প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে উদ্বুদ্ধ এবং সংগঠিত করার জন্য বিভাগ ওয়ারী ভিডিও কনফারেন্স করছেন। সংক্ষিপ্ততম সময়ে জনগণের একটি অংশের কাছে পৌঁছানোর একটি শক্তিশালী মাধ্যম হলো এই ভিডিও কনফারেন্স বা টেলিকনফারেন্স। প্রধানমন্ত্রীর উচ্চ আসন থেকে জনগণের কাছে পৌঁছতে গেলে জনসভা করতে হয় এবং শ্রেণী-পেশার মানুষদের সাথে বৈঠক করতে হয়। সরকার প্রধান হিসেবে এগুলো করা সময় সাপেক্ষের ব্যাপার। অথচ যে নৃশংস ঘটনা ঘটে গেলো তার প্রতিরোধে জনগণকে প্রশাসনিক পদক্ষেপের সাথে সম্পৃক্ত করতে গেলে যে সময়ের প্রয়োজন সেই সময় এমন জরুরী পরিস্থিতিতে ব্যয় করা সম্ভব নয়। তাই ভিডিও বা টেলি কনফারেন্সের পথ বেছে নেয়ায় সরকার বাস্তবতার পরিচয় দিয়েছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী থেকে বলা হচ্ছে যে, শুধুমাত্র শক্তি প্রয়োগ করে সন্ত্রাস মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এতোদিন পর্যন্ত পুলিশ, র্যাব, বিজিবি’র ওপর সরকার নির্ভর করেছে। গত অক্টোবর থেকে ৩০ জুনের পূর্ব পর্যন্ত অনেকগুলো গুপ্তহত্যা বা টার্গেটেড কিলিং ঘটেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তা রোধে কিছু করতে পারেনি। সরকার বাঞ্ছিত ফল লাভ করতে পারেনি। ৩০ জুন কালো রাত্রি এবং ১লা জুলাইয়ের প্রথম সকালে নারকীয় গণহত্যা তার প্রমাণ। জঙ্গিদেরকে দমন করার জন্য সারারাত অপেক্ষা করতে হয়েছে। সিলেট ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিমানযোগে কমান্ডো বাহিনীকে ঢাকা আনা হয়েছে। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার আকাশে টহল দিয়েছে। নেভির পেট্রোল বোট ঐ এলাকার সংলগ্ন লেকে প্রতিরোধ সৃষ্টি করেছে। সাঁজোয়া বাহিনীর সাঁজোয়া যান আর্টিজান রেস্তোরাঁ ঘিরে রেখেছে। এভাবে আক্রমণের পূর্ব প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পদাতিক বাহিনী এবং কমান্ডোরা রেস্তোরাঁর অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে এবং মাত্র তের মিনিটের মধ্যে তাদের অপারেশন সম্পন্ন করেছে।
যাই হোক, বেটার লেট দেন নেভার। বিলম্বে হলেও সরকার জেগে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে। গুলশানে যে বীভৎস রক্তপাত ঘটে গেল সেটিকে ওয়েক আপ কল, অর্থাৎ জেগে ওঠার ডাক হিসেবে বিবেচনা করা যায়। গত মঙ্গল ও বুধবার প্রধানমন্ত্রী টেলি কনফারেন্সে দেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপন করেন এবং জঙ্গি দমনের উদ্দীপনামূলক বাস্তবমুখী ভাষণ দেন। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলার অংশ হিসেবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ৩২ জেলার সরকারী কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মিলিত হন। এই কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। পরদিন অর্থাৎ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে তার উদ্যোগের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরসহ পনেরটি জেলার সরকারী কর্মকর্তা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মী, এনজিও কর্মী, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষকদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে মিলিত হন। এই কনফারেন্সে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার উপস্থিত ছিলেন।
এই টেলি কনফারেন্সের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এই যে, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী থেকে মানুষ এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। ফলে তাদের মধ্যে মেলামেশা ও মতবিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই সম্মেলনে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের অনেকে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করার সুযোগ পান এবং প্রধানমন্ত্রীও তাদের সেসব প্রশ্নের জবাব দেন। ফলে প্রধানমন্ত্রী এবং এসব মানুষের মধ্যে একটি মিথষ্ক্রিয়ার (ইন্টার্যাকশন) সুযোগ সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী জনসংযোগের ক্ষেত্রে এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তথ্য-প্রযুক্তির এই বিস্ময়কর উন্নতির যুগে জনগণের সাথে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় টেলি কনফারেন্স একটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। এই টেলি কনফারেন্সে যোগ দেয়ার জন্য যাদেরকে ডাকা হচ্ছে অথবা যাদেরকে নির্বাচিত করা হচ্ছে তারা যেন অবশ্যই দল বিশেষের বা মত বিশেষের সাজানো লোক না হয়। যাদেরকে ডাকা হচ্ছে তারা যদি নিরপেক্ষ হয় এবং মুক্ত চিন্তার মানুষ হয় এবং তাদেরকে যদি নির্ভয়ে প্রশ্ন করার অধিকার দেয়া হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রী দেশ সম্পর্কে এবং জনগণের মনোভাব সম্পর্কে একটি সঠিক চিত্র পাবেন। সেই সঠিক চিত্রের ভিত্তিতে তিনি দেশ পরিচালনায় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন। যদি তারা পক্ষপাত দুষ্ট না হয় তাহলে সরকার ও জনগণের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে যে বিভ্রান্তি বিরাজ করে সেই বিভ্রান্তিও দূর হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। যারা দেশ ও সমাজের মঙ্গল চান তারা আশা করেন যে, প্রধানমন্ত্রীর এই টেলি কনফারেন্স যেন বর্তমান সংকটের পরেই শেষ হয়ে না যায়। এটি একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া হিসেবে চালু হোক, সেটি জনগণের প্রত্যাশা। কারণ, এর ফলে জনগণেরও মঙ্গল হবে আবার সরকারও উপকৃত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন