শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ?

প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের একমাস

বিবিসি বাংলা | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার একমাস হচ্ছে গতকাল বুধবার (৮ এপ্রিল)। মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৬৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৩৩ জন। মঙ্গলবারই ৪১ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত করার তথ্য জানানো হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মুন্সী বলেন, ভারত বা ব্রাজিলের সঙ্গে যদি তুলনা করি, তখন কিন্তু দেখা গেছে এরকম একটা পর্যায়ে এসে তাদের রোগীর সংখ্যা বহু হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আমাদেরও হয়তো কিছুদিনের মধ্যে সেরকম একটা চিত্র দেখতে হবে।

তিনি বলেন, পরীক্ষা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সেটাই এখনও প্রকৃত চিত্র কি-না বলা যাবে না। কারণ আমরা পরীক্ষা কেন্দ্র সবেমাত্র বাড়িয়েছি। এই যে ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে, তাতে পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়লে হয়তো আসল চিত্রটা বোঝা যাবে। রোগটি প্রতিরোধ করতে হলে লকডাউনের ওপর সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এটা যত ভালোভাবে আমরা সেটা করতে পারবো, ততো স্বাস্থ্য খাতের ওপর চাপ কম পড়বে। সেজন্য ত্রাণ, আইনশৃঙ্খলা, মানুষের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটা কেন্দ্রীয় সমন্বয় ব্যবস্থা থাকা দরকার।

ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক বেনজীর আহমেদ বলছেন, যেভাবে সবকিছু হওয়া উচিত ছিল, সেটা হয়নি। কোয়ারেন্টিনের কথাই যদি বলেন, বিদেশ থেকে যারা এসেছেন, তাদের কোয়ারেন্টিন ঠিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। এমনকি অনেকের নাম ঠিকানাও ঠিকভাবে সংরক্ষণ করা যায়নি। প্রথমেই আমরা সেই সুযোগটা মিস করেছি। টেস্ট করার সক্ষমতা থাকার পরও এতোদিন পরে টেস্ট বাড়ানো হয়েছে। প্রথম থেকে যদি সেটা করা হতো, তাহলে পরিস্থিতি আরো ভালোভাবে ধরা যেতো, ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হতো। কিন্তু সেটাও ঠিক সময়ে করা হয়নি।
যাদের শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের কন্টাক্ট ট্রেসিংও ঠিকভাবে হয়নি। তিনি কোথায় কোথায় গিয়েছেন, কাদের সঙ্গে মিশেছেন, কি করেছেন, সব বিশ্লেষণ করা উচিত ছিল। তাহলে ঝুঁকি অনেক কমতো। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি- সবাইকে নিয়ে সমন্বিতভাবে সেটা করা উচিত ছিল। তিনি বলেন, যারা শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের ঠিকভাবে চিকিৎসা করা, সংক্রমিতদের সীমাবদ্ধ করে রাখার বিষয়টি জরুরি। যারা হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন, নমুনা সংগ্রহ করছেন, তাদের প্রশিক্ষণ সুরক্ষার ব্যাপারগুলো নিশ্চিত করা জরুরি। না হলে হাসপাতালগুলো বা চিকিৎসকরা সংক্রমিত হতে শুরু করলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য অনেক হুমকি তৈরি করবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, প্রথম থেকেই রোগটি ব্যবস্থাপনায় একটা সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে। শুধু একটা জায়গায় টেস্ট সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে, অনেক দেরি করে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। মনে হয়েছে যেন রোগীর সংখ্যা কমিয়ে রাখার একটা চেষ্টা করা হয়েছে। এখনও এক্ষেত্রে একটা সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এখন যে রোগী শনাক্ত হচ্ছে, তারা কোথায় যাবে, কীভাবে যাবে, তা নিয়ে সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে। রোগীর সংখ্যা যতো বাড়বে, ততো এই পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে তার আশঙ্কা।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, রোগ শনাক্তকরণ পরীক্ষা আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিটি উপজেলা থেকে অন্তত দুইটি করে স্যাম্পল পরীক্ষা করে দেখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ঘোষণার পর থেকেই পরীক্ষার সংখ্যা বাড়তে থাকে, সেই সঙ্গে রোগী শনাক্ত হারও বাড়ে।

৪ এপ্রিল স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে আর নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে নয়জন। মীরজাদী সেব্রিনা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নয়জনসহ মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০ জনে। নতুন আক্রান্তের আটজন ঢাকার। আর একজন ঢাকা বাইরের। সেব্রিনা বলেন, আক্রান্তদের ৯ জনের পাঁচজনের আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। তারা ইতিমধ্যে সংক্রমণ আছে, এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন বা পরিবারের সদস্য। দুজন বিদেশ থেকে এসেছিলেন। আর বাকি দুজনের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরদিন পাঁচই এপ্রিল জানানো নয়, নতুন করে করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত করা হয়েছে ১৮জন। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ৩৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে তাদের শনাক্ত করা হয়।

৬ এপ্রিল নতুন করে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫জনে। ২৪ ঘণ্টায় মারা যান আরও তিনজন। সাতই এপ্রিল স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, দেশটিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন ৪১জন। আর মারা গেছেন পাঁচজন। একদিনে মৃত্যু বা রোগী শনাক্তের ক্ষেত্রে এটাই সর্বোচ্চ। ২৪ ঘণ্টায় ৪৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশে রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৬৪ জন আর ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই ঢাকার বাসিন্দা বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন