আছে ঢেউ। ঠান্ডা হাওয়া। পাখির ঝাঁক। সকালে সোনা রোদ। গোধূলী বেলায় রক্তিম আভা। তবুও চারিদিকে সুনসান। এ যেন অচেনা পতেঙ্গা শহর।
দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট পতেঙ্গা সৈকতের এমন চিত্র কখনো দেখেনি কেউ। কোন গোর্কি নয়, মহামারী করোনার ছোবলে এমন জনমাবনহীন পতেঙ্গা।
লুসাই কন্যা কর্ণফুলীর মোহনা, যেখানে তীরে আছড়ে পড়া সমুদ্রের ঢেউ। আদিগন্ত বিস্তৃত বালুকাময় সৈকত। দূরে বঙ্গোপসাগরে সারি সারি বিদেশী জাহাজ। সবই আছে, নেই শুধু সৌন্দর্য পিয়াসী পর্যটক।
যতদূর চোখ যায় শুধুই খাঁ খাঁ শূণ্যতা। নেই সাগর থেকে মোহনায় ছুটে চলা স্পিডবোট, নৌকা-সাম্পান। নেই ফটোগ্রাফার, হকারদের হাকডাক। পর্যটকদের নিয়ে ছুটে চলা ঘোড়াগুলোও নেই আশে পাশে।
সৈকতে গড়ে উঠা মার্কেটে তালা। পর্যটন হোটেল মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ। বেকার হাজার হাজার মানুষ।
সাগরে গর্জনেও যেন ভিন্ন সূর। বিরহের বেদনা, করুণ মুর্ছনা। অসিম শূণ্যতায় হাহাকার নিয়েই দূরে দাঁড়িয়ে বিদেশী জাহাজের সারি। পর্যটক নিয়ে ছুটে চলা স্পিডবোট নেই।
তবে ছোট বড় জাহাজের আনা গোনা আগের মতোই আছে। জোয়ারের সময় চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে আসা যাওয়া করছে বড় বড় জাহাজ। কর্ণফুলীর দুপাড়ের ব্যস্ততা নেই আগের মতো। বন্ধ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর।
পনের নম্বর ঘাটে যাত্রীদের আনা গোনা কম। এ পাড়ে দাঁড়িয়ে ওপারের ভারী শিল্প কারখানা দেখা যায়। কাফকো, সিইউএফএল, মেরিন একাডেমি। তবে সেখানেও নেই ব্যস্ততা। নেভাল সৈকতের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যে সবই আছে, নেই শুধু মানুষ। পতেঙ্গাকে ঘিরে মেগা প্রকল্পগুলোর কাজও বন্ধ। কর্ণফুলী টানেল, আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সবকিছু বন্ধ। বারো নম্বর ঘাটে নৌবাহিনীর বোটক্লাবে যেন কেউ নেই। সে ঘাটে বাঁধা আছে প্রমোদ জাহাজ। পাশে বিমান বাহিনীর বে-ভিউ রেস্টুন্টে নীরব।
স্তদ্ধ পতেঙ্গার মানুষের জীবনযাত্রাও। সংক্রমণ এড়াতে মানুষ ঘরেবন্দি। সুযোগ পেলেই দেশের নানা প্রান্তের মানুষের মতো যারা ছুটে যেতেন সাগর তীরে তারা দারুন মিস করছেন পতেঙ্গাকে। বিশেষ করে কিশোর তরুন যাদের দিনের একটা সময় কাটতো সৈকতে, তাদের মন পড়ে আছে সেই ঝাউতলায়।
বদলে যাওয়া করোনাকালে বৃহত্তর পতেঙ্গার মানুষের জীবনে বন্দিদশা। প্রয়োজনে যারা ঘরের বাইরে আসছেন তারাও ফিরছেন দ্রæত। কিছু ওষুধের দোকান কাঁচাবাজার খোলা। বাকি সবকিছু বন্ধ। এখানেও কর্মহীন হাজারো মানুষ নীরব কান্না।
এতো এতো শূণ্যতা আর নীরবতার মধ্যেও প্রকৃতি বসে নেই। ভিন্ন এক রূপে সাজছে পতেঙ্গা সৈকত। সেখানে নেই দূষণ, উৎপাত। এই সুযোগে ডানা মেলেছে হাজারো সামুদ্রিক পাখী। গাছে গাছে সবুজের ঢেউ, ফুটছে হরেক রঙ্গিন ফুল।
নানা রকম প্রাণির দেখা মিলছে সাগরে। সৈকতের জঞ্জাল মুছে নিয়ে গেছে সাগরের ঢেউ। একদিন দুঃসময় কেটে যাবে। আবার ফিরবে সুদিন। সেদিনের প্রস্তুতিই যেন চলছে পতেঙ্গা সৈকতজুড়ে।
।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন