স্টাফ রিপোর্টার : চিকিৎসার অযোগ্য রোগীদের জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে নিদারুণ কষ্ট-যন্ত্রণায়। বাড়ি-ঘরে উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় জীবনের শেষ সময়ে যন্ত্রণা লাঘবের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাটুকু থেকেও বঞ্চিত থাকতে হয় তাদের। এসব রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর আহŸান জানিয়েছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে পরিবারসহ সমাজের সকলকে পাশে থাকার কথা বলেছেন। এছাড়া বক্তারা প্যালিয়েটিভ কেয়ারকে স্বাস্থ্যনীতিতে অন্তর্ভুক্তি, প্রতিষ্ঠান, জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনসচেতনতা এবং ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি এবং বাহাউল হক সোনারগাঁ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে ‘মমতাময় সোনারগাঁ’ নামে একটি স্বাস্থ্য সেবামূলক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে সংগঠনটির কার্যকরী কমিটিও গঠন করা হয়। সোনারগাঁ পৌরসভার গোয়ালদী এলাকায় অসহায় ও অনিরাময় যোগ্য রোগীদের শারীরিক ও মানসিক কষ্ট প্রশমনে ‘মমতাময় সোনারগাঁ’ নামক একটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্যালিয়েটিভ কেয়ার সম্পর্কে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর প্যালিয়েটিভ কেয়ার-এর সমন্বয়ক প্রফেসর ডা. নিজামউদ্দিন আহমদ। এছাড়া বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. আফজাল হোসেন, প্রফেসর ডা. মো. আইউব আলী চৌধুরী, প্রফেসর ডা. আক্তারুজ্জামান, মোজাম্মিল হোসেন মঞ্জু, এম আবদুল আজীজ, ডা. ফারজানা খান প্রমুখ।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বে প্রতি বছর আনুমানিক ৫ কোটি ৬০ লাখ মানুষ মারা যায়। যাদের ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যুর পূর্বে ব্যথামুক্তি এবং অন্যান্য চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন পরে। কিন্তু দেশে এসব রোগীদের সেবায় ক্ষুদ্র পরিসরে চালু হওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠানই গড়ে ওঠেনি। এমনকি ২০১৪ সালে জাতিসংঘ স্বাস্থ্যসেবার মূল ধারায় প্যালিয়েটিভ কেয়ার অন্তুর্ভুক্ত করার কথা বলেছেন। অথচ এখনো জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে বিষয়টি স্থান পায়নি।
পৃথিবীতে নিরাময়হীন রোগে আক্রান্ত রোগীর সঠিক পরিসংখ্যান নেই, তবে ২০০৭ সালে শুধুমাত্র ক্যান্সার রোগে পৃথিবীতে মারা গেছেন প্রায় ৭০ লাখ মানুষ। একই সময় এইড্স্ রোগে এ মৃত্যু ছিলো ২০ লাখ বলে অনুষ্ঠানে উল্লেখ করা হয়। এ সব আক্রান্ত মানুষের শতকরা ৭০ জন তীব্র শারীরিক ব্যথা সহ্য করেছেন মৃত্যুর আগে। যদিও খুব অল্প প্রশিক্ষণে তাদেরকে ব্যথাবিহীন মৃত্যু নিশ্চিত করা যেতো, শ্বাসকষ্টে আরাম দেয়া যেতো, দুর্গন্ধযুক্ত ক্ষতস্থান পরিস্কার করা যেতো। পরিসংখ্যানগত অনুয়ায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ প্রতি বৎসর নতুন ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটি ৪০ লাখ। এই সব রোগীর দুই-তৃতীয়াংশই থাকবে উন্নয়নশীল দেশ গুলোতে, যারা মোট বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যয় খাতের মাত্র দশ শতাংশ ব্যবহার করে। তাহলে এই সব মানুষ কি জীবনের প্রান্তিক সময়টুকু কোনো চিকিৎসাই পাবে না!
দেশে ১০ লাখ ক্যান্সার রোগী বাস করেন এবং প্রতি বৎসর ২ থেকে ৩ লাখ নতুন রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, এ সব রোগীর শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ নিরাময় অযোগ্য অবস্থায় চিকিৎসকদের কাছে আসেন। এই সব রোগীর জন্য আমাদের দেশে কোনো সংগঠিত চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা নেই। অত্যন্ত অল্প ব্যয়ে, সীমিত প্রশিক্ষণে পৃথিবীর বেশ কটি দেশ তাদের নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি জাতীয় উপসর্গ প্রশমন চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা এবং ব্যথামুক্ত অন্তিম সময় নিশ্চিত করতে পেরেছে। দক্ষিণ ভারত, স্পেন, উগান্ডা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সমাজের সকলে মিলে ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার’ এক নতুন মাত্রার সংযোজন করেছে।
এদিকে ‘মমতাময় সোনারগাঁ’ নামে স্বাস্থ্য সেবামূলক সংগঠনটি প্রাথমিকভাবে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ ও বন্দর উপজেলা, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা এবং কুমিল্লার হোমনা, মেঘনা ও দাউদকান্দীসহ ৮টি উপজেলার অনিরাময় যোগ্য রোগীদের চিকিৎসা ও সেবা-যতœ সুবিধা নিশ্চিত করতে অঙ্গিকারাবদ্ধ বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নব-নির্বাচিত সভাপতি আবুনূর মুহম্মদ বাহাউল হক। সংগঠনটির নব-নির্বাচিত মহাসচিব প্রফেসর ডা. এটিএম মোশারেফ হোসেন বলেন, জটিল ও নিরাময় অযোগ্য রোগীরা তাঁদের মৃত্যুর আগে যে কয়টা দিন বেঁচে থাকেন তাঁদের একটি যন্ত্রনামুক্ত সুন্দর জীবন উপহার দেয়াই এই সংগঠনের লক্ষ্য।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন