সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, করোনাকারণে সরকারি ছুটি বা সামাজিক দূরত্বের ফলে দেশে ৭২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে অথবা তাদের কাজ কমে গেছে। ৮ শতাংশ মানুষের কাজ থাকলেও এখনো বেতন পায়নি। কৃষিকাজে সম্পৃক্তদের (৬৫%) তুলনায় অ-কৃষি খাতের দিনমজুর বেশি (৭৭%) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫১ শতাংশ রিকশাচালক, ৫৮ শতাংশ কারখানা শ্রমিক, ৬২ শতাংশ দিনমজুর, ৬৬ শতাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ কর্মী জানায়, চলতি মাসে তাদের আয় নেমে এসেছে শূন্যের কোটায়। দেশব্যাপী কাজ হারানো এবং খাদ্য সংকটে পড়া এসব মানুষের কাছে অতি শিগগির খাদ্য পৌঁছাতে হবে, নয়তো তাদের ঘরে রাখা সম্ভব হবে না। জীবিকা অর্জনে তারা বাইরে বের হতে বাধ্য হবে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীরও নজর এড়ায়নি, সেটি বোঝা যায় গত ৬ এপ্রিল দেওয়া তাঁর বক্তব্য থেকে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৫ জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, সরকারি সেফটিনেটের বাইরে থাকা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া হবে। তিনি এ বিষয়ে তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, যাদেরকে আমরা সামাজিক নিরাপত্তায় সাহায্য দিচ্ছি তার বাইরে যারা আছে, যারা হাত পাততে পারবে না তাদের তালিকা করে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া হবে। এই কাজটা আপনারা করবেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের হাতে খাদ্যমজুদের তো একটা সীমাবদ্ধতা আছে, তাই চাইলেই করোনাকারণে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়া সকল মানুষের জন্য কতদিন খাবার পৌঁছে দেয়া যাবে? তাছাড়া শুধু খাদ্য দিলেই তো হবে না। সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন যথেষ্ট পরিমাণ কাঁচা সবজি, ফলমূল, দুধ, ডিম, মাছ, গোশত ইত্যাদি। এসব তো আর মজুদ করে রাখা নেই বা মজুদ রাখা সম্ভবও না।
প্রয়োজন হলে যে দেশের বাইরে থেকে খাদ্য আমদানি করা হবে, সেটাও সম্ভব না। কারণ করোনাভাইরাস সারা পৃথিবীতেই আক্রমণ করেছে। ফলে খাদ্য সংকট সবখানেই কমবেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই এখন মানুষ অর্ধাহারে বা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। অনেক স্থানেই পকেটে টাকা নিয়ে মানুষ ঘুরছে কিন্তু প্রয়োজনীয় খাবার পাচ্ছে না। দিন যত যাবে এ সংকট ততই বাড়বে। এ অবস্থায় নিজ দেশের মানুষকে অভুক্ত রেখে কেউ অন্যদেশে রফতানি করবে না। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, যেসব দেশ আগে খাদ্য রফতানি করত তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে তা স্থগিত করেছে। করোনাভাইরাস সংকটের কারণে খাদ্যশস্য রফতানির গন্তব্য সীমিত করে দিয়েছে রোমানিয়া। জরুরি অবস্থা চলাকালে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাইরে খাদ্য রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদনকারী দেশগুলো যে নিজেদেরই খাদ্যশস্য সরবরাহের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত, রোমানিয়ার এ সিদ্ধান্ত তারই ইঙ্গিতবাহী। অন্যদিকে দেশে দেশে খাদ্যশস্য নিয়ে ভোক্তাদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে আতঙ্কজনিত অস্বাভাবিক ক্রয়প্রবণতা। বন্দরগুলোতেও কার্যক্রম প্রায় স্থবির। এ অবস্থায় রফতানি নিষিদ্ধের মাধ্যমে অতীতে বৈশ্বিক খাদ্যশস্য সরবরাহ ব্যবস্থায় যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল, তা-ই অনেক বড় ও বিস্তৃত আকারে দেখা দেয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভিয়েতনামও বর্তমানে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কায় চাল রফতানিতে নতুন সরবরাহ চুক্তিগুলোর ওপর সাময়িক স্থগিতাদেশ আরোপ করেছে। চালের আরেক বৃহৎ রফতানিকারক দেশ ভারতও এখন পণ্যটি রফতানি স্থগিত রেখেছে। অন্যতম বৃহৎ গম রফতানিকারক দেশ কাজাখস্তান বর্তমানে পণ্যটি রফতানি সীমিত করে আনার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে দেশটি পেঁয়াজ, চিনি, সূর্যমুখী তেলের মতো পণ্য রফতানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাখে। গত মাসে বিশ্বের বৃহত্তম গম রফতানিকারক দেশ রাশিয়াও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যশস্য রফতানির ওপর স্থগিতাদেশ আরোপ করে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘও। জাতিসংঘের বক্তব্য হলো, দেশগুলোর উচিত এখন ‘প্রতিবেশীদের ভিখারি বানানোর’ নীতি পরিহার করা। এদিকে সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ হারাতে পারে। ব্যাঘাত ঘটতে পারে শ্রম ব্যবস্থায়। ফলে বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার প্রকোপ অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে। এর আগে ২০০৭ সালেও বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার ধারাবাহিকতায় ভারত ও ভিয়েতনামসহ বেশ কয়েকটি দেশ খাদ্যশস্য রফতানির ওপর স্থগিতাদেশ আরোপ করেছিল। এর ধারাবাহিতায় উন্নয়নশীল বিশ্বের ক্রেতা দেশগুলোর খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি সে সময়ের চেয়েও অনেক জোরালো ও জটিল। এ অবস্থায় অদূর ভবিষ্যতে সংকটের মাত্রা কোথায় দাঁড়াতে পারে, তা নিয়ে অনেক ধরনের শঙ্কাজনক পূর্বাভাস রয়েছে। এর প্রতিটিরই ভাষ্য বেশ আতঙ্কজনক।
এ অবস্থায় আমাদের নির্ভর করতে হতে পারে আমাদের কৃষিব্যবস্থা এবং কৃষকদের উপরই। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি আমাদের কৃষি ও কৃষককেও আক্রমণ করেছে। পরিবহন ব্যবস্থা সীমিত হয়ে পড়ায় দেশের নানা প্রান্তে কৃষকদের উৎপাদিত কাঁচা সবজির মূল্য কমে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে বিক্রিই করতে পারছে না কৃষকরা। হতাশ হয়ে কোথাও কোথাও শাক-সবজি গরু দিয়ে খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছে তারা। নতুন করে চাষাবাদ করতেও পারছে না শ্রমিক সংকটের কারণে। আবার লকডাউনের কারণে ডিজেল সংকটে সময় মতো অনেক জমিতে সেচ দেওয়ায় সম্ভব হচ্ছে না। অনেক মৎস্য চাষি তাদের পুকুরে মাছ বিক্রির উপযুক্ত হলেও শ্রমিকের অভাবে ধরতে পারছেন না। আবার মাছ ধরতে পারলেও উপযুক্ত মূল্যে বিক্রির নিশ্চয়তা নেই। পরিবহন বন্ধ থাকায় পাইকাররা সেসব মাছ কিনতে চাইছেন না। পুকুরে রেখে দিয়েও স্বস্তিতে নেই তারা। প্রতিদিন মাছের খাবার দিতে হচ্ছে। বাজারে মাছের খাবারের মূল্যও বেড়ে গেছে। ফলে উভয় সংকটে পড়েছেন মৎস্য চাষিরা। মানুষের পুষ্টির অন্যতম উপাদান দুধ, ডিম এবং মুরগি উৎপাদনকারী খামারিরাও রয়েছেন বিপাকে। মিল কারখানা বন্ধ থাকার কারণে দুধের বিক্রি কমে গেছে। কোথাও কোথাও পানির চেয়েও কম মূল্যে বিক্রি হচ্ছে গরুর দুধ। নানা রকম গুজবের কারণে মুরগি, মুরগির ডিম বিক্রিতেও নেমেছে ধস। দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এসব খামারিরা তাদের মূলধন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়তে পারে। এখন বোরো ধানের মৌসুম। জমিতে ধান পাকতে শুরু করেছে। সাধারণত এটাই কৃষকদের প্রধান ফসল। এ মৌসুমে উৎপাদিত ধান থেকেই সাধারণত কৃষক তার পরিবারের সারা বছরের খাদ্য মজুদ করে। আর উদ্বৃত্তটুকু বিক্রি করে একদিকে নিজেদের আর্থিক চাহিদা মেটায়, অন্যদিকে সরকারের গুদাম ভরাতে সাহায্য করে, চাল কল মালিকরাও তাদের মজুদ গড়ে তোলে এ সময়, যা দিয়ে সারা দেশের যেসব মানুষ সরাসরি কৃষির সাথে সম্পৃক্ত নয় তাদের খাদ্যের চাহিদা মেটে। এখন সেই বোরো মৌসুমের ভরা ধানের খেত দেখেও কৃষকের দুশ্চিন্তা যেন আরো বাড়ছে। অঘোষিত লকডাউন যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ততই তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পুরো হচ্ছে। ধান কাটা এবং ঘরে তোলার মজুর বা শ্রমিক কোথায় পাবেন তারা। পাহাড়ি ঢল ও আগাম বন্যার কারণে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই কেটে নিতে হয় হাওর অঞ্চলে আবাদকৃত বোরো ধান। এজন্য ধান কাটার কাজে আশপাশের জেলাগুলো থেকে হাওরে নিয়ে আসা হয় প্রচুর মৌসুমি শ্রমিক। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবার আসতে পারছে না এসব শ্রমিক। অন্যদিকে রয়েছে উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতিরও অভাব। সব মিলিয়ে হাওর অঞ্চলে বোরো ধান কাটা নিয়ে এবার দেখা দিয়েছে সংশয়। একদিকে কৃষক শ্রমিকের সংকটের কারণে চিন্তিত, অন্যদিকে যারা এতদিন এ সময়টা কৃষকের জমিতে ধান কাটার শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত তারা বেকার হয়ে ঘরে বসে থেকে দুশ্চিন্তায় আছে পরিবার পরিজনদের খাদ্য সংকট কীভাবে মোকাবেলা করবে সেটা নিয়ে। এক্ষেত্রে বাস্তবোচিত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষক, শ্রমিক, সর্বোপরি খাদ্যসংকটে পড়তে পারে পুরো জাতি।
করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে ধান কাটার সময় কৃষি শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাওর এলাকায় আগমন ও চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময়ে হাওর এলাকায় ধান কাটাসহ সারাদেশে কৃষি উৎপাদন ও বিপণন অব্যাহত রাখতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে মাঠপর্যায়ে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও অনুসরণ করতেও বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের কৃষি মন্ত্রণালয় এবং কৃষি অধিদপ্তরের এই অনুরোধের উপর নির্ভর করে বসে থাকলে কাজের কাজ কিছুই হবে বলে মনে হয় না। কেননা গত বোরো মৌসুমে কৃষক ধান কাটা শ্রমিকের সংকটে পড়েছিল, তখন দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকা স্বত্তে্বও তারা কৃষকদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারেনি। এমনকি ধানের দাম কমে যাওয়ার কারণে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে ফড়িয়াদের বাদ দিয়ে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতেও তাদের ব্যর্থতা ছিল অন্যতম আলোচ্য বিষয়। এখন করোনাভাইরাসজনিত এই অস্বাভাবিক অবস্থায় শুধু অনুরোধ করে তারা কী করতে পারবেন তা বোধগম্য নয়। এ সময়টা অন্যসব সময়ের থেকে একেবারেই অন্যরকম এবং সময়ও খুব কম। তাই শুধু অনুরোধ নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কৃষক কীভাবে তাদের ধান ঘরে তুলতে পারেন, দেশের মানুষের খাদ্যঘাটতি পূরণে সহায়তা করতে পারেন সে ব্যাপারে সব ধরনের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি আগে থেকেই নিতে হবে। আরো একটা বিষয়, এ দেশে প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ না নিলে কোনো কিছুই না হওয়ার একটা প্রবণতা আছে। এক্ষেত্রেও সেটা হতে পারে। তাই দেশে করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৃষি এবং কৃষকদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নেওয়া হলেই ফলপ্রসূ হতে পারে। অন্যথায় দেখা যাবে, পরিকল্পনা আর উদ্যোগ নিতে নিতেই সময় ফুরিয়ে যাবে, তখন হয়তো বেশি কিছু করাও সম্ভব হবে না। বোরো আমাদের সবচেয়ে বড় ফসল। বোরো ফসলের পর আউশের চাষ। আমাদের দেশে আউশের চাষ তুলনামূলক কম হয়। এবার করোনাজনিত সঙ্কট কাটাতে হলে আউশের চাষ বাড়াতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, কৃষকের কাছে বেশি পরিমাণ বীজ আছে কিনা। ধান ছাড়াও সবজি বা ফলের চাষ বাড়াতে হবে। এই সময়টায় কৃষক কোন জমিতে কী ধরনের ফসল করতে পারে এ বিষয়ে কৃষককে সচেতন ও পরামর্শ প্রদান করতে হবে। সরকারিভাবে আগেই একটা অ্যাসেসমেন্ট করা যেতে পারে এবং কৃষককে সেভাবে পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। ভালো বীজ, সার, সেচ ও বালাইদমন ব্যবস্থাপনাসহ সকল বিষয়ে কৃষকের চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বের পারস্পরিক যোগাযোগ বলা চলে একরকম বন্ধই। বন্ধ বিশে^র অনেক দেশের কলকারখানা। কাঁচামালের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সারের সংকট হতে পারে কিনা তাও ভেবে দেখতে হবে। এ সংকটের কথা মাথায় রেখে কৃষককে এখনই প্রস্তুত করতে হবে জৈবসার তৈরির বিষয়টিতে। কৃষককে সচেতন করতে স্বাস্থ্য ও কৃষি তথ্য কৃষকের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে সমন্বিত ভূমিকা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
রিকশা-ভ্যান চালক, হকার, গার্মেন্টসহ দেশের বিভিন্ন খাতের বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ করোনাকারণে বেকার। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ঘরবন্দি হয়ে আছে; তাদেরকে কৃষির সাথে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায় তার একটি গাইড লাইন জরুরি। উত্তর বঙ্গ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনো অন্যান্য জেলায় গিয়ে কৃষি বা অন্যান্য খাতে শ্রম দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু পরিবহন বন্ধ থাকায় তারা নিজ নিজ এলাকায় আটকা পড়েছেন। অনেকের ঘরেই খাদ্যঘাটতি দেখা দিয়েছে। যাদের ঘরে সীমিত খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আছে তারাও হয়তো অচিরেই খাদ্যসংকটে পড়বেন। এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে ঘরে বসিয়ে রেখে তাদের ভরণপোষণ করার সামর্থ্য আমাদের সরকারের নেই। তাই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষকে কৃষিতে কাজে লাগানো যায়, সে পরিকল্পনা দ্রুতই গ্রহণ করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। কৃষকদের একটা বড় অংশ মহাজন, এনজিও, কৃষি ব্যাংকসব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে সাধারণত চাষাবাদ করে থাকেন, মৎস্য চাষ করে থাকেন। কিন্তু এখন করোনাকারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তাদের সেসব ঋণ বা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে সে দিকেও সরকারকে নজর দিতে হবে। করোনাকারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন খাতে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এটা অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য উদ্যোগ। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শিল্পকারখানা, আমদানি, রফতানিসহ অকৃষি খাতের সকল সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দেশের মানুষকে তিন বেলা খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারে যে সেক্টর সেই কৃষির জন্য কোনো প্রণোদনার কথা এখানে দেখা যাচ্ছে না। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বরং, সরকারের এখন প্রধান টার্গেট হওয়া উচিৎ কৃষি এবং কৃষিতে উৎপাদন বাড়ানো। উৎপাদিত কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাসহ তা সংগ্রহ করে সারাদেশের মানুষের মাঝে সুষম বণ্টনের ব্যাপারেও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। মনে রাখতে হবে, করোনাকারণে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় কৃষিই আমাদের প্রধান হাতিয়ার।
sayedibnrahmat@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন