মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রবাসীরাই চার বিপদ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০২ এএম

প্রবাসী এবং ঝুঁকি। এ দুইয়ে একাকার হয়ে প্রকট সমস্যা-সঙ্কট তৈরি করেছে। তা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা। স্বাস্থ্য বিভাগসহ গোটা প্রশাসন বিচলিত। ব্যস্ততার তোড়জোড় চলছে বিলম্বে এসে উপায় খুঁজতে গিয়ে। বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম, কুমিল্লা বেল্ট মিলে চট্টগ্রাম বিভাগটি দেশের একক বৃহৎ প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল। আর এখানেই বিপত্তি ও বিপদের ঝুঁকিটা।

বর্তমানে করোনাভাইরাস মহামারী সংক্রমণের উচ্চমাত্রায় ঝুঁকিতে রয়েছে চট্টগ্রাম। কেননা বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির মাঝেই অনেক প্রবাসী ফিরে আসেন চট্টগ্রাম বিভাগে। যাদের সংখ্যা প্রচুর হলেও সঠিক হিসাব-নিকাশ নেই। ইতালিসহ ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম দুই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পাড়ি দিয়েই আসেন প্রবাসীরা। আর এই বিদেশফেরত অধিকাংশই ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন ফাঁকি বা লঙ্ঘন করেন। তাছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চলে অনেকগুলো প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশি নাগরিকরা ফিরেন এ সময়েই। যারা হোম কোয়ারেন্টাইন না মেনে অবাধে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
আরেক দৃশ্য প্রবাসীদের নিয়েই ঘরে ঘরে চাপাকান্না, হাহাকারের। কেননা চট্টগ্রাম বিভাগের অসংখ্য প্রবাসী আমেরিকা, ইউরোপ, ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্য ও করোনায় আক্রান্ত বিশে^র অনেক দেশেই আটকে পড়েছেন। ইতোমধ্যে করোনায় মারা গেছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। আবার সংক্রমিত দেশগুলো বিমান চলাচল বিচ্ছিন্ন করার কারণে নিজ দেশেই আটকে আছেন কয়েক লাখ প্রবাসী। তারা এখন বিভিন্ন দেশে কাজকর্ম, ব্যবসা ও আয়-রোজগার হারানোর উপক্রম। অনশ্চিত অন্ধকার চোখে বসে আছেন ঘর-বাড়িতে। এ অবস্থায় প্রবাসীদের নিয়েই চার বিপদ জগদ্ধল পাথরের মতো চেপে আছে।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে সর্বাপেক্ষা প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হচ্ছে বন্দর-পতেঙ্গা-হালিশহর-আগ্রাবাদ। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক চিটাগাং চেম্বার সভাপতি এম এ লতিফের ব্যক্তিগত অর্থায়নে গতকাল পর্যন্ত উক্ত এলাকায় ৫টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খোলা হয়েছে। এ উদ্যোগই বলে দিচ্ছে এ অঞ্চলে করোনায় ঝুঁকির ও জনমনে উদ্বেগের মাত্রা কতটা তীব্র। তাছাড়া এসব (বন্দর-পতেঙ্গা) এলাকায় প্রধান সমুদ্রবন্দর, দেশের বড় দুটি ইপিজেড, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ অনেকগুলো প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠানে বিদেশিরা কর্মরত। তারাও ঝুঁকির সম্ভাব্য বড় উৎস।

স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গত ১ মার্চ থেকে চট্টগ্রামে বিদেশফেরত প্রবাসীর সংখ্যা ৩৯ হাজার ২৮৮ জন। তবে নাম-ঠিকানা চিহ্নিত করা হয় সাড়ে ৯শ’ জনের। যারা হোম কোয়ারেন্টাইন মেনেছেন। অথচ আরও প্রায় সাড়ে ৩৮ হাজার জনের হদিসই এখন নেই। বিদেশফেরত প্রবাসীদের ৯৭ শতাংশই হিসাবের বাইরে তথা হোম কোয়ারেন্টাইন এড়িয়েই আছেন। তাদের পেছনে হন্যে হয়ে খুঁজছে গোটা প্রশাসন এবং এমপি, মেয়র, কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিগণ। মিলছে না ওদের।

এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে গতকাল কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেছেন, ব্যাপক আকারে বিদেশফেরত প্রবাসীরা হোম কোয়ারেন্টাইন ফাঁকি বা লঙ্ঘন করাটাই এখন বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ মুহূর্তে সর্বত্র দৈবচয়নের ভিত্তিতে ব্যাপক আকারে করোনা টেস্ট বা পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু হওয়া জরুরি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা পর্যায়ে টেস্টের ব্যবস্থা শুরু করার জন্য গতকাল যে নির্দেশনা প্রদান করেন বিশেষজ্ঞগণ তা খুব ভালো পদক্ষেপ হিসেবেই স্বাগত জানান। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী করোনাভাইরাস টেস্ট সম্প্রসারণের তাগিদ দিয়ে সাবেক স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এম এ ফয়েজ বলেন, এরজন্য ইউনিয়ন, গ্রাম স্তরে বিদ্যমান তৃণমূলের স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি হেলথক্লিনিকসহ আমাদের অবকাঠামো সুবিধাগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে। এর পাশাপাশি তৃণমূল চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্রæত প্রশিক্ষণের উদ্যোগও প্রয়োজন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Nazmul Huda ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪২ এএম says : 0
সরকার যদি উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ স্বাস্থ কেন্দ্রের অবকাঠামো কাজে লাগিয়ে তৃণমূল ডাক্তার ও নার্সদের কম সময়ের মধ্যে করোনা নিরাময় প্রশিক্ষণ দেয়া যায় তাহলেই কেবল মহামারী করোনা বিস্তার প্রতিরোধ করা সহজ হবে
Total Reply(0)
Abul Kahar ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
বিনা যুদ্ধে গোটা বিশ্বের মানুষ আজ গৃহবন্দী। একেই বলে আল্লাহর রাজত্ব বা ক্ষমতা।এই মানুষই বলে,জনগন নাকি সকল ক্ষমতার উৎস! এতই ক্ষমতা তাইতো অদৃশ্য এক ভাইরাস ঠেকাতে পারছে না গোটা বিশ্বের মানুষ। হায়রে ক্ষমতা!
Total Reply(0)
আফিয়া তাসলিম ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৫ এএম says : 0
উন্নত বিশ্বের দেশগুলোই যখন করোনা ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে টালমাটাল অবস্থা সেখানে আমাদের মতো দেশের অবস্থা যে কি হবে সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। সৃষ্টিকর্তা যেন আমাদের সকলকেই হেফাজত করেন।
Total Reply(0)
Lutfar Rahman Khan Rasel ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৫ এএম says : 0
বাঙালিদের সচেতন করা সত্বেও এখনো অনেক জায়গায় সচেতনতার মনোভাব দেখা যাচ্ছে না। এরা কি কি ভাবে সচেতন হবে, একমাত্র আল্লাহ্-ই তা জানে।
Total Reply(0)
Abdur Rajjak ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৫ এএম says : 0
হে আল্লাহ আমরা আপনার আইন মানি না সেটা ঠিক আছে। তবুও আমাদের দেশ মসজিদের নগর বলাহয় সেই ওসিলাই আমাদের দেশকে তোমার জামিনী গজব থেজে রক্ষার করেন।
Total Reply(0)
Khokon Ibrahim ৩ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪৬ এএম says : 0
এই রোগ ছোঁয়াছুঁয়ি নয় রে পাগল, এর কার্যক্ষমতাই এমন! সংক্রমণের জন্য তার আসলেই কোনো মাধ্যমের প্রযোজন পড়ে না! তার আক্রমণের গতি এমনি! মানুষ যেমন বিচিত্র, করোনাও তেমন বিচিত্র! তাই একজন নিগ্রো দিয়ে একজন বাঙালীকে তুলনা করা যেমন ভূল, করোনার ব্যাপারটাও ঠিক তাই!
Total Reply(0)
H.m. Delwar ৩ এপ্রিল, ২০২০, ৭:৫০ এএম says : 0
প্রবাসীদের প্রতি নজর দিতে হবে। তাদের কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। হে মহান আল্লাহ্ এই আজাব থেকে মানব জাতিকে বাঁচাও। আমিন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন