শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রয়োজনে লাঠিচার্জ করতে হবে

চলছে চায়ের দোকানে আড্ডা : সামাজিক দূরত্ব মানাতে পুলিশেরও অনীহা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০০ এএম

মঙ্গলবার বেলা ১২টা ৪০ মিনিট। যাত্রাবাড়ির দনিয়া বর্ণমালা স্কুল রোডে আড্ডায় ব্যস্ত যুবকরা। দোকানে দোকানে আড্ডা। গোয়ালবাড়ি মোড়ে চায়ের দোকানে আড্ডা। এমন সময় কদমতলী থানার তিনটি গাড়ি এলো। দ্বিতীয় গাড়িতে ওসি জামাল উদ্দিন মীরও আছেন। গাড়ি হাকিয়ে সোজা চলে গেলেন। কাউকে কিছুই বললেন না। স্থানীয়দের অভিযোগ, গোয়ালবাড়ি মোড় থেকে বর্ণমালা স্কুল পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে দিনে-রাতে শত শত মানুষ ভিড় করে। বখাটেরা বিকালে আড্ডা দেয়। পুলিশ সেগুলো দেখেও না দেখার ভান করে। দুপুরে যাত্রাবাড়ি পাইকারী বাজারের কাছে টিসিবির মালামাল নিতে শতাধিক মানুষের ভিড় দেখা গেল। অথচ খানিক দুরেই দাঁড়িয়ে পুলিশ। সচেতন মানুষের মতে, পুলিশ কঠোর না হলেএসব ঝুঁকিপূর্ণ জনসমাগম ও আড্ডা কোনোভাবেই রোধ করা যাবে না। প্রয়োজনে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হবে। তা না হলে দিন যতো বাড়ছে, মানুষের নিয়ম না মানার প্রবণতাও ততোই বাড়ছে।

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষে-মানুষে ‘সামাজিক দূরত্ব’ (নূন্যতম তিন ফুট দূরত্ব) বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও হাট-বাজারে সেই ‘সামাজিক দূরত্ব’ অনেকেই মানছেন না। হাট-বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রায়ই একে অন্যের গা- ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছেন। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার রক্ষা করছে না। বিশেষ করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাড়া মহল্লায় চায়ের দোকানগুলোতে আড্ডার ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা। নিয়ম না মানা ও সচেতনতার অভাব প্রসঙ্গে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, কোভিড-১৯ প্রতিরোধের যে কয়েকটি ধাপ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ধাপ হলো-সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে ৬০ ভাগেরও বেশি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

সিঙ্গাপুরের একটি ঘটনায় দেখা যায়, সেখানে চার্চে ১৭ জনের একটি গ্রুপ কাজ করতো। গত জানুয়ারিতে তাদের একজন ডিনার অনুষ্ঠানে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। কিন্তু আক্রান্তের বিষয়টি তিনি বুঝতে পারেননি। পরের দিন স্বাভাবিক অবস্থায় চার্চের কাজে আসেন এবং অন্যদিনের মতোই কাজকর্ম করেন। কিন্তু তার হাঁচি, কাশি, লিফটের বাটন, মাইক্রোফোন স্পর্শ, অন্যদের সাথে হ্যান্ডশেক করার মাধ্যমে এক’ দুইজন করে ১৭ জনই খুব দ্রুতই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন। কারণ তারা ওই দিন মিটিং করেছেন, মিটিং শেষে একে অপরের সাথে হ্যান্ডশেক করেছেন, একই মাইক্রোফোন ব্যবহার, লিফটের বাটনে স্পর্শ করা, আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি, কাশি দিয়েছেন। এরপর পুরো চার্চই শাটডাউন করে দেয়া হয়।

সুস্থ্য হওয়ার পর একজন বলেন, ওইদিনগুলোতে প্রথমে মনে হতো আমি মৃত্যুবরণ করবো। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে বুঝিয়েছি, আমি মরবো না। মানসিকভাবে শক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছি। এর ফলে নিজের মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছে যে, আমি সুস্থ্য হয়ে যাবো এবং সুস্থ্য হয়েছি। মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়াটা অনেক কাজে দিয়েছে।
করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়ার পর তারা এখন রক্তদান করছেন। তাদের রক্ত নিয়ে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। এটা সম্ভব হয়েছে তাদের মনোবল ও সচেতনার কারণে।

সাধারণ ছুটির ষষ্ঠ দিনে গতকাল মঙ্গলবার অন্যান্য দিনের চেয়ে রাজধানীর চিত্র ছিল ভিন্ন। মূল সড়কগুলোতে লোকজনের আনাগোনা কম থাকলেও অলিগলিতে ভিড় বেড়েছে। খুলতে শুরু করেছে বেশির ভাগ চায়ের দোকান ও অন্য ছোটখাটো দোকান। কাঁচাবাজারেও মানুষের ভিড় বেড়েছে। কাজের সন্ধানে বেরিয়েছে নিম্ন আয়ের লোকজন। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও আগের পাঁচ দিনের চেয়ে রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি ও ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক ও রিকশার ভিড় ছিল বেশি। তবে বিপণিবিতানসহ বড় বড় সব দোকানই বন্ধ ছিল। আর ঢাকা থেকে অনেক লোকজন গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়ায় সেখানকার হাট-বাজারগুলো এখন বেশ জমজমাট।

গতকাল পুরান ঢাকার মীরহাজিরবাগ, সুত্রাপুর, জুরাইন, কাপ্তানবাজার, গুলিস্তান, আনন্দবাজার, মতিঝিল, কমলাপুর, গোপীবাগ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মূল সড়কে কিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলছে। রিকশার আধিক্যও ছিল। কিছু ব্যক্তিগত যানবাহনও চলেছে। রাস্তায় বের হওয়া মানুষজন কেউ বলেছেন তারা বাজার করতে, কেউ ব্যাংকে টাকা তুলতে, কেউ ওষুধ কিনতে বা কেউ প্রয়োজনীয় অন্য কিছু কিনতে বের হয়েছেন। কিন্তু একসঙ্গে একাধিক লোকজন চললেও তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছিল না। গল্প করতে করতে হাঁটতেও দেখা যায় অনেককে। অলি-গলিতে চায়ের দোকানে অনেকে আড্ডাও দিচ্ছিল। কাপ্তানবাজারে চায়ের দোকানে একসাথে বহু মানুষকে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। দনিয়া এলাকার একজন শিক্ষক জানান, বিকালের পর এলাকার অলি-গলিতে বখাটে যুবকদের আড্ডা দেয়। এ নিয়ে পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই। তিনি বলেন, এদের অবিভাবকরাও সচেতন নয়। তা না হলে এই দুর্যোগে এরা ঘর থেকে বের হয় কি করে?

জাতীয় রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে, দেশে সীমিত আকারে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে। এমতবস্থায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে না চললে করোনাভাইরাস আরও বেশিসংখ্যক মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে।
তবে কিছু কিছু এলাকায় ব্যতিক্রমও দেখা যাচ্ছে। গুলশান বিভাগের সহকারী কমিশনার (অ্যাডমিন) সৈয়দ মামুন মোস্তফা জানান, পর্যায়ক্রমে গুলশান এলাকার বিভিন্ন স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সুবিধার্থে বৃত্ত অঙ্কন করে দেওয়া হয়েছে। এর সুবাদে নিজে সুরক্ষিত থাকার পাশাপাশি অন্যকেও নিরাপদে রাখা যাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন