করোনা সঙ্কটকালে অঘোষিত লকডাউনে কোলাহলমুক্ত কক্সবাজার সাগর উপক‚লে কয়েকদিন আগে ডলফিনের নৃত্য উপভোগ করেছে বিশ্ববাসী। কিন্তু সপ্তাহ যেতে না যেতেই কক্সবাজার উপকূলে একের পর এক মারা পড়ছে সাগরের সৌন্দর্য খ্যাত নিরীহ ডলফিন। গত শনি ও রোববার পর পর দুইটি মৃত ডলফিন ভেসে আসে শাপলাপুর ও ইনানী সৈকতে। ভেসে আসা মৃত এসব ডলফিনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ডলফিনগুলোকে সাগর দস্যুরা পিটিয়ে মেরেছে। অথবা জেলেদের জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে এসব ডলফিন। গত শনিবারে প্রথম শাপলাপুর সৈকতে ভেসে আসে একটি মৃত ডলফিন। রোববারে ইনানী সৈকতে আরো একটি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে। রোববার সকালে ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপের সামনের সৈকতে মৃত ডলফিনটিকে দেখতে পান একজন এনজিও কর্মী। প্রথমে ভেসে আসা মৃত ডলফিনটির লেজে রশি বাঁধা ছিল। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে সেটি কোন জেলের জালে আটকা পড়েছিল। এরপর জেলেরা এটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে।
এদিকে খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার নাজিম উদ্দিন, বিট কর্মকর্তা মেকলেস চাকমা ঘটনাস্থলে গিয়ে ডলফিনটি খুঁজে পাননি বলে জানান। নাজিম উদ্দিন জানান, ডলফিনটি হয়তো জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে থাকতে পারে।
এর আগে গত শনিবার টেকনাফের শাপলাপুর সৈকতে আরো একটি মৃত ডলফিন ভেসে আসে। এ প্রসঙ্গে টেকনাফ রেঞ্জের বন কর্মকর্তা মনজুর আলম জানান, তিনি টেকনাফ পশুসম্পদ কর্মকর্তাসহ সেখানে গিয়ে ওই ডলফিনের শরীরের বিভিন্ন অংশ পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন এবং ডলফিনটি মাটিতে পুঁতে ফেলার ব্যবস্থা করেছেন।
পরপর দুইটি ডলফিন মারা যাওয়ার বিষয়টি এখন উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে। ডলফিন হত্যার পেছনে সঠিক কারণ জানা না গেলেও জেলেদের জালে আটকা পড়ে এগুলো মারা গেছে বলে তার ধারণা।
তবে এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, একটি দুর্বৃত্ত দল ব্যবসায়িক স্বার্থে সাগরে নৃত্য করা ওই ডলফিনগুলোকে ধরে তারা নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে আসতে চেয়েছিল। আর এ লক্ষ্যে জালে বা ফাঁদে আটকাতে গিয়ে একের পর এক ডলফিনের মৃত্যু হয়। একটি বড় হোটেলের মালিকপক্ষের সাথে চুক্তি করে তাদের সুইমিংপুলে আটকানোর জন্য ওই দুর্বৃত্তের দল এই গর্হিত কাজটি করেছে বলেও সূত্রটি জানায়।
এদিকে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের সৌন্দর্য রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে সৈকতের সৌন্দর্য ফেরাতে লাল কাকড়া, কচ্ছপ, ডলফিন, সাগর লতাসহ জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
এ লক্ষ্যে এক সমন্বয় সভা গত সোমবার কউক সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ। তিনি বলেন, কক্সবাজারের জীব বৈচিত্র্য বিশেষ করে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের লাল কাকড়া, কচ্ছপ, ডলফিন, সাগরলতা রক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় হতে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন এবং কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ সমন্বয় সভা আয়োজন করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন