স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়ণ কার্যক্রম (জেনারেল রি-অ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রম) গত প্রায় ২৬ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এক সিটি দুই সিটিতে রূপান্তর হওয়ার পরও এ কার্যক্রমে কোনো প্রশাসক হাতে নেয়নি। তারও আগে মেয়র এবং ওয়ার্ড কমিশনারগণ ভোটের রাজনীতির স্বার্থে একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত জেনারেল রি অ্যাসেসমেন্টের কার্যক্রম থেকে বার বার সরে আসতে হয়েছিল। আইনগতভাবে অত্যন্ত জটিল ও কঠিন বলেই এ কাজে অতীতে কেউ হাত দিতে সাহস করেনি বলে জানা গেছে। তবে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র আনিসুল হক নির্বাচিত হওয়ার পর জেনারেল রি-অ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রমটি নতুন করে শুরু করেন। রাজস্ব আদায়ের নতুন রেকর্ড সৃষ্টির পাশাপাশি নগরীতে পুরনো এবং নতুন বাসা-বাড়ির ধার্যকৃত হোল্ডিং ট্যাক্সের সমতা আনার জন্যই তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের শুরুতেই ইতোমধ্যে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পলিসিগত ভুলসহ অনভিজ্ঞ লোকের হাতে এ দায়িত্ব দেয়ার কারণে এ উদ্যোগটির সফলতা নিয়েও অনেকেই সন্দিহান। পুরনো এবং নতুন বাসা-বাড়ির ধার্যকৃত হোল্ডিং ট্যাক্সের সমতা আনায় জেনারেল রি-অ্যাসেসমেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ভূগোলবিদ ও জুনিয়র কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন মিয়াকে। রাজস্ব বিভাগের উপ-প্রধান রাজস্ব (হোল্ডিং) কর্মকর্তার পদে এমন একজন অনভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে পদায়ন নিয়ে ডিএনসিসিতে চলছে ক্ষোভ এবং অসন্তোষ। কারণ এ কর্মকর্তাকে পদায়নের আগে ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার মতামত পর্যন্ত নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মমতাজ উদ্দিন বলেন, রাজস্ব কর্মকর্তার পদে মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন মিয়াকে উপ-প্রধান (ডিসিআও হোল্ডিং) পদায়নের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। বিভাগীয় প্রধান হিসেবে আমার মতামত নেয়া হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, গত ১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে ডিএনসিসির উত্তরার আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে জেনারেল রি-অ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। কিন্তু নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-প্রধান (ডিসিআও হোল্ডিং) রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন মিয়ার জেনারেল রি-অ্যাসেসমেন্ট কি জিনিস সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণা আছে বলে আমার মনে হয় না। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে অভিজ্ঞ লোকের হাতে দায়িত্ব না দেয়ার কারণে মেয়রের গৃহীত এ উদ্যোগটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু মেয়রের এই উদ্যোগটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারলে ডিএনসিসির রাজস্ব আদায় বেড়ে যাবে একশতগুণ। যার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে কমপক্ষে তিন হাজার কোটি টাকা। ফলে ডিএনসিসির উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনায় বার্ষিক বাজেট করতে সরকার কিংবা দাতা সংস্থার কাছে আর হাত পাততে হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে ডিএনসিসির রেকর্ডে এক লাখ ৯০ হাজার ৩৯১টি হোল্ডিং রয়েছে। এর বাইরে আরো প্রায় ১০ হাজাার হোল্ডিং এখনো ট্যাক্সের আওতার বাইরে রয়েছে। হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে প্রায় দুই শত কোটি টাকার। এমতাবস্থায় একজন অনভিজ্ঞ কর্মকর্তার কীভাবে ডিএনসিসির পুরনো এবং নতুন বাসা-বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স সমতায় আনার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত দেবেন এই ধরনের নানা প্রশ্ন উঠেছে। জেনারেল রি-অ্যাসেসমেন্ট কাজটি এতই জটিল, যে অভিজ্ঞ কর্মকর্তারাই প্রতিনিয়ত নানা বাধা এবং প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছে। আর ঠিক সেই কঠিন পরিস্থিতিতে ডিএনসিসির পরীক্ষিত এবং ২১ বছরের অভিজ্ঞ একজন সিনিয়র উপ-প্রধান (ডিসিআও) রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসিন আলীকে জেনারেল রি-অ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রম শুরু হোল্ডিং ট্যাক্স বিভাগ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও রাজস্ব বিভাগে ২২/২৩ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মনিরুজ্জামান মৃধা এবং আবদুল আলিম নামে দুই জন সিনিয়র রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) এখনো নিয়োজিত রয়েছে। তাহলে কার স্বার্থে সাবেক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও ভূগোলবিদ মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন মিয়াকে উপ প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে জেনারেল রি-অ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রমের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন