শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

খাদ্য উৎপাদন ও মজুদ বাড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০২০, ১২:১৭ এএম

বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি নেই। বরং দিন দিন অবনতি হচ্ছে। উন্নত বিশ্ব তো বটেই, অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে করোনা পরিস্থিতির অবনমন হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের অবস্থা শোচনীয়। আফ্রিকার দেশগুলোর পরিস্থিতিও একই রকম। আমাদের পরিস্থিতি ভালো, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। দিন দিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। করোনার বিস্তার কতদিন থাকবে বা এ থেকে কবে মুক্ত হওয়া যাবে, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না। এরই মধ্যে বিশ্বের অর্থনৈতিক সংস্থাগুলো বৈশ্বিক অর্থনীতি চরম মন্দাগ্রস্ত হতে পারে বলে আগাম ঘোষণা দিয়েছে। বলা হচ্ছে, গত শতকের ৩০ দশকের মহামন্দাকেও তা ছাড়িয়ে যাবে। ডব্লিউএফপি প্রেডিক্ট করেছে, করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে খাদ্যাভাবে বিশ্বের তিন কোটি মানুষ মারা যেতে পারে। করোনার এটি একটা দিক। এছাড়া অসংখ্য মানুষের বেকার হওয়া এমনকি দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশ এর বাইরে থাকবে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। ত্রাণের জন্য ইতোমধ্যে যে হাহাকার শুরু হয়েছে, তা সামাল দিতে না পারলে পরিস্থিতির অবনতি বৈ উন্নতি হবে না।
করোনার বিরূপ প্রভাবে দেশের মানুষের আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষ লকডাউনের মধ্যেই বের হয়ে পড়ছে রাস্তায়। ক্ষুধার কাছে করোনাভীতি তুচ্ছ হয়ে যাচ্ছে। দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষের সংখ্যাই বেশি। প্রায় ৫ কোটির মতো। দরিদ্র এবং হতদরিদ্র মিলিয়ে রয়েছে আরও প্রায় ৫-৬ কোটির মতো। এদের বেশির ভাগই নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন কাটায়। অনেকে মানুষের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে খাবারের ব্যবস্থা করে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় অনিবার্য লকডাউনে সবকিছু অচল হয়ে পড়ায় কোটি কোটি মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। সরকার ইতোমধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করলেও তা এখনও খুব বেশি গতি পায়নি। ত্রাণের জন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভাবী মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। আন্দোলন করতে দেখা গেছে। দিন যতই যাচ্ছে, কর্মহীন হয়ে পড়া এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠি অর্থ ও খাদ্যাভাবে অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছে। তাদের ঘরে থাকা এবং রাখা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অথচ করোনা মোকাবেলায় ঘরে থাকার বিকল্প নেই। নানা ছলছুতায় লোকজন বাইরে বের হচ্ছে, আড্ডা দিচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা দূরে থাক গায়ে গা ঘেঁষে চলছে। গ্রামে-গঞ্জে তা মানার প্রবণতা খুব কম। এমনকি রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম মানা হচ্ছে না। ফলে এসব কাঁচাবাজার করোনা বিস্তারের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে বেতনের দাবিতে গার্মেন্ট শ্রমিকরা যেভাবে আন্দোলন শুরু করেছে, তা পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলতে পারে। এমনিতেই কাজে যোগ দেয়ার জন্য গত ৪ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যেভাবে শ্রমিকরা রাজধানীমুখী হয় এবং সেদিন রাতেই গার্মেন্ট বন্ধের ঘোষণা ও শ্রমিকদের ফিরে যাওয়ার ঘটনা দেশব্যাপী করোনা বিস্তারের অন্যতম কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এটি গার্মেন্ট মালিকদের এক অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত ছিল। এতে যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে। তবে এখন গার্মেন্ট কারখানার ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক। দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি যেহেতু ঘরে থাকা বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, তাই আমাদেরকে এ পথ অনুসরণ করেই চলতে হবে। তবে যেসব মানুষ কর্মহীন হয়ে অভাব অনটনে পড়েছে এবং যারা হতদরিদ্র তাদের খাদ্য সংকট দূর করতে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। মানুষকে ঘরবন্দি রাখতে এখন তাদের ‘বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানো’র নীতি অবলম্বন করা ছাড়া গতি নেই। আমরা লক্ষ করছি, সরকারি ত্রাণ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণির নেতাকর্মী এন্তার লুটপাট চালাচ্ছে। এতে সরকারের বদনাম যেমন হচ্ছে, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ‘কাউকে না খেয়ে থাকতে হবে না’ নীতিও ব্যাহত হচ্ছে। যদি এদের লুটপাটের কারণে মানুষের মধ্যে খাদ্য সংকট দেখা দেয় বা না খেয়ে থাকতে হয় কিংবা মরতে হয়, তবে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সরকারকে এখনই সতর্ক হতে হবে।
এখন করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং এ থেকে মুক্তির একটাই উপায়, মানুষকে ঘরে রাখা। যে কোনো মূল্যে সরকারকে এ কাজটি করতে হবে। যত দ্রুত তা করা যাবে, তত তাড়াতাড়ি করোনা পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যাবে এবং অর্থনৈতিক মন্দাও মোকাবেলা সহজ হবে। এমনিতেই যথাযথ প্রস্তুতি নিতে আমাদের বিলম্ব হয়ে গেছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন। তাই এখন আর কোনো ধরনের শৈথিল্য প্রদর্শনের সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর অবস্থান নিতেই হবে। অনেক সংকটজনক পরিস্থিতি দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতা নতুন আইজিপি’র রয়েছে। মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে বা অন্য কোনো উদ্যোগ নিয়ে ঘরে থাকার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করতে পারবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। এক্ষেত্রে মানুষের নিজস্ব সচেতনতা সবচেয়ে বেশি জরুরি। কষ্ট হলেও নিজের এবং অন্যের জীবন বাঁচাতে ধৈর্য্য ধরে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। আমাদের খাদ্য পরিস্থিতি সন্তোষজনক। খাদ্যের সাধারণ ও নিরাপত্তামূলক মজুদ যথেষ্ট। তবে করোনাকাল কতদিন প্রলম্বিত হয় এবং খাদ্যের বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় তা বলার কোনো উপায় নেই। এমতাবস্থায়, খাদ্যের উৎপাদন ও মজুদ বৃদ্ধির ওপর অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন