(তিন)
ইনকিলাব ডেস্ক : যারা ট্রাম্পকে বর্ণবাদী বলে অভিযুক্ত করেন, ট্রাম্প তাদের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। সিএনএনের সাথে গত ডিসেম্বরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি সবচেয়ে কম বর্ণবাদী ব্যক্তি। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমের সমতল ভূমিতে ট্রাম্প ও শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের মধ্যকার সীমারেখা সহজেই মুছে যায়। তিনি তার ৯০ লাখ ফলোয়ারের টুইটার অ্যাকাউন্টগুলো থেকে পাওয়া সমর্থনমূলক বার্তাগুলোর জবাব দিয়েছেন। তিনি গত শরতে এক সন্দেহজনক অপরাধ পরিসংখ্যানের সূত্রে দাবি করেন যে ২০১৫ সালে নিহত শ্বেতাঙ্গদের ৮১ শতাংশই কৃষ্ণাঙ্গদের দ্বারা নিহত হয়েছে। (এফবিআই’র তথ্যমতে ২০১৫-র ওই সময়ে এ ধরনের কোনো পরিসংখ্যান ছিল না, আর ২০১৪ সালে প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৫ শতাংশ)
প্রকৃতপক্ষে টুইটারে ট্রাম্পের উপস্থিতি অসংখ্য অজ্ঞাত পরিচয় বর্ণবাদী ও সেমিটিকবিরোধী হামলাকারীদের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। লিটল বার্ড নামের একটি সামাজিক মাধ্যম ডাটা মাইনিং কোম্পানি ট্রাম্পের এক সপ্তাহের টুইটার তৎপরতা বিশ্লেষণ করে দেখতে পায় যে, তিনি ৫০টি জনপ্রিয় স্বচিহ্নিত শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী অ্যাকাউন্টের এক বা একাধিক টুইটের জবাবে তিনি প্রায় ৩০ শতাংশ টুইট করেছেন।
সময়ে সময়ে মনে হয় ট্রাম্প ও শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে টুইটারে চক্রাকার ¯্রােত আবর্তিত হয়েছে। সম্প্রতি হিলারি ক্লিনটন সম্পর্কে বার্তার প্রেক্ষিতে সমালোচিত হয়ে ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, ইহুদিদের প্রতি মন্তব্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিল না এবং এ যোগসূত্র রচনার জন্য সাংবাদিকদের সমালোচনা করেন। ট্রাম্পের সামাজিক মাধ্যম পরিচালক এক বিবৃতিতে বলেন যে, তিনি ক্লিনটনবিরোধী টুইটার ফিড থেকে এ ছবিটি তুলে নিয়েছেন যেখানে অসংখ্য ছবি রয়েছে।
আসল ছবিটি তরুণ পাঠকদের অনলাইন ম্যাগাজিন মিক খুঁজে পায় চ্যানেল ৮-এর রাজনীতি বিভাগে সেমিটিকবিরোধী মেমে ও বর্ণবাদী ছবি সজ্জিত একটি মেসেজ বোর্ড। সেখানে ও অন্যান্য মেসেজ বোর্ডে, যেমন চ্যানেল ৪ ও রেডিট, রাজনৈতিক সঠিকতা ও অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সমালোচনা ব্যাপক শ্রোতার সমর্থন পায়।
ট্রাম্প এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যে এ মাসে টুইটারে তিনি যে ছবিটি পোস্ট করেন তা সেমিটিকবিরোধী ছবি।
ট্রাম্প জি কিউতে তার স্ত্রী মেলানিয়ার একটি প্রোফাইলের সমালোচনা করার পর নিবন্ধের লেখক সাংবাদিক জুলিয়া আইওফি যিনি একজন ইহুদি, সামাজিক মাধ্যমে সেমিটিকবিরোধী কটূক্তির শিকার হন। তিনি বন্দী শিবিরে আটক এমন একটি কার্টুনও দেখানো হয়।
তিনি এ হামলার নিন্দা করেন কিনা তার জবাবে ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে বলেন, ভক্তদের জন্য আমার কোনো বার্তা নেই। এক মহিলা একটি নিবন্ধ লিখেছেন, যা সঠিক নয়।
বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাসে ট্রাম্পের প্রভাব স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়।
ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে একটি গে ক্লাবে ইসলামিক স্টেটের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী এক বন্দুকধারীর গুলিতে ৪৯ ব্যক্তি নিহত হওয়ার তিনদিন পর কলেজ শিক্ষার্থীদের একটি দল হত্যাকা-ের ঘটনাস্থল থেকে দু’ব্লক দূরে জড়ো হয়। তারা ট্রাম্প হ্যাট বা টি শার্ট পরিহিত ছিল ও স্লোগান দিচ্ছিল ঐ দেয়াল নির্মাণ কর।
কয়েক মিনিট পর একটি কালো এসইউভি সেখানে এসে পৌঁছে, তা থেকে নামেন লল্ডনে বেড়ে ওঠা গে রক্ষণশীল ও এখন সামান্য খ্যাতিলাভকারী মিলো ইয়ান্নোপুলাস। ২০১৪ সাল থেকে ইয়ান্নোপুলাস যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কলেজ ক্যাম্পাসসমূহ ঘুরে বেড়িয়েছেন। তিনি ক্যাস্পাস ধর্ষণ বিষয়ক পরিসংখ্যানকে দাপ্তরিক ফিকশন বলে আখ্যায়িত করেন এবং নারীবাদ একটি ক্যান্সার বলে স্লোগান সমর্থন করেন।
তার তীরের লক্ষ্য প্রধানত উদারপন্থী, নারীবাদী ও ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার কর্মীরা যাদের সবাইকে নিয়মিত ভাবে তার বক্তৃতার প্রতিবাদ বা তা ভন্ডুল করে দিতে দেখা যায়। তার অনুসারীরা এসব ঘটনা চিত্রায়িত করে এবং আগ্রহের সাথে ইউটিউব বা ফেসবুকে শেয়ার করে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ইয়ান্নোপুলাস এক বক্তৃতাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। ট্রাম্প হ্যাট পরিহিত কয়েকজন তরুণ সেডান চেয়ারে করে তাকে সেখানে বয়ে আনে।
গে ক্লাবে গুলির ঘটনার পর ইয়ান্নোপুলাস অরল্যান্ডোতে সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমে নিরাপত্তা কর্মীদের অভাব এবং পরে ১৪১৫ একর জায়গায় অবস্থিত ক্যাম্পাসে উপযুক্ত স্থান না থাকার কথা বলে তার উপস্থিতি বাতিল করে। এর পরিবর্তে তিনি নাইট ক্লাবে বক্তৃতা করেন। তিনি নেটওয়ার্ক টিভি ক্যাম্প থেকে তিনি মাত্র কয়েক ফুট দূরে থাকলেও তার বক্তৃতা ধারণ করা ও ছবি তোলার জন্য কেউ ক্যামেরা বা সাংবাদিক পাঠায়নি। তিনি তার বক্তৃতায় মুসলিম অভিবাসীজনিত সমস্যার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি উল্লাসধ্বনি ও চিৎকারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের প্রবেশ নিষিদ্ধের ট্রাম্পের পরিকল্পনা সমর্থন করেন। সূত্র দি নিউইয়র্ক টাইমস। (সমাপ্ত)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন