স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর দেশজুড়ে বইছে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়। প্রতিদিনই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বানে জাতীয় প্রেসক্লাব, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও শাহবাগে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও সমাবেশ করছে। জেলা ও মহানগর, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে, পাড়া-মহল্লা একই উদ্দেশ্যে ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাটে দেশজুড়ে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠনের জন্য তৃণমূল নেতাদের নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। দলটি আজকের মধ্যে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দিয়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। এলক্ষ্যে তড়িঘড়ি করে এ কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছে সরকারি দলটির নেতাকর্মীরা।
এর আগে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ স্বাক্ষরিত চিঠি সংশ্লিষ্ট নেতাদের ঠিকানায় পাঠানো হচ্ছে। গত সোমবার বিভিন্ন ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নামে এই চিঠি পাঠানো হয় বলে দলীয় সূত্র জানায়।
মাহবুব-উল আলম হানিফ স্বাক্ষরিত চিঠিতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের প্রতি নির্দেশ ও আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, গত ৩ জুলাই ১৪ দলীয় জোটনেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে তার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। চিঠিতে আরও বলা হয়, এই বৈঠকে জোটনেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক দেশব্যাপী ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা এবং মহানগরগুলোতে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই কমিটির অন্যতম কাজ হচ্ছে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও জঙ্গি তৎপরতাকারীদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করা এবং তাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এই কমিটি ১৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তি, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, সাংবাদিক, কৃষিবিদ, পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, শ্রমিক, কৃষক, নারী, ছাত্র, যুবক, তরুণ সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ এবং সমন্বয়ে গঠন করবেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সভায় এই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, জেলা ও মহানগরে ১ জনকে সভাপতি, ১৭ জনকে সহ-সভাপতি, ১ জন সদস্যসচিব ও বাকিদের সদস্য, উপজেলায় ১ জনকে সভাপতি, ১০ জনকে সহ-সভাপতি, ১ জন সদস্যসচিব ও বাকিদের সদস্য, ইউনিয়নে ১ জন সভাপতি, ৬ জনকে সহ-সভাপতি, ১ জন সদস্যসচিব ও বাকিদের সদস্য এবং ওয়ার্ডে ১ জন সভাপতি, ৩ জন সহসভাপতি, ১ জন সদস্যসচিব ও বাকিদের সদস্য করে কমিটি গঠন করতে হবে। আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে কমিটি গঠন সম্পন্ন করতে হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, আপনারা জানেন যে, বিএনপি-জামায়াত জোট বিভিন্ন ছদ্মাবরণে সাম্প্রতিক সময়ে হত্যা, গুপ্তহত্যা, টার্গেট কিলিং, বিদেশি নাগরিকদের হত্যা, ধর্মীয় উপাসনাগুলোতে আক্রমণ ও বোমা হামলার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি হেয় করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসকে উসকে দিচ্ছে, নিরীহ, নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে হত্যা করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাচ্ছে। এই অপশক্তি দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকেও ব্যাহত করে দেশে সন্ত্রাসবাদ কায়েম করতে চাচ্ছে। এরা পবিত্র ধর্ম ইসলাম ও মানবতার শত্রু। দেশের গণতন্ত্র উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার শত্রু।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, তৃণমূল নেতাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে-সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী কমিটিতে এসবের পৃষ্ঠপোষকরা যেন কোনও ভাবেই স্থান না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য।
তিনি বলেন, কোনোভাবে এসব কমিটিতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকরা যেন ঢুকতে না পারে সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা খালেদা জিয়া এখন ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র করছেন।
এদিকে, গত ৮ জুলাই বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের যৌথ সভায় ১২ জুলাই থেকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি করে কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহিত করার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। ওই সভায় নানক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা বা থানা থেকে জেলা শহরের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি’ করার আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহে আলম মুরাদ বলেন, যারা ধর্মের নামে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করছে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। এ জন্যই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা-উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এ কমিটি দেশের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থীদের খুঁজে বের করবে এবং আইনের হাতে সোপদ করবে বলে জানান মুরাদ।
এ বিষয়ে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী কর্ণেল ফারুক খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন জাতি ইতিমধ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল রাজনীতিবিদদের সঙ্গে শান্তিপ্রিয় সাধারণ নাগরিকদের যে ঐক্য তাকে ধরে রাখতে হবে। কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। ঢাকা মহানগরীর আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী ত্যাগী ও যোগ্য। তাই দায়িত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক ভেবে চিন্তে দেয়া হয়েছে। তবে দায়িত্ব নিয়ে কেউ দায়িত্ব পালন না করলে সংগঠন তার জন্য বসে থাকবে না। নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করবে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নির্দেশ মোতাবেক জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠন শুরু করেছে ঢাকা মহানগরের অন্তর্গত বিভিন্ন থানা আওয়ামী লীগের কমিটিগুলো। ডেমরা থানা আওয়ামী লীগ গত বুধবার দুপুরে সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান মোল্লার নেতৃত্বে কমিটি গঠন করেছে। তিনি জানান, আমানউল্লাহ বেপারীকে সভাপতি এবং মোমিনুল মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে ডেমরা ইউনিয়ন, হাজী শাহাবউদ্দিনকে সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা তরিকুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে সারুলিয়া ইউনিয়নসহ সবক’টি ওয়ার্ডে এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার নির্দেশে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। অপরদিকে মঙ্গলবার দুপুরে যাত্রাবাড়ি মালঞ্চ কমিউনিটি সেন্টারে যাত্রাবাড়ি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ মুন্নার নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মুন। ৪৮ নং ওয়ার্ড সভাপতি গিয়াস উদ্দিন গেসুর সভাপতিত্বে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কমিশনার আবুল কালাম অনু, ৪৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান, সাধারণ সম্পাদক গাজী শামীম, ৫০ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোসলেউদ্দিন আহমেদ, মাতুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শান্তুনুর খান শান্ত, ধনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক বাকের, সাধারণ সম্পাদক একে খান জয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন