজ করছি। এ কাজ করতে অবশ্যই ভালো লাগছে। তিনি আরও বলেন, সংসারের এই কাজ শুধু আমি একা করছি না। এ কাজে এখন আমার সাহেব সহযোগিতা করছেন। যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে তিনি আমায় সহযোগিতা করছেন। বাচ্চাদের কাপড় ধুয়ে দিচ্ছেন। ঘরের প্রতিটি রুমে জীবাণুনাশক স্প্রে করছেন। সব মিলিয়ে ঘরে আমরা বেশ ভালই আছি।
রাজধানীর মালিবাগ শান্তিবাগে থাকেন সলতানা ইয়াসমিন শেলী। তিনি মালিবাগ আবুুজর গিফারি কলেজের শিক্ষক। তার স্বামী একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। তাদের দুই মেয়ে। তিনি তার কাজের বুয়াকে ছুটি দিয়েছেন। এ অধ্যাপিকা বলেন, কাজের বয়াদের ছুুটি দেয়াটা জরুরি। কারণ তারা এ বাসা ও বাসায় কাজ করে।
রাস্তায় ঘোরা ফেরা করে। ওরা তো জীবাণুবহন করে নিয়ে আসতে পারে। তাই ওদেরকে আমি অনেক আগেই ছুটি দিয়েছি। এখন বাসার সব কাজ আমি নিজেই করছি। এ কাজে অন্যরকম এক আনন্দ এক তৃপ্তি আছে। পরিবারের সুরক্ষার জন্য যে কাজ চাইতে ভালোলাগার আর কিছু হতে পারে না। এখন ঘরে থাকাটা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাটাই সবচেয়ে নিরাপদ। তবে পরিষ্কার থাকার জন্য যে হ্যান্ড সানিটাইজার সামগ্রী এসব এখনো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য যে হ্যাক্সিসল তা কোনো দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন