বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গণস্বাস্থ্যের কিট পরীক্ষা ও অনুমোদনে সরকারের অনীহায় ৫৫ নাগরিকের উদ্বেগ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১১:১৩ পিএম

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার মধ্যেই ‘চিকিৎসকদের হয়রানি ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কিটের পরীক্ষা ও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় সরকারের অনীহায়’ উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৫৫ জন নাগরিক।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরদানকারীদের মধ্যে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান রাখা অধ্যাপক, চিকিৎসক, লেখক, গবেষক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী, নারী আন্দোলন কর্মী, শিল্পী ও আলোকচিত্রী রয়েছেন।

তারা বলেন, ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের দ্রুত বিস্তার রোধে সরকারের প্রতিকার এবং প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থাগ্রহণের সীমাবদ্ধতা দেশের মানুষকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই সীমাবদ্ধতা আরও ব্যাপকতা পেয়েছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের নেওয়া নিবর্তনমূলক পদক্ষেপের কারণে এবং সমাজ ভিত্তিক গণস্বাস্থ্য-আরএনএ বায়োটেক লি. কিটের পরীক্ষা, অনুমোদন ও উৎপাদনের অনুমতি প্রদানে সরকারের অনীহা এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে জনসমক্ষে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ করে হেয় প্রতিপন্ন করার মাধ্যমে।’

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নার্সদের বলে দেওয়া হয়, উচ্চতর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া প্রকাশ্যে বা গণমাধ্যমে তাদের মতামত জানানো থেকে বিরত থাকতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে যুক্ত হয়ে একই কথা বলেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এর মধ্যেই নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক মেডিকেল অফিসারের ফেসবুক পাতার স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দপ্তর থেকে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করে অভিযোগ করা হয় যে এই চিকিৎসক স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য বিভাগ সম্বন্ধে শিষ্টাচার বর্জিত শব্দ প্রয়োগ করে তাদের অভিযুক্ত করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। পরবর্তীতে ওই চিকিৎসক সম্পূর্ণ অভিযোগ অস্বীকার করেন, তার ভাষ্য স্ট্যাটাসটি “জীবন বাঁচানোর জন্য আবেদন মাত্র” ছিল।’

করোনা রোগী শনাক্তের গুরুত্ব সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিবৃতিতে তারা বলেন, কোভিড-১৯ এর এখনও সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, ফলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রধান উপায় হচ্ছে ব্যাপকভাবে টেস্ট, টেস্ট এবং টেস্ট করা, যা বর্তমানে এককভাবে আইইডিসিআরের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য আন্দোলনের অত্যন্ত পরিচিত ও দীর্ঘদিন সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশে বিদেশে সুনাম অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এগিয়ে এসেছে আরএনএ বায়োটেক লি. এর উদ্ভাবিত ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট’ কিট নিয়ে। এই কিটের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দ্রুত জানা যাবে যে রোগী করোনায় আক্রান্ত কিনা। সংস্থাটি সরকারের কাছে আবেদন করে বলেছে, অনুমোদন পেলে এই কিট উৎপাদন এবং ব্যাপকভাবে স্বল্প খরচে ব্যবহার করতে পারবেন।’

এ প্রসঙ্গে তারা বলেন, ‘আমরা লক্ষ করেছি সরকার বিদেশ থেকে অনেক কিট ও পিপিই আমদানি করছে বা অনুদান নিচ্ছে কিন্তু নিজ দেশের উদ্ভাবনকে সময়মত প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে না। ১৭ মার্চ এই কিট আবিষ্কারের ঘোষণা আসলেও কিছু অত্যাবশ্যকীয় উপাদান আমদানির জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রাথমিক ছাড়পত্র পেতে সময় লেগে যায়। এর প্রেক্ষিতে চীন থেকে কাঁচামাল আনা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এসব কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর শুল্ক–কর মওকুফ করে কিট এর নমুনা উৎপাদনের কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব ঘটে। শেষ পর্যন্ত কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ২৫ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তরের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। কিন্তু সরকারের, বিশেষ করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। দেশের এই দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষের সহায়তার জন্যে উদ্ভাবন করা নমুনা কিটের উৎপাদনের অনুমতি প্রক্রিয়া শুরু করতে সরকারের অনীহা নগ্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে।’

এর মধ্যে আবার জাফরুল্ললাহ চৌধুরীকে জনসমক্ষে হেয় প্রতিপন্ন ও তার উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চলছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন তারা।

যারা স্বাক্ষর করেছেন

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক; অধ্যাপক পারউইন হাসান,ভাইস-চ্যান্সেলর, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি; অধ্যাপক আকমল হোসেন, শিক্ষক (অবসরপ্রাপ্ত), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক আহমেদ কামাল, শিক্ষক (অবসরপ্রাপ্ত), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম (এএলআরডি); ডা. নায়লা জামান খান, অধ্যাপক, ঢাকা শিশু হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক নিউরোসায়েন্স; শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী, লেখক; অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, শিক্ষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক মেঘনা গুহঠাকুরতা, গবেষক; ফরিদা আক্তার, নারী অধিকার আন্দোলন কর্মী, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক সৌভিক রেজা, শিক্ষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, আ-আল মামুন, শিক্ষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ড. সামিনা লুৎফা, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মাইদুল ইসলাম, শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, তানভীর মুরাদ, শিক্ষক, পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইন্সিটিউট, ড. সিউতি সবুর, শিক্ষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, রোজীনা বেগম, গবেষক, তাঞ্জিম ওয়াহাব, কিউরেটর, তাসলিমা আখতার, আলোকচিত্রী, শিক্ষক, পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইন্সিটিউট, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; অধ্যাপক সাইদ ফেরদৌস, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; গোলাম মোর্তোজা, সাংবাদিক; অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; ওমর তারেক চৌধুরী, লেখক-অনুবাদক; নাসরিন সিরাজ, নৃবিজ্ঞানী ও চলচ্চিত্রকার; ড. রুশাদ ফরিদী, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; অরূপ রাহী, সঙ্গীতশিল্পী, লেখক; ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; পার্সা সাঞ্জানা সাজিদ, লেখক, গবেষক, শিক্ষক, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়; নাজনীন শিফা, পিএইচডি গবেষক; ঋতু সাত্তার, শিল্পী; মুনেম ওয়াসিফ, শিল্পী; অধ্যাপক আজফার হোসেন, শিক্ষক, গ্র্যান্ড ভ্যালি স্টেট ইউনিভার্সিটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র; ড. সায়দিয়া গুলরুখ, গবেষক ও সাংবাদিক; সায়েমা খাতুন, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; কবিতা চাকমা, মানবাধিকারকর্মী; হাসনাত কাইয়ুম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; নাসরিন খন্দকার, পিএইচডি গবেষক; সাদাফ নূর, পিএইচডি গবেষক, ল্যাঙ্কাসটার বিশ্ববিদ্যালয়; মোহাম্মদ আলী হায়দার, প্রধান নির্বাহী , বটতলা; ফিরোজ আহমেদ, লেখক, রাজনীতিবিদ, গণসংহতি আন্দোলন; মেহজাবীন রহমান, শিক্ষক, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়; ড. মোবাশ্বার হাসান, গবেষক এবং লেখক; সাইমুম পারভেজ, পিএইচডি গবেষক (ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি) এবং শিক্ষক, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি; আব্দুল্লাহ আল নোমান, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; সাইমুম রেজা পিয়াস, শিক্ষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়; জাকির হোসেন, প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ; মুশফিক ওয়াদুদ, গ্রাজুয়েট টিচিং এসিটেন্ট, ইউনিভা‌র্সিটি অব নেভাডা, যুক্তরাষ্ট্র; অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; রেজাউর রহমান লেনিন, গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী; রেহনুমা আহমেদ, লেখক; মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী, গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী; খাদিজা মিতু, শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
এম সাদ্দাম হোসেন পবন ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫০ পিএম says : 1
ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী দেশের একজন বুদ্ধিজীবি এবং প্রবীণ ব্যাক্তিত্ব। জীবনের শেষ সময়ে এসে তাকে এতো বড় অসম্মান জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি করা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। গণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনাভাইরাস সনাক্ত করণ কিট উদ্ভাবন করেছে তা ব্যবহার উপযোগি কি-না সে জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে ঔষধ প্রশাসনের দ্বারে গিয়েও এ নিয়ে বড় জটিলতা পোহাতে হচ্ছে। দিন রাত একাকারে গবেষনার মাধ্যমে উদ্ভাবিত কিট কতটা সফল তা পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ঔষধ প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হয়েছে এটা অবশ্যই অবমূল্যায়নকে ইঙ্গিত করে। গণ স্বাস্থ্যর উদ্ভাবিত কিট গ্রহন করে তা অধিক গুরুত্বসহ পরীক্ষা নিরীক্ষার পর রেজাল্ট জানাতে পারতো ঔষধ প্রশাসন কিন্তু বৈরিতা প্রত্যাশিত নয়। এ ধরনের বৈরি প্রভাবের কারনে গবেষনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে বিজ্ঞানীরা। দেশে মহামারির এই পরিস্থিতিতে কিট উদ্ভাবনের আগে অনুমতির বিষয়টি মানবিক কারনে মার্জনায় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে কিট পরীক্ষা নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়াই শ্রেয়। পরীক্ষা নিরীক্ষায় যদি কিট ব্যবহার উপযোগী হয় সে ক্ষেত্রে আমলে নেবেন আর যদি কিট ব্যবহার অনুপযোগী বলে প্রতীয়মান হয় তাহলে কিট উৎপাদন না করার নির্দেশনা দেবেন এ নিয়ে এতো ঝামেলা কেন? ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে তার জীবনের শেষ সময়ে এসে বেদনাক্রান্ত পরিবেশ তৈরী করা অবশ্যই অসম্মান জনক।
Total Reply(1)
A Haque ২৭ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৩৪ এএম says : 2
Do you know the right procedure to an invention?It is not a matter of Bangladesh,matter of whole world.If you want to use this invented kit for detect Corona virus and result comes wrong .If this kit detect someone negative,but still bearing positive ,what will happen then?Dr. Chowdhury should talk to WHO and find out right procedure to offer this kit to Bangladesh authority.If Bangladesh allow this kit with their own decision,I think they will bring another pandemic in the world.
নমান ২৭ এপ্রিল, ২০২০, ১২:০২ এএম says : 2
শুধু ৫৫ জন নয় ৫৫ লক্ষ উদ্বিগ্ন!!!
Total Reply(0)
আবদুর রাফি ২৭ এপ্রিল, ২০২০, ১:২৩ এএম says : 1
সরকার বিদেশ থেকে আমদানি না করলে লুটপাট করবে কি করে
Total Reply(0)
Shakhayet ২৭ এপ্রিল, ২০২০, ৪:২৫ এএম says : 1
উদ্ভাবনী ক্ষমতা যাই হোক দলীয় পরিচয় না থাকলে আপনি থেমে যান। অন্তত সরকারি অপমান থেকে বাঁচতে পারেন।
Total Reply(0)
সজল ২৭ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৫৫ এএম says : 1
এখানেও আমলা জটিলতা?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন