রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

গরমে ঘামের সমস্যা

প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আমরা প্রায়শই দৈনন্দিন জীবনে সবার সাথে চলাফেরা করতে গিয়ে ঘামজনিত সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। আমাদের দেশ গ্রীষ্মপ্রধান হওয়ায় এবং বাতাসে আর্দ্রতা অত্যধিক বেশি থাকায় গ্রীষ্মকালে আমাদের শরীর থেকে যে ঘাম নির্গত হয় তা সহজে শুকোতে চায় না এবং শরীরে বেশ আঁঠালো ভাবের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এত গেল প্রাকৃতিক ও সহজাত প্রক্রিয়ার কথা। এছাড়াও কিছু কিছু লোকের অত্যধিক ঘামের প্রবণতা রয়েছে।
ঘামজনিত সমস্যার মধ্যে প্রধানত দুটো সমস্যাই প্রণিধানযোগ্য : এক) অত্যধিক ঘাম, দুই) দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম।
অত্যধিক ঘাম : ইংরেজিতে একে হাইপার হাইড্রেসিস বলা হয়ে থাকে। এটা দু’প্রকারের হতে পারে। যেমন শরীরের কিছুু কিছু অংশে যথাÑ হাত ও পায়ের তালু, বগল, দু’উরুর মধ্যকার অংশে ও পেছনে মলদ্বারের আশপাশের জায়গায়। তাছাড়াও নাকের অগ্রভাগে, কপালে ইত্যাদি জায়গাতেও হতে পারে। এধরনের স্থানীয় এলাকায় ঘামের প্রথম ও প্রধান কারণ হচ্ছে ইমোশন বা আবেগপ্রবণতা ও মানসিক চাপ। এছাড়া কিছু কিছু ¯œায়ুতন্ত্রের রোগের কারণেও হতে পারে। কারণবিহীন বা ইডিওপেথিক হাইপারহাইডোসিস যা মানসিক অনুভূতির কারণে হয়ে থাকে, যেমন দুশ্চিন্তায় টেনশন, ভয় ইত্যাদি এবং এটা শুধু হাত ও পায়ের তালু ও বগলে দেখা যায়।
সমস্ত শরীরে ঘামের কারণ : খুব গরম ও অত্যধিক আর্দ্র পরিবেশে বেশি ঘাম হতে পারে। তাছাড়া অত্যধিক ব্যায়াম বা পরিশ্রমের কারণেও হতে পারে। আর যে সকল রোগের কারণে হতে পারে তারমধ্যে জ্বরজনিত রোগে বেশি হতে দেখা যায়। শরীরে হরমোনের তারতম্যের কারণেও হতে পারে। যেমনÑ ডায়াবেটিস, থাইরয়েড গ্ল্যান্ডোর অতিরিক্ত হরমোন নিঃসরণ, গর্ভাবস্থা, বয়স্ক মহিলাদের মাসিক বন্ধের পরবর্তী পর্যায়ে। তাছাড়া ¯œায়ুতন্ত্রের নানারকম রোগ ও মস্তিষ্কের টিউমার এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার ইত্যাদিতেও দেখা দিতে পারে। কারো কারো দেখা যায়, অত্যধিক ঝাল, আচার, টমেটো ইত্যাদি খেলেও সারা শরীরে অত্যধিক ঘাম হয়।
চিকিৎসা : কিছু কিছু ওষুধ আছে যা খেলে এই অতিরিক্ত ঘাম থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় কিন্তু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বেশি থাকার কারণে এগুলোর ব্যবহার খুবই সীমাবদ্ধ। তবে কিছু কিছু ঘুম ও মানসিক প্রশান্তির ওষুধ কিছু কার্যকরী ভূমিকা রাখে। সবচেয়ে কার্যকরি ওষুধ হচ্ছে স্থানীয়ভাবে লাগানোর জন্য ২০% অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড হেক্সাহাইড্রেট। প্রতি রাতে শুকনো শরীরে লাগিয়ে সকালে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটা এক বা দু’সপ্তাহ ব্যবহার করার পর ভালো হয়ে গেলে সপ্তাহে ১ দিন কন্ট্রোল রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এতে কাজ না হলে সার্জিকেল প্রক্রিয়াও রয়েছে। পানি ভর্তি একটা যন্ত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎপ্রবাহ চালিয়ে এই অসুবিধা দূর করা যায়।
দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম : আমাদের মাঝে কারো কারো এই সমস্যার কারণে কখনো কখনো খুবই লজ্জাকর ও অসহনীয় অবস্থায় সম্মুখীন হতে হয়। এটা সাধারণত বগলে দেখা যায় বেশি। আমাদের শরীরে দু’ধরনের ঘর্ম সাধারণত জীবাণুুমুক্ত থাকে এবং দুর্গন্ধবিহীন। কিন্তু এই ঘামে এক ধরনের ঘাম পজেটিভ ব্যাকটেরিয়াযুক্ত হয়ে ফ্যাটি এসিড তৈরি করে এবং ঘামকে করে তোলে দুর্গন্ধযুক্ত।
অ্যাক্রাইন গ্রন্থি হতে নিঃসরিত ঘর্ম যা কিনা সাধারণত পায়ের পাতাতে, ব্রেস্টের নিচে, দু’উরুর সন্ধিক্ষণে বা পেছনের লজ্জাস্থানে নিঃসরিত হয়। এখানে কিন্তু গ্রন্থির কোনো ভূমিকা থাকে না। কিন্তু ত্বক হতে নির্গত কেরাটিন পদার্থ ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবের ফলে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। তাছাড়া বিভিন্ন পদার্থেরও প্রভাব রয়েছে, তার মধ্যে রসুন ও আর্সেনিক উল্লেখযোগ্য।
এখন কথা হচ্ছে, দুর্গন্ধযুক্ত ঘামের কারণ যাই হোক না কেন এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? পরিত্রাণের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ঘামকে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত রাখা এবং সেটা সম্ভব হতে পারে। নি¤েœাক্ত উপায়ে :
বার বার আক্রান্ত এলাকা ভালোভাবে ধৌত করা এবং সম্ভব হলে জীবাণুনাশক বা এন্টিবায়োটিক সাবান ব্যবহার করা।
স্থানীয়ভাবে এন্টিবায়োটিক মলম ব্যবহার করা।
বগলের লোম পরিষ্কার করা।
অন্তর্বাস বা আন্তারওয়্যার নিয়মিত বদলানো।
পায়ের তালুতে বা আঙ্গুলের ফাঁকে যে দুর্গন্ধযুক্ত ঘাম হয়ে থাকে তার জন্য এন্টিবায়োটিক ক্রিম বা পাউডার ব্যবহার করা। তাছাড়া পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট সল্যুশন প্রতিদিন আধঘন্টা ব্যবহার করলেও কিছুদিনের মধ্যে পা দুর্গন্ধমুক্ত হবে। সর্বোপরি এব্যাপারে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া বাঞ্ছনীয়।
ষ ডা. এম ফেরদৌস
চর্ম, যৌন ও কসমেটিক, বিশেষজ্ঞ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন