চিরচেনা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এখন যেন স্থানীয়দের কাছেই অচেনা। জনমানবহীন এমন সমুদ্র সৈকত গত বিশ বছরে স্থানীয়রা দেখেনি। জনমানবহীন সৈকতের পূর্ব-পশ্চিমে বালিয়ারী ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ছে না।
করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে পর্যটকদের ভ্রমণে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা জারি করার কারণে পর্যটক শূন্য হয়ে গেছে কুয়াকাটা। দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের বেলাভ‚মে দুই চারজন স্থানীয় মানুষ ছাড়া কোন পর্যটকের পদচারনা নেই। নেই স্থানীয় মানুষেরও কোলাহল। পর্যটনমুখী ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন। ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীণ হয়েছে হোটেল মোটেল, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ কুয়াকাটায় অবস্থানরত ট্যুর অপারেটররা। বেকার হয়ে পড়েছে পর্যটনমুখী স্বল্প আয়ের মানুষগুলো।
সন্ধ্যার পরে কুয়াকাটা সৈকতে নামলে গা ছম ছম করে। নেই আলোকসজ্জা। করোনা প্রতিরোধে সরকারের সর্বোচ্চ সতর্কতার কারণে কুয়াকাটায় এমন দৃশ্য বিরাজ করছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামায় পর্যটন নির্ভর হাজার হাজার ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ হতাশা ব্যক্ত করেছেন। দীর্ঘ সৈকতজুড়ে এখন বিরাজ করছে শুনশান নিরবতা। কোথাও নেই কোলাহল।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের নির্দেশে কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকদের চলাচল নিষিদ্ধ করেছে কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আবাসিক হোটেল মোটেলসহ সকল বিনোদন কেন্দ্রগুলো। আগত পর্যটকদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয় সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে। একই সঙ্গে সৈকতের সকল দোকানপাট সরিয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকেই পর্যটক শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। হোটেল-মোটেলসহ খাবার রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে কুয়াকাটা সমুদ্র উপক‚লের জেলেরাও পড়েছে বিপাকে। সমুদ্রে মাছধরা নিষিদ্ধ না থাকলেও ক্রেতা সঙ্কটের কারণে মাছের দাম কমে গেছে। বাজারজাত করতে পারছেন না আড়তদাররা। যার কারণে কোন সরকারি নির্দেশনা ছাড়াই অধিকাংশ জেলেরা সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ রেখেছে। বেকার হয়ে পড়েছে এর সাথে জড়িত শত শত শ্রমিক এবং জেলেরা।
আবাসিক হোটেল সৈকতের মালিক জিয়াউর রহমান শেখ বলেন, উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনার পর আমাদের হোটেল বন্ধ রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বেশিরভাগ হোটেলের কর্মচারীদের ছুটি দেয়া হয়েছে।
কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, করোনাভাইরাসের কারণে পর্যটনমুখী ব্যবসায়ীরা শত কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ট্যুরিস্ট গাইড, পর্যটন নির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ট্যুর অপারেটররা সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পরই আবাসিক হোটেল বন্ধ করে দিয়েছি। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কোনো পর্যটককে কুয়াকাটায় আবাসিক সুবিধা না দেয়ার বিষয়েও জেলা প্রশাসনের নির্দেশ রয়েছে। এমন নির্দেশের বিষয়টি আমরা কুয়াকাটার শতাধিক আবাসিক হোটেলের মালিকদের চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন