খুলনা ব্যুরো : খুলনা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কের অধিকাংশই বেহাল। দীর্ঘদিনেও এসব সড়ক মেরামত না করায় গর্ত আর খানাখন্দে দেখলে বোঝাই যায় না; এটা বিভাগীয় শহর খুলনা। বর্ষার পানিবদ্ধতায় সড়কগুলোতে পানি জমে অবস্থা আরো খারাপ। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এসব সড়কে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। নাকাল খুলনাবাসীর সড়ক যোগাযোগের দুরাবস্থার চিত্র ফুটে উঠছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও।
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্র জানায়, মহানগরীতে ৬৪০ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এক হাজার ২১৫টি সড়ক রয়েছে। এরমধ্যে মহানগরীর রাস্তা ও ফুটপাত স¤প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৯৭টি, সড়ক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২৮৮টি এবং অন্যান্য প্রকল্পের আওতায় আরো অর্ধশত সড়ক সংস্কার করা হয়েছিল। মহানগরীর অনেক সড়ক আছে যেগুলো সংস্কার করা যায়নি। বৃষ্টিতে ভাঙাচোরা এসব সড়কের অবস্থা বর্তমানে শোচনীয় আকার ধারণ করেছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খুলনার সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় ১৭টি সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৭১ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। এরমধ্যে যশোর-খুলনা সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৩ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার, খুলনা বাইপাস সড়কের দৈর্ঘ্য ২৬ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার, খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৩ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার, ফুলতলা-শাহাপুর-মিকশিমিল-ডুমুরিয়া সড়কের দৈর্ঘ্য ২৮ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার, খুলনা-রূপসা-ফকিরহাট-বাগেরহাট (খুলনার অংশ) সড়কের দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার, খুলনা-রূপসা-শ্রীফলতলা-তেরখাদা সড়কের দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক শূন্য ৭ কিলোমিটার, দৌলতপুর-শাহাপুর-শোলগাতিয়া-চুকনগর (সেতু এপ্রোচ) সড়কের দৈর্ঘ্য দশমিক ৭৫ কিলোমিটার, বেতগ্রাম-তালা-পাইকগাছা-কয়রা সড়কের দৈর্ঘ্য ৬৩ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার, তেরখাদা-মোলারহাট সড়কের দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার, দাকোপ-বারোআড়িয়া-মাগুরখালি-তালা সড়কের দৈর্ঘ্য ২২ কিলোমিটার, কেশবপুর-বেতগ্রাম (খুলনার অংশ) সড়কের দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার, কেশবপুর-বেতগ্রাম সড়কের দৈঘ্য ৫ কিলোমিটার, কয়রা-নয়াবেকী-শ্যামনগর সড়কের দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার, রূপসা-ফকিরহাট সড়কের দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার এবং সাতক্ষীরা-আশাশুনি গোয়ালডাঙ্গা-পাইকগাছা সড়কের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, খুলনার গলামারী-বটিয়াঘাট-দাকোপ-নলিয়ান সড়কের ৫৪ দশমিক শূন্য ৩ কিলোমিটার ও নগরঘাটা-দিঘলিয়া-আড়–য়া-গাজিরহাট-তেরখাদায় ২৯ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, এবারের টানা ভারীবর্ষণ ও পানিবদ্ধতার কবলে পড়ে খুলনার এসব সড়কের বেশিরভাগ স্থানে অসংখ্য বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে রাস্তা ব্যবহৃত বিটুমিন খসে পড়ে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা ও বেতগ্রাম-তালা-পাইকগাছা-কয়রা সড়ক। কিন্তু এসব ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সংস্কারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এখনও কোন কার্যকরী আর দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেয়নি। আর এ অবস্থায় ভাঙাচোরা সড়কগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হাজারো যানবাহন চলাচল করেছে। ফলে প্রায়ই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটছে।
খুলনা সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আলিউল হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো সংস্কারের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় অর্থ চেয়ে পাঁচবার চাহিদা দেখিয়ে পত্র দেয়া হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা সড়কের জন্য ১৮ কোটি ও বেতগ্রাম-তালা-পাইকগাছা-কয়রা সড়ক মেরামতের জন্য ১০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। দ্রæত এই দু’টি সড়ক সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে। বাকী সড়ক গুলো মোটামুটি চলাচলের উপযোগী আছে। অর্থ পেলে সেগুলোও ধারাবাহিকভাবে সংস্কার করা হবে।
খুলনা মহানগরীতে সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর অন্যতম ব্যস্ততম পয়েন্ট শিববাড়ী মোড়ের গোলচত্বরের পশ্চিমপাশে বড় গর্ত। এছাড়া ইস্ট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সামনের সড়কের বিপরীতে, নূরনগর থেকে মন্নুজান স্কুলের সংযোগ সড়ক, নেভি স্কুলের সামনের আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল রোড, সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল হতে নতুন রাস্তা মোড়ের বাইপাসটির খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে বয়রা পর্যন্ত ও গল্লামারীতে রাস্তাজুড়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। বৃষ্টিতে গর্ত বড় হচ্ছে। ফুল মার্কেটের মোড়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে গাড়ির চাকা পড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। ঈদের আগেও এবার মহানগরীতে কোন সড়কের সংস্কার কাজ করা হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী-৩ মো. মশিউজ্জামান খান বলেন, কেডিএ এভিনিউ সংস্কারের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। বৃষ্টি কমলেই কাজ শুরু হবে। এছাড়া ফারাজিপাড়া মোড়টি সংস্কারের জন্য টেন্ডার করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন