সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ফটিকছড়ি’র নিহত শিশু দিহান পরকীয়ারই বলি!

নাতীর শোকে নানীর মৃত্যু স্ট্রোকে

সৈয়দ জাহেদুল্লাহ কুরাইশী, ফটিকছড়ি থেকে | প্রকাশের সময় : ২৯ এপ্রিল, ২০২০, ৭:৪২ পিএম

ফটিকছড়িতে নিহত শিশু আব্দুল্লাহ আল দিহান (৪) জেঠা-মায়ের পরকীয়ারই বলি হয়েছে। তারই আক্রোশে আপন জেঠি উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে তাকে নৃসংশ কায়দায় খুন করে। গত রোববার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার পাইন্দং ইউপির হাজী আবুল হোসেন বাড়ীতে এ লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছিল। অপর দিকে নাতীর শোকে বুধবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে নানীও মারা গেছে স্ট্রোকে। এখন দু’বাড়ীতেই শোকের মাতম চলছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফটিকছড়ির পাইন্দং ইউপির হাজী আবুল হোসেন বাড়ীর হাজী আব্দুল জলিলের দু’পুত্র; তিন কন্যা রয়েছে। প্রথম পুত্র কাতার প্রবাসী আবুল হাসেম (৪০) ২০১১ সালে পার্শ্ববর্তী সুন্দরপুর ইউপির আজিমপুর চালইন্যাপাড়ার প্রবাসী মোহাম্মদ ইয়াকুবের কন্যা রেশমাকে বিয়ে করে এবং তাদের ঔরসে আব্দুল্লাহ আল মাহের (৪) ও জান্নাতুল মাহা (৮) নামীয় দু’সন্তান রয়েছে। অপর পুত্র দুবাই প্রবাসী দিদারুল আলম ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারী পার্শ্ববর্তী উত্তর রাঙ্গামাটিয়ার চেঙ্গুলকূলস্থ আলীঞ্জা বাপের বাড়ীর রশিদ আহমদের কন্যা জনি আকতারকে বিয়ে করে এবং তাদের ঔরসে নিহত শিশু আব্দুল্লাহ আল দিহান (৪) একমাত্র সন্তান ছিল।
গোপন সূত্র জানায়, নিহত দিহানের জেঠা আবুল হাসেম দীর্ঘ ৪ বছরই বিদেশে ছিল; গত ২৭ নভেম্বর দেশে ফিরে। বিদেশে থাকাকালে ছোট ভাইয়ের বউ জনির সাথে মোবাইলে কিংবা ভিডিও কলে কথা হতো এবং সম্পর্ক পরকীয়ায় রূপ নেয়। দেশে ফেরার পর ভাসুর হাসেমের সাথে দিহানের মা জনি’র সম্পর্ক শারীরিক পর্যায়ে চলে যায়। এটি হাতে-নাতে ধরতে পেরে হাসেমের স্ত্রী রেশমা দিহানের মা জনি’র উপর চটে যায়। শুরু হয় রেশমা-স্বামী-জা জনি’র ত্রি-মূখী কলহ। এরিমধ্যে দিহানের পিতা দিদার গত জানুয়ারী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাড়ীতে ফিরে এবং বিশ্বব্যাপী করোনালকডাউন শুরু হলে দিহানের বাবা দিদার গত মার্চ মাসের শেষের দিকে দুবাই চলে যায়। ফের শুরু হয় ভাসুর হাসেম আর দিহানের মা জনি’র পরকীয়া। গত ৯/১০ এপ্রিল (সম্ভবত শবে বরাত রাতে) এ নিয়ে দু’জা রেশমা-জনি’র মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ রেশমা দিহানের মা জনি’র গায়ে গরম পানি ঢেলে দেয়। এতে জনি’র ডান/বাম উরু এবং হাত দগ্ধ হয়। তারপরও স্বামী হাসেম আর জা জনিকে কোন ভাবেই ঠেকাতে না পেরে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠে রেশমা এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকে সে। অবশেষে গত রোববার (২৬ এপ্রিল) সকাল ১০টা নাগাদ স্বামৗী হাসেম যখন ঘুমাচ্ছিল এবং জা জনি যখন শয়ন কক্ষে কোরআন তেলোয়াত করছিল; ঠিক সে সময় ঘরে খেলা করারত দিহানকে কৌশলে কোলে তুলে বাধরুমে নিয়ে তার মূখ বেঁধে ফেলে এবং তরকারী কাটার ধারালো ছুরি দিয়ে ওখানে দিহানের শরীরে উপর্যুপরি ১৬টি ছুরিকাঘাতে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে বাথরুমে সব রক্ত নিজ হাতে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে লাশ ঘটনাস্থলের পেছনে একটি পরিত্যক্ত লাকড়ি ঘরে শুকনো পাতা দিয়ে লুকিয়ে রাখে। ছেলেকে অনেক্ষণ ঘরে দেখতে না পেয়ে দিহানের মা-সহ পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। পরে পৌনে এক ঘন্টার মাথায় তার মা পেছনের একটি পরিত্যক্ত লাকড়ী ঘরে নাড়িভুঁড়ি বের হওয়া অবস্থায় তার লাশ খুঁজে পায়। এরপর পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। হত্যাকান্ডের পর দিহানের মা জনি আক্তার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করে। মামলার সূত্র ধরে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দিহানের পরিবারের সকল সদস্যদের থানা হেফাজতে নেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা বুঝতে পেরে দিহানের জেঠি রেশমী আক্তারকে আটক করে পুলিশ। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে শিশু দিহানকে সে নিজেই হত্যার দায় স্বীকার করে। স্বীকারোক্তিতে ঘাতক রেশমী আকতার (২৫) জানায়, দিহানের মায়ের সাথে পারিবারিক কলহ চলছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জা’র বুক খালি করার মানসে সে দিহানকে নৃসংশভাবে খুন করে।
এদিকে নিহত দিহানের ফাতেহা উপলক্ষে বুধবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে তার মায়ের সাথে নানী বেদুরা বেগমও তাদের বাড়ীতে যায়। দিহানের ফাতেহা প্রস্তুতির সাথে চলছিল মা-নানীর কান্নাকাটিও। এরি এক পর্যায়ে শোকে মূহ্যমান নানী বেদুরা বেগম (৫২) স্ট্রোক করে মাটিতে লুটে পড়ে দিহানদের ঘরেই। দ্রুত তাকে নাজিরহাটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথেই তার মৃত্যু ঘটে। ৪ দিনের মাথায় নাতী-নানীর মৃত্যুতে এখন দু’বাড়ীতেই শোকের মাতম চলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
রাশেদ ২৯ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৪৫ পিএম says : 0
আপনারা মৃত মানুষকে নিয়ে মিত্যা সংবাদ প্রচার করেন। এইকানে পরকীয়ার কোন সাবজেক্ট নে। টাকা খাইচেন বের করব।
Total Reply(0)
মোজাম্মেল হক শাকিল ২৯ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৪৭ পিএম says : 0
Mohammed Ziahoque Sumon ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে ভাশুর.....? আর যে মেয়ে কোরান তেলাওয়াত করছিল সে শবে বরাতের রাতে এসব করবে মনে হয় না, কেমন জানি ঝঠলা মনে হয়.....
Total Reply(0)
মোজাম্মেল হক শাকিল ২৯ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৪৭ পিএম says : 0
ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে ভাশুর.....? আর যে মেয়ে কোরান তেলাওয়াত করছিল সে শবে বরাতের রাতে এসব করবে মনে হয় না, কেমন জানি ঝঠলা মনে হয়.....
Total Reply(0)
মুহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ ২৯ এপ্রিল, ২০২০, ১০:৪৯ পিএম says : 0
সামাজিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়। ব্যক্তি,পরিবার,সামাজিক জীবনে ধর্মীয় মূল্যবোধ এ অবক্ষয় ঠেকাতে পারে। পরিশেষে নিহত "দিহানের" আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর পরিবার পরিজন সাথে গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
Total Reply(0)
মুহাম্মদ নওশেদ ২৯ এপ্রিল, ২০২০, ১১:১২ পিএম says : 0
টাকা খেয়ে একটা হত্যাকে পরকিয়ার বলি বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। যাতে মামলায় রেশমির সাজা কম হয়। আপনারা সাংবাদিক নামের জাতির কলংক। সাদকে কালো আর কালোকে সাদা বলে চালিয়ে দেওয়ায় আপনাদের কাজ।
Total Reply(0)
Rashed ২৯ এপ্রিল, ২০২০, ১১:২৭ পিএম says : 0
কি হয়েছে না হয়েছে,মহান অাল্লাহ ভালো জানেন,, এমন কিছু হয়েছে,হত্যাকারী পুরোপুরি মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। হত্যার মোটিভেট এমনি মনে হচ্ছে।
Total Reply(0)
Rashed ২৯ এপ্রিল, ২০২০, ১১:২৮ পিএম says : 0
কি হয়েছে না হয়েছে,মহান অাল্লাহ ভালো জানেন,, এমন কিছু হয়েছে,হত্যাকারী পুরোপুরি মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। হত্যার মোটিভেট এমনি মনে হচ্ছে।
Total Reply(0)
Ziaul ২৯ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৪২ পিএম says : 0
খুনিকে বাচানোর কৌশল অবলম্বন।। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে খুনিকে বাচানোর চেষ্টা।। আপনার বিবেক এর কাছে প্রশ্ন যেই দিন খুন হয়েছে সেইদিন জবানবন্দিতে সব কিছু বলেছে।। পরকিয়ার কথা বলেনি কেন।। খুনিকে বাচানো জন্য আপনার অপচেষ্টাই সত্য চাপা তাকবে না।। চার দিন পর তাদের কাছ থেকে কত টাকা নিয়ে বিক্রিত হয়েছেন।। ৷ আর কয়টা খুন হলে আপনাদের মিথ্যা বর্জন করবেন।।
Total Reply(0)
Ziaul Alam ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ১:৪০ পিএম says : 0
ভাই খুনি খুন করে স্বীকার করছে, মাঝখানে আপনি মিথ্যা পরকীয়া রটাইয়েন না
Total Reply(0)
অচিন পাখি ১১ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৬ পিএম says : 0
ছেলে মরেছে তাই এত সমবেদনা। মেয়ে মরলে উল্টো খুনিদের নয় বরং মৃতের দোষ খোঁজা হত। অথচ মৃতের দোষ খোঁজা মানেই গিবত অর্থাৎ পরনিন্দা। আমি জানি যে তারা বেশি না হলেও একটু এ বিষয়ে চর্চা করে। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে তারা এ বিষয়টি ভুলে যায়। উল্টো তারা মেয়েদের গিবত অর্থাৎ কুৎসা রটিয়ে বেড়ায়। এরাই মুনাফিক। যারা পরকাল সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও জেনে শুনে পাপ কাজ করতেই থাকে। এরাই প্রকৃত মালাউন। এমনকি এরা বাস্তব জগতের বেশ্যা পুরুষও।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন