শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

করোনাযুদ্ধে জিততে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ান

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০২ এএম

করোনা ঠেকাতে লড়াই চলছে বিশ্বজুড়ে। এ লড়াইয়ে দিন-রাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। করোনাভাইরাস রোধের ভ্যাকসিন আবিষ্কারে বেশ এগিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা। চীনও চালাচ্ছে নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা। যুক্তরাষ্ট্রেও চলছে ভ্যাকসিন তৈরির গবেষণা।

আশা করা হচ্ছে, অচিরেই আবিষ্কার করা সম্ভব হবে করোনাভাইরাস ঠেকানোর ভ্যাকসিন। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণুর কাছে মানুষের অসহায়ত্বের অবসান ঘটবে। করোনাভাইরাসে কেউ আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা করতে লাগে দীর্ঘ সময়। এ দীর্ঘসূত্রতা করোনার বিস্তারে মদদ জোগাচ্ছে। আশার খবর এসেছে জার্মানি থেকে। সে দেশের রবার্ট বোচ জিএমবিএইচ কোম্পানি করোনাভাইরাস পরীক্ষার নতুন কিট আবিষ্কার করেছে। নতুন কিটের মাধ্যমে দুই দিনে নয়, মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যে রোগীর শরীরে করোনার উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া যাবে। বিভিন্ন হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি ও মেডিকেলে তাদের তৈরি কিটের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়েছে। বোচের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য ভাইরাল রোগের পাশাপাশি করোনা শনাক্ত করতে সক্ষম এ কিট। আগামী মাসেই জার্মানিতে এ কিট বাজারজাত করা হবে। তবে বিশ্ববাজারে তা পাওয়া যাবে আরও পরে। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর অন্যতম চাবিকাঠি হলো, এর সংক্রমণ শনাক্তকরণ। দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানিতে করোনাভাইরাসে সংক্রমিতদের দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হওয়ায় এখন পর্যন্ত দেশ দুটিতে মানুষের মৃত্যুহার কম। অন্যদিকে ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের গতি ধীর হওয়ায় এ দুই দেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট আবিষ্কার করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। সরকার এ কিট উৎপাদনের অনুমতিও দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এপ্রিলেই তা বাজারজাত হবে। এ কিটের সাহায্যে দুই দিন নয়, মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে স্বল্প খরচে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে চিহ্নিত করা যাবে। করোনা চিহ্নিত করার কিট ও ভ্যাকসিন আবিষ্কার এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ে মানুষের জয়কে নিশ্চিত করবে। মানুষের অসহায় অবস্থার অবসান ঘটাবে।

করোনাভাইরাস শ্রমজীবী ও গরিব-দুঃখী মানুষকে অসহায় অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে। এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশবাসীকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। মানুষ নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে এ নির্দেশনা মেনে চলছে। স্বভাবতই এর ফলে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে জনজীবন। সমাজের গরিব-দুঃখী-অভাবী মানুষের জন্য এ সংকটময় মুহূর্তে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাদের সহায়তায় সরকার নানা কর্মসূচি নিলেও তা লাখ লাখ মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। সরকারি উদ্যোগের বাইরে বিপন্ন জনগোষ্ঠির পাশে সমাজের সম্পন্ন মানুষ ও সামাজিক সংগঠনগুলোর দাঁড়ানোর বিষয়টি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে মহাদুর্যোগের এই সময়ে। করোনাভাইরাসের কারণে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী, গরিব ও দুঃখী মানুষের পাশে সাধ্যানুযায়ী সবাইকে দাঁড়াতে আহ্বান জানানো হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে। এসব সময়োপযোগী আহ্বানে মানবতার সেবায় সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এখন রাজনীতি কিংবা পারস্পরিক দোষারোপের সময় নয়। প্রাণঘাতী করোনা মোকাবিলা করাই এখন সবার অবশ্য-পালনীয় কর্তব্য। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে উদারতার যে মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা এগিয়ে নিতে সব ধর্ম-বর্ণ-পেশার মানুষ একসঙ্গে দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াবে- এমন প্রত্যাশাই স্পষ্ট করা হয়েছে সংগঠনগুলোর আহ্বানে। বলা হয়েছে, যাদের আর্থিক সংগতি আছে, তারা সাময়িকভাবে দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারছে এবং পারবে। কিন্তু যারা শ্রমজীবী মানুষ, যাদের প্রতিদিনের আয়ের ওপর নিজ পরিবারের খাবার জোগাড় করতে হয়, তাদের সামনে এখন খুবই দুঃসময়। যারা অবস্থাপন্ন তারা যদি নিজস্ব খরচে এলাকাভিত্তিক কয়েক বেলা বা কয়েক দিনের জন্য চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্য খাবার সরবরাহ করতে পারেন, তাহলে শ্রমজীবী, গরিব-দুঃখী মানুষের পেটে খাবার জুটবে। দিনমজুর গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য বিভিন্ন সংগঠনের আহ্বান আশাজাগানিয়া ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আমরা আশা করব, দলমত নির্বিশেষে যাদের সামর্থ্য আছে তারা জাতীয় দুর্যোগের এই মুহূর্তে ক্ষুধাকাতর মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। বাড়িয়ে দেবেন সহায়তার হাত। মানুষ মানুষের জন্য- এ উপলব্ধি মূর্তমান করতে এগিয়ে আসবেন সবাই।

লেখক: সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন