মানব দেহের পরিপাকতন্ত্রের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদ্রান্ত্র। বৃহদান্ত্রের সিকামের নিচে সংযুক্ত আঙ্গুল আকারের একমুখী থলের মতো অংশটিই হলো অ্যাপেনডিক্স। রোগ প্রতিরোধে এর ভূমিকা আছে বলে ধারণা করা হয়।
কেন হয় :
অ্যাপেনডিক্স অঙ্গটি জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত হলে ফাঁপা থলের মতো অংশটি ফুলে গিয়ে পেটে ব্যথার সৃষ্টি করে। আবার ফিকুলিথ বা শক্ত মলের টুকরা, কোন কৃমি বা খাদ্য বস্তুর সাথে গিলে ফেলা হাড়ের কুচি বা হজম না হওয়া খাদ্যের অংশ কোনভাবে যদি এপেনডিক্সের ভেতরে ঢুকে যায় এবং এপেনডিক্সের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তখন পেটে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি হয়। এ সময় যে রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায় তাকে বলা হয় এপেনডিসাইটিস। তবে মনে রাখবেন পেটে তীব্র ব্যথা হলেই ভয় পেয়ে যাবেন না যে, আপনি এপেনডিসাইটিসে আক্রান্ত। নানা কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে। আর এপেনডিসাইটিসের ব্যথার আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা প্রাথমিকভাবে বুঝা যায়।
রোগের লক্ষণ :
হঠাৎ পেটের নাভীর চারদিকে তীব্র ব্যথা শুরু হয়। এ ব্যথা নাভীর উপরি ভাগে বা নিচ পেটের ডানদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এমন হতে পারে যে, ব্যথাটা মাঝে মধ্যে হবে, তারপর চলে যাবে। তারপর সব সময় থাকবে এবং ধীরে ধীরে তলপেটের বামদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। * ব্যথার সাথে ২/৩ বার বমিও হতে পারে। * ৫/৬ ঘণ্টা পরে ব্যথা পেটের ডান পার্শ্বে নিচের দিকে সীমাবদ্ধ থাকে। * অল্প অল্প জ্বর হয় এবং রোগী ঘামতে থাকে। * রোগীর পেটের নাভীর ডানদিকে নিচের দিকে চাপ দিলে ব্যথা বেড়ে যায়। * রোগী ভয়ে পেটে হাত ছুতে দেয় না। হাচি কাশি দিয়ে নাভীর ডান পাশে ব্যথা হয়। * কোষ্ঠকাঠিন্য এবং কিছুক্ষেত্রে ডায়রিয়া হতে পারে।
রোগীর ইতিহাস ও লক্ষণগুলো দেখে ৯০ ভাগই এ রোগ সনাক্ত করা যায়। তবে এমন লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের নিকট যেতে হবে। চিকিৎসকই আপনার রোগীর রোগ সনাক্ত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। এক্ষেত্রে রক্ত, প্রস্রাব, এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম (মেয়েদের ক্ষেত্রে), এপেনডিসাইটিসের রোগ নিশ্চিত হওয়া যায়। মনে রাখনে এপেনডিসাইটিস নিশ্চিত হওয়ার সাথে সাথে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এপেনডিক্সের মারাত্মক সংক্রমণ হলে ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তা ফেটে যেতে পারে। তখন মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এমন কি জীবননাশের কারণও হতে পারে। তাই দ্রুত অপারেশন করে এপেনডিক্স কেটে ফেলে দেওয়াই সঠিক চিকিৎসা বলে টিকিৎসকরা বলেছেন। বর্তমান সময়ে পেট না কেটে ছোট যন্ত্র ল্যাপ্রোস্কোপ দিয়ে ছিদ্র বা ফুটো করে এটি বের করে ফেলা যায়। বিশেষজ্ঞ সার্জন কাজটি করে থাকেন। এতে ২/৩ দিন হাসপাতলে থাকলেই ভালো হয়ে বাড়ি ফেরা যায়। এরোগ দেখা মাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া একান্ত জরুরি। এ রোগ সম্পর্কে সতর্ক হোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন, সুস্থ্য জীবন গঠন করুন।
ষ মো. জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক, কলাম ও স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন