রোববার, ২৬ মে ২০২৪, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পাড়া মহল্লায় আড্ডা চলছেই

রাজধানীর প্রধান সড়ক ফাঁকা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০০ এএম

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ ছুটি দিয়ে সরকার ঘরে থাকার নির্দেশ দিলেও অনেকেই তা কর্ণপাত করছে না। সামাজিক দূরত্ব মানছে না। বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছে। জেল-জরিমানা করেও নির্দেশনা মানতে বাধ্য করা যাচ্ছে না। রাজধানীসহ সারাদেশেই পাড়া-মহল্লায় চায়ের দোকানে চলছে আড্ডাবাজি। কোন কারণ ছাড়াই ঘর থেকে বেরিয়ে মানুষ আড্ডায় মেতে উঠছে। অথচ ঘরের বাহির না হতে এবং একত্রে আড্ডা দিতে বা ঘোরাফেরা না করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বারবার আহ্বান জানাচ্ছে। 

গতকাল সোমবার সকাল থেকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, জুরাইন, মুরাদপুর, মীরহাজিরবাগ, তাঁতীবাজার, গুলিস্তান, ফুলবাড়ীয়া, পলাশী, জিগাতলা, ধানমন্ডি ১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ড, শঙ্কর, মোহাম্মদপুর এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
এই সকল এলাকার প্রধান সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোরভাবে অবস্থান নেওয়ার ফলে প্রধান সড়কে হাতে গোনা কিছু যানবাহন চোখে পড়েছে। তারপরেও পুলিশের চেকপোস্টে যানবাহনগুলোর চালককে জবাবদিহি করতে হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি এলাকার ভিতরের রাস্তায় বা মহল্লার রাস্তায় ছিল ভিন্নচিত্র। সকাল থেকেই পাড়া মহল্লায় প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মানুষকে রাস্তায় আড্ডা দিতে দেখা গেছে।
ধানমন্ডি ১৫ নম্বর স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় দেখা গেছে, তিন চারজন মিলে কথা বলছেন দাঁড়িয়ে। তারা করোনাভাইরাস নিয়ে কথা বলছেন কিন্তু নিজেরা সতর্ক হচ্ছেন না। ওই এলাকার মুদি দোকানদার মোহাম্মদ জাহিদ হোসেনের বলেন, আমি সকাল থেকে দোকানে থাকি। দোকানের সামনে দিয়ে অনেকেই আসা যাওয়া করেন। অনেকে কিছু কেনাকাটা করতে আসেন আবার অনেকে হাঁটাহাঁটি করতে বের হয় রাস্তায়। আবার অনেককে অযথা গল্প করতেও দেখা যায়। পথচারী বিল্লাল হোসেনে বলেন, সারাক্ষণ বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগে না। গত কয়েকদিন ধরে ঘরবন্দি রয়েছি। আজ একটু বের হলাম বাইরের কী অবস্থা সেটা দেখার জন্য। করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে সরকার সবাইকে বাসায় থাকতে বলেছেন। তারপরেও কেন বের হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে আমাদের সবার উচিত বাসায় থাকা। কিন্তু এটাওতো বুঝতে হবে একটা মানুষ কতক্ষণ বাসায় থাকতে পারে। তবে বাসার বাইরে বের হলে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস পরে বের হতে হবে। আমিও তাই করেছি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে গতকাল পর্যন্ত একদিনের জন্যও আড্ডা বন্ধ হয়নি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার দনিয়া গোয়ালবাড়ী মোড় এলাকায়। ওই এলাকার বাসিন্দারা শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছেন বিকালের পর প্রতিদিন গোয়ালবাড়ী মোড়ের চা ও পুরির দোকান খোলে। সেখানে শত শত যুবক এসে আড্ডা জমায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীদের আড্ডাস্থল অনামিকা গ্রীন টাওয়ারের সামনে। সেখানে বেশ কয়েকটি ফাস্টফুডের দোকানে চলে আড্ডা। জানতে চাইলে ওয়ারী জোনের উপ-কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, আসলে মানুষকে কোনোভাবে মানানো যাচ্ছে না। তিনি আড্ডার কথা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
ধানমন্ডি আবাহনী মাঠসংলগ্ন দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য মোহাম্মদ হান্নান বলেন, আমরা এই এলাকায় খুব কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করছি। কেউ যদি প্রয়োজন ছাড়া বের হয় তাহলে তাৎক্ষণিক তাকে বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। তিনি বলেন, মানুষ আসলে অনেক চালাক। আমরা প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়েছি বলে মহল্লার রাস্তায় বের হয়ে ঘোরাঘুরি করে। আবার আমরা যখন মহল্লার রাস্তায় টহল দিতে যাই তখন আমাদের দেখে সবাই বাসায় ঢুকে যায়। আমরা চলে গেলে আবার বের হয়। এমন করলে কীভাবে সবাই নিরাপদে থাকবে।
মুরাদপুর এলাকার এক বাসিন্দা জানান, মুরাদপুর এলাকায় কেউই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম মানে না। এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও এই নিয়ম মানেন না। দলের নেতাকর্মী নিয়ে জমিয়ে আড্ডা দেন। কদমতলী থানাধীন পাটেরবাগ, বউবাজার, মিষ্টির দোকান, নোয়াখালী পট্টি, নূরপুর, ওয়াসা রোড, আলমবাগ এলাকায় গেলে মনেই হবে না দেশে কোনো নিষেধাজ্ঞা চলছে। কদমতলী থানা পুলিশ এ বিষয়ে খুবই উদাসীন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সরকারি নির্দেশনা সত্তে¡ও অহেতুক, অকারণে বাইরে বের হওয়ায় রাজধানীতে ২৫ জনকে ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সোমবার রাজধানীর ফার্মগেটে সকাল থেকে দুপুর অবধি অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাওয়ার আলম। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর পদক্ষেপ হিসেবে সামাজিক দূরত্ব বজায় এবং স্বেচ্ছায় নিজেকে আলাদা রাখা অর্থাৎ সেলফ আইসোলেশনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। মানুষকে মোটিভেটেড করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক তৎপর রয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষ নিয়ম ভাঙছেন। আর দেশজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন। তাই সরকার নির্দেশিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে, জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা মোকাবিলা এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি হ্রাসকরণের লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর ফার্মগেইটে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সারওয়ার আলম বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী, ওষুধপত্র কিনতে কিংবা হাসপাতাল গমনে বের হয়েছেন অথবা জরুরি কাজে বের হয়েছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে অহেতুক ঘর থেকে যারা বেরিয়েছেন, আড্ডা দিতে কিংবা গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছেন এমন ২৫ জনকে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইনে ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনেককে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
রাস্তায় কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, বাইরে বের হওয়া মানুষগুলো প্রশ্নের মুখে পড়ে অনেকেই বলছে, তারা গুরুত্বপূর্ণ কাজে বের হয়েছেন। মূলত ঝামেলা এড়াতেই তারা এ ধরনের মিথ্যাচার করছে। কড়াকড়ি আরোপ এবং অনুরোধের পরও পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকানগুলোতে যুবক-বৃদ্ধ এমনকি স্কুলছাত্রদের আড্ডা দিতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে করোনা নিয়ে সচেতনতার কিছুই নেই। শুধু চায়ের দোকানে নয়, রাস্তার মোড়, অলি-গলি, বাড়ির ছাদ ও সিঁড়িতে জটলা পাকিয়ে আড্ডা দিতে দেখা যায় লোকজনকে। সেনা ও পুলিশের গাড়ি দেখলে লোকজন দ্রুত সটকে পড়ে। দোকানিরাও তালা দিয়ে সটকে পড়ে। পরে আবার দোকান খোলে।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ahmed hossain khan ৭ এপ্রিল, ২০২০, ৮:২৯ এএম says : 0
chaer dukan, farniturere, salun, ai tinti dukan amar barir samoni oi kan a adda legai ache adda bajra kichui mante chaina, amar mone kori prtit mosjider maik dara proti din koyakber gushona deoajete pare(kidia bujai tore sokhi somoy valona) je sommanito nagorik brindo ghore takun, proiujon chara dukan, baza hat, basa bari, otoba jakuno jaegay duijon adda dibenna durotto bojay kekhe ghore takhun,
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন