শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল বাস্তবায়নে চুক্তি

প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শিল্পায়ন ও নগরায়ন সম্প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে দেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মানোন্নয়ন ও নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান ও উন্নয়নের মাধ্যমে চাহিদা পূরণের দাবি উঠলেও গত এক দশকেও তা সম্ভব হয়নি। এ কারণেই আমদানিকৃত গ্যাস দিয়ে চাহিদা পূরণে বিকল্প ভাবনা শুরু হয়েছিল আরো ৭ বছর আগে। অবশেষে কক্সবাজারের মহেশখালীতে একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঠিকাদারি কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি লিমিটেড ও পেট্রোবাংলার মধ্যে দু’টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আমদানিকৃত এলএনজিকে (লিকুইডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) পুনরায় গ্যাসে পরিণত করে তা জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের জন্য ১৫ বছর মেয়াদি এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিওওটি বা নির্মাণ, স্বত্ব সংরক্ষণ, পরিচালন ও হস্তান্তরের ভিত্তিতে নির্মিতব্য এই টার্মিনালটির ১ লাখ ৩৮ হাজার এলএনজি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন সামগ্রিক প্রকল্প অবকাঠামো নির্মাণে মার্কিন কোম্পানি ১৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানা যায়। সেভরনের পর এটিই হবে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় (এফডিআর) বিনিয়োগ প্রকল্প। চুক্তি অনুসারে প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ২০১৮ সালের গোড়ার দিকেই এই টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সোমবার পেট্রো সেন্টারে অনুষ্ঠিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাটসহ পেট্রোবাংলা ও এক্সিলারেট এনার্জির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনেক দেরিতে হলেও দেশের প্রথম এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ এবং আমদানিকৃত এলএনজিকে গ্যাসে পরিণত করে জ্বালানি চাহিদা পূরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ইতিবাচক ও অভিনন্দনযোগ্য। আমরা জানি, গ্যাসের প্রয়োজনীয় চাপ ও সরবরাহে ঘাটতির কারণে দেশের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা, তৈরী পোশাক খাত এবং আবাসন খাতে দীর্ঘমেয়াদি স্থবিরতা বিরাজ করছে। ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎসগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হওয়ায় গ্যাস আমদানির বিকল্প ভাবনাও ছিল যথার্থ। প্রথম মেয়াদের পুরো সময়েও সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণে ব্যর্থ হলেও এবার মার্কিন কোম্পানির সাথে চুক্তিতে উপনীত হওয়া গেল। অনেক সময়ক্ষেপণ হলেও ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম ৭ বছর আগের চেয়ে অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। এখন আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে, যথাযথভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। সেই সাথে দেশীয় উৎপাদন এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে গ্যাসের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রকল্পের ব্যয়ের কারণে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি যেন দেশের শিল্পোৎপাদন ও সাধারণ ভোক্তাদের জন্য অতিরিক্ত চাপ হয়ে না দাঁড়ায় সে দিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে।
গত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের অব্যাহত দরপতনে জ্বালানি আমদানিনির্ভর বাংলাদেশ ব্যাপক হারে লাভবান হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। জ্বালানি খাতে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির বদলে লাভের মুখ দেখলেও গ্যাস ও কয়লাসহ জ্বালানি খাতের অভ্যন্তরীণ উৎসগুলোর উন্নয়নে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেলের দেশীয় উৎসগুলোর উন্নয়ন এবং সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ব্যর্থতা অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকেও অনেকটা ব্যাহত করছে। তবে এফএসআরইউ (তরল গ্যাসকে পুনরায় গ্যাসে পরিণত করা) ভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের মধ্য দিয়ে জ্বালানি সঙ্কটের একটি আপাত সমাধান নিশ্চিত হতে পারে। মহেশখালীর এই প্রথম ভাসমান টার্মিনাল ছাড়াও এলএনজি ও ক্রুড অয়েলের আরো কয়েকটি স্থল টার্মিনাল ও পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা সরকারের হাতে রয়েছে বলে জানা যায়। এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বান ও ব্যয় নির্ধারণে অস্বচ্ছতা পরিহার করে যথাসম্ভব ব্যয়ভার কমিয়ে আনার প্রয়োজনীয় হোমওয়ার্ক থাকা জরুরি। প্রস্তাবিত জ্বালানি টার্মিনালগুলো উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভূমি অধিগ্রহণ এবং পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতির বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন