শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

সীমান্তে জিরো লাইনে ভারতের বেড়া নির্মাণ

প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কিছু কিছু জায়গায় সরকার সীমান্তের জিরো লাইনের কাছাকাছি ভারতীয়দের বেড়া নির্মাণের অনুমতিদানের বিষয়টি বিবেচনা করছে। এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারত এ সংক্রান্ত প্রস্তাব করতে পারে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তার মতে জাতীয়স্বার্থে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আনা যেতে পারে। অতীতে বহু ঘটনায় বাংলাদেশ প্রতিবেশীর জিরো লাইনের নিকটে বেড়া নির্মাণের বিষয়টি অনুমোদন করেছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে ৪,১৫৬ কিলেমিটার সীমান্ত রয়েছে। গত ডিসেম্বরে বিজিবি মহাপরিচালকের ভাষ্য অনুযায়ী দেশের ৩৩১ কিলোমিটার স্থলসীমা অরক্ষিত রয়েছে। সীমান্ত নদী মাতামুহুরিসহ সীমান্ত এলাকায় বেশকিছু বিরোধপূর্ণ এলাকা রয়েছে। বর্তমান সিদ্ধান্তের ফলে প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশ যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যাচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তা কার স্বার্থে?
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সমস্যা নতুন কোন বিষয় নয়। সীমান্ত সমস্যা এমন একপর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে সেখানে প্রায় প্রতিদিনই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশি মারা যাচ্ছে। সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা বন্ধে নানা সিদ্ধান্তের কথা দু’দেশের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হলেও বাস্তবে তার কোন প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না। ইদানিং পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বাংলাদেশের অনেক সিদ্ধান্ত ভারতীদের অনুকূলেই যাচ্ছে। কার্যত সীমান্ত এখন অনেকটাই অরক্ষিত হয়ে আছে। সীমান্তের নাগরিকরা এক প্রকার জিম্মি হয়ে আছে। সীমান্তে বিরোধপূর্ণ এলাকা নিয়ে এর আগেও বহুবার বৈঠক হয়েছে। সীমান্ত নদী মাতামুহুরিতে ভাঙনের কারণে বাংলদেশ ভূমি হারাচ্ছে অথচ তা উদ্ধারে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এমনকি ভাঙন ঠেকাবার জন্য কোন ব্যবস্থাও ভারতীয়দের বাধার কারণে নেয়া যাচ্ছে না। এমন একটা প্রবণতা দাঁড়িয়েছে, ভারত যা চাইছে আমরা যেন সবকিছুই বিনা বাধায় তাদের দিয়ে দিচ্ছি। জাতীয় স্বার্থের দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করা হচ্ছে না। কোন ধরনের তোয়াক্কা না করেই ভারতের সব আবদার রক্ষা করা হচ্ছে। গত কিছুদিনে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত নিয়ে নানামুখী খবর প্রকাশিত হয়েছে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ-আসাম সীমান্ত পুরোপুরী সীল করে দিতে যাচ্ছে ভারত। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সীমান্তে লেজার প্রাচীর বসানোর পরিকল্পনা করছে ভারত। নয়াদিল্লীর গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী, পশ্চিমবাংলা-বাংলাদেশ সীমান্তে লেজার প্রাচীর বসাতে একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করার কথা রয়েছে। ইসরাইলসহ বেশ কয়েকটি দেশের সীমান্তে এধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্য খবরে বলা হয়েছে, পঞ্চগড় সদর উপজেলার মীড়গড় সীমান্তে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তিন দিকে ভারতীয় সীমান্ত নদী বেষ্টিত ও বিশেষ একটি ভূমির বাঁধ ঘেঁষে পাথর উত্তোলনের কারণে বাংলাদেশের ৪৫ একর ভূমি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। একথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের বিষয়টিতে অনেকবেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আলোচ্য বিষয়টি গুরুতর। কেন এবং কী কারণে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ভারতকে একতরফা সুযোগ দেয়া হচ্ছে সে বিষয়টি সম্পর্কে দেশের জনগণ মোটেও অবহিত নয়। সাংবিধানিকভাবে দেশের স্বার্থদেখার কথা সরকারের। সেই স্বার্থ যদি কোন কারণে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে সে সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার দায়িত্বও সরকারে। বলাবাহুল্য, বাংলাদেশ পানির ন্যায্য হিস্যা ভারতের কাছ থেকে আদায় করতে পারেনি। অন্যদিকে ভারত ট্রানজিটসহ তার সব দাবীই আদায় করে নিয়েছে। তারপরও ভারতীয় স্বার্থ রক্ষায় সরকারের কোন কোন মহলের অতিআগ্রহের কারণ কি তা স্পষ্ট নয়। সীমান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি নিয়ে কোন মহলেই কোন আপত্তি নেই। বাংলাদেশের জনগণও এব্যাপারে সম্মানজনক মীমাংসার পক্ষে। বাস্তবে ঘটছে তার বিপরীত। প্রকাশিত রিপোর্ট পর্যালোচনা করলে এটা পরিষ্কার যে দেশের জনগণকে গোলক ধাঁধায় রেখেই দু’পক্ষ একধরনের সমঝোতায় পৌঁছে গেছে। এতবড় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এ ধরনের প্রবণতা অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য।
সীমান্ত এলাকায় আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনেই ভারতের যা কিছু করার তা করা উচিৎ। এর ব্যত্যয় হলে তা কারো জন্যই ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। সরকারে যারা আলাপ-আলোচনা করছেন বা করবেন তাদেরও এটা পরিষ্কারভাবে জানা থাকা উচিৎ এধরনের সিদ্ধান্তের পরিণতি দেশের জন্য আত্মঘাতী হয়ে উঠতে পারে। এখানে লুকোছাপার কিছু নেই, থাকতে পারে না। সীমান্ত সমস্যা সমাধানের নামে যাতে জাতীয় স্বার্থ পরিপূর্ণভাবে রক্ষিত হয় সেজন্যই যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ তথা বাস্তবায়নের আগে সংসদকে অবহিত করা প্রয়োজন। যা কিছু হয়েছে সে সম্পর্কে পুরোপুরি জনগণকে জানাতে হবে। সকলেরই মনে রাখা প্রয়োজন জাতীয় স্বার্থকে অন্য কোনকিছুর সাথে বিনিময় করার কোন সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্ট সকলে জাতীয় স্বার্থে একমত থাকবেন, এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন