অর্থনৈতিক রিপোর্টার : করদাতাদের সুবিধার্থে আয়কর রিটার্ন ফরম আরও সহজ করা হয়েছে। আগে একজন করদাতাকে রিটার্ন জমা দিতে কমপক্ষে আট পৃষ্ঠার ফরম পূরণ করতে হতো।
এখন তিন পৃষ্ঠায় সব তথ্য দিয়ে ফরম জমা দেওয়া যাবে। প্রথম পাতায় করদাতার ব্যক্তিগত তথ্য, দ্বিতীয় পাতায় আয়ের উৎস ও কর নিরূপণ এবং শেষ পৃষ্ঠায় যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রান্তিক তথা সাধারণ করদাতার হয়রানি লাঘবে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে তাদের।
অবশ্য যাদের বার্ষিক আয় ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত, কেবল তারাই এ সুবিধা পাবেন। বিশ লাখ টাকার বেশি আয় হলে রিটার্নের সঙ্গে আলাদা সম্পদ বিবরণীর ফরম জমা দিতে হবে। এনবিআর বলেছে, এ বছর পুরনো এবং নতুন উভয় ফরম জমা নেওয়া হবে। তবে আগামী বছর থেকে পুরনো ফরমে আর রিটার্ন জমা নেওয়া হবে না।
এনবিআরের এক কর্মকর্তারা জানান, জটিলতা এড়াতে এবং করদাতারা যাতে সহজেই রিটার্ন ফরম নিজেই পূরণ করে জমা দিতে পারেন, সেজন্য এবারের বাজেট (২০১৬-১৭) ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর রিটার্ন ফরম আরও সহজ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘মেশিন রিডেবল ফরম্যাট’ অনুসরণ করে আয়কর ফরম নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে।
এ ধরনের ফরম স্ক্যান করে করদাতার যাবতীয় তথ্য ডাটা ব্যাংকে সংরক্ষণ করা যায়। এ ব্যবস্থা নিশ্চিত হলে করদাতার যে কোনো তথ্য যে কোনো সময় সহজেই পাওয়া যাবে।
আগে ৩০ সেপ্টেম্বর ছিল ব্যক্তিশ্রেণি আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। নতুন অর্থবছরের বাজেটে তা পরিবর্তন করে নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ নভেম্বর। তবে ৩০ নভেম্বরের পরে আর রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে না। কারণ এবারের বাজেটে আইনি কাঠামো দ্বারা সময় বৃদ্ধির সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। এনবিআর চাইলেও আগের মতো নির্বাহী আদেশ দিয়ে বারবার সময় বাড়াতে পারবে না।
সূত্র জানায়, নতুন নিয়মে সাধারণ এবং বেশি আয় দুই ক্যাটাগরিতে ফরম পূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিন পৃষ্ঠার ফরম তৈরি করা হয়েছে নির্ধারিত আয় তথা সাধারণ করদাতাদের জন্য। অন্যদিকে নির্ধারিত আয়ের পাশাপাশি অন্য কোনো উৎস তথা বাড়ি-ফ্ল্যাট, জমি (হাউস প্রোপার্টি) ব্যবসাসহ বা অন্য কোনো উৎস থেকে আয় থাকলে সেই বাড়তি আয়ের তথ্য দিতে হবে। এ জন্য আলাদা ফরম পূরণ করে করদাতাকে মূল রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে। এনবি আর সূত্র বলেছে, যার যত বেশি আয় রয়েছে, সে অনুযায়ী তাকে বেশি কর পরিশোধ করতে হবে। এ জন্য আলাদা ফরম পূরণ করতে হবে। তবে প্রান্তিক করদাতাদের জন্য তিন পৃষ্ঠার ফরম পূরণ করতে হবে।
জানা যায়, যাদের বেশি আয় আছে, তাদের এর উৎস জানাতে হবে। এ জন্য তথ্যও বেশি দিতে হবে। এটি আন্তর্জাতিক রীতি এবং পৃথিবীর অনেক দেশেই এই নীতি অনুসরণ করে ফরম জমা দেওয়ার বিধান আছে। আন্তর্জাতিক রীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশেও আয়কর রিটার্ন ফরম তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে ১২ লাখ করদাতার মধ্যে ৮৫ ভাগই সাধারণ করদাতা। নতুন অর্থবছরে আরও ৩ লাখ করদাতা শনাক্তের পরিকল্পনা নিয়েছে এনবি আর।
বর্তমান আইনে বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা বাদ দিয়ে বার্ষিক আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত। এর বেশি আয় হলে প্রযোজ্য হারে কর দিতে হয়। তবে বয়স্ক নাগরিক, প্রতিবন্ধীদের বেলায় করমুক্ত আয়সীমা বছরে তিন লাখ টাকা। আগের ফরমে এসব তথ্য উল্লেখ ছিল না। এ ছাড়া সম্পদশালীদের অতিরিক্ত হারে সারচার্জ প্রদানের বিষয়টিও আগের ফরমে উল্লেখ ছিল না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন