আবহাওয়া অনুকূল হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের লবণ খাতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখাদিয়েছে। অনেকটা বেকার সময় কাটাচ্ছে ৪৪ হাজার লবণ চাষী। উৎপাদিত লবণের দামও নেই। খোলা মাঠে পড়ে আছে রক্ত-ঘামে মিশ্রিত 'সাদা সোনা' নামের লাখ লাখ মে. টন লবণ সম্পদ। আর দালাল ফঁড়িয়াদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে প্রান্তিক চাষীরা। নামমাত্র দামে লবণ বিক্রি করেও মাসের পর মাস ঘুরতে হয় টাকা নিতে। সব মিলিয়ে বর্তমান চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে লবণ শিল্প। ক্ষতির মুখে পড়েছে লবণ সংশ্লিষ্ট তিন লাখ পরিবার। এই ক্ষতি পোষাতে প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজ থেকে লবণ খাতে ৫ শত কোটি টাকার প্রনোদনা দেয়ার দাবী
জানিয়েছে বিসিক।
বাংলাদেশে স্বনির্ভর পন্য লবণ শুধুমাত্র কক্সবাজার জেলা ও চট্টগ্রামের বাশঁখালী উপজেলার উপকূলীয় অঞ্চলে উৎপাদন হয়। যা দিয়ে সারা দেশের লবণের চাহিদা পুরণ করা হয়। বর্তমানে লবণ উৎপাদনের ভরা মৌসুম। আবহাওয়া লবণ উৎপাদনে সর্ম্পূণ অনুকূলে। গত ৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার লবণ চাষী ১০লাখ ৩৫ হাজার মেঃটন লবণ উৎপাদন করেছে। যা গত মৌসুমের এসময়ের চেয়ে ০.৬০ লক্ষ মেঃটন বেশী। আবহাওয়ার এ অবস্থা বিরাজ করলে এবারও লবণের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কিন্তু বিশ্বজুড়ে আঘাত করা করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে লবণ খাত। দেশের বিভিন্ন শিল্প খাতের ন্যায় লবণশিল্প খাতও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন। পরিস্থিতির কারণে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মত লবণ চাষীরাও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ঘরে বন্দী। কিন্তু মাঠে লবণ রেখে তা সঠিক ভাবে পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসরণ করার ফলে যানবাহন না চলায় বিভিন্ন গুদি/লবণ ক্রয়-বিক্রয় স্পটে লবণ ক্রেতা না আসতে পারায় ঠিকমত লবণ বিক্রয়ও সম্ভব হচ্ছেনা। উৎপাদিত (গত ৩ এপ্রিল পর্যন্ত) প্রায় ৮ লক্ষ মেঃটন লবণ অবিক্রিত অবস্থায় অরক্ষিত পড়ে আছে। যে কোন সময় কোন বড় ধরণের বৃষ্টিপাত বা ঘূর্ণিঝড় হলে মজুদকৃত লবণ নষ্টও হয়ে যেতে পারে
এ শঙ্কায় ভোগছেন তারা।
মাঠ পর্যায়ে খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রতিমন লবণ উৎপাদন খরচ পড়ছে ২৪৫ টাকা। আর প্রতিমন বর্তমান বাজার মুল্য ১৫১ টাকা। সঙ্কটে পড়ে চাষীরা প্রতিমন লবণ প্রায় এক শত টাকা কমে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
বর্তমানে মাঠে লবণ উৎপাদনে জড়িত রয়েছে ৪৪ হাজারের বেশি চাষি পরিবার। নভেম্বর থেকে মে মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ছয় মাস লবণ উৎপাদন মৌসুম।
এ প্রসঙ্গে লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয় (বিসিক) কক্সবাজারের উপ-মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজ-১ এর আওয়াতায় ৩০ হাজার কোটি টাকা থেকে ক্ষুদ্র লবণ চাষীদের এই বিশাল ক্ষতির হাত হতে রক্ষা করার জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটেল হিসেবে উৎপাদিত লবণ সরক্ষণ করার জন্য আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এই ক্ষুদ্র লবণ চাষীদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলে এই ক্ষতির কারণে চাষীগ লবণ উৎপাদনে নিরুসাৎহিত হবে। এতে বিকল্প বিহিন দেশীয় ভোগ্য পণ্য আমদাণী নিভর হয়ে যাবে। তখন এই পণ্যের বাজার সাধারণ মানুষের হাতের নাগলে ধরে রাখা সম্ভব হবে না।
তিনি লবণ চাষীদের উৎপাদিত লবণে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকার। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজ থেকে প্রণোদনা প্রদান করে দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করার জন্য ৫ শত কোটি টাকার প্রনোদনা দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
চলতি মৌসুমে লবণ চাষ হয়েছে ৫৭ হাজার ৭২২ একর জমিতে। গত বছর থেকে দাম না পাওয়ায় এ বছর বেশ কিছু জমিতে লবণচাষ হচ্ছে না। শিল্পাঞ্চলের কারনেও কিছু জমি কমেছে। এ বছর লবণের চাহিদা নিরুপন করা হয়েছে ১৮.৪৯ লক্ষ মে. টন। আর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮.৫০ মে. টন। বিসিক সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে ১৬ দশমিক ৫৭ লাখ মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে লবণের উৎপাদন ছিল ১৮ দশমিক ২৪ লাখ মেট্রিক টন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন