আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে নতুন বছরে আবারো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে খুলনার টেন্ডার সিন্ডিকেট। গত এক মাসে কয়েকটি সিন্ডিকেটে অর্ধশত কোটি টাকার টেন্ডার দফারফা করে নিয়েছেন তারা। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন (পিপিএ), ২০০৬ ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর), ২০০৮ যথাযথভাবে অনুসরণ না হওয়ায় খুলনায় দরপত্র নিয়ে সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাত্ম্য চলছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খুলনাঞ্চলের উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডের। উল্লেখ্য গেল বছরের ১৩ ডিসেম্বর ‘দৈনিক ইনকিলাব’-এ ২০১৫ সালের টেন্ডার সিন্ডিকেট ‘চিত্র ছাপা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ, গত সোমবার খুলনায় টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের ডরমেটরি ও জুটশেড ভবন নির্মাণের ১০ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ আওয়ামীলীগ সমর্থিত ঠিকাদাররা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। খুলনার একজন প্রভাবশালী নেতার নির্দেশে রবিবার রাতেই যুবলীগ নেতারা সাধারণ ঠিকাদারদের কাছ থেকে সিডিউল ছিনিয়ে নেয়। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারাদেশে ৪টি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে গণপূর্ত বিভাগ গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর খুলনার ইনস্টিটিউটের জন্য দু’টি ভবন নির্মাণের দরপত্র আহŸান করেছিল।
গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সারওয়ার জাহান জানান, প্রথম গ্রæপে মেসার্স বদরুল ইকবাল লিমিটেড এবং দ্বিতীয় গ্রæপে তমা কন্সট্রাকশন নামের একটি করে ফার্ম সিডিউল জমা দিয়েছেন। সিডিউলগুলো পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ও প্রকল্প পরিচালক শেখ ইউসুফ আলীর দপ্তরে পাঠানো হয়। তিনিই এ ব্যাপারে তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন। এরআগে, গত ১৩ জানুয়ারি খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) ২২ কোটি ৯ লাখ টাকার টেন্ডার শিডিউল জমা দিতে সাধারণ ঠিকাদারদের সশস্ত্র বাঁধা দেয় ক্ষমতাসীনরা। খুলনার শিরোমনি শিল্পাঞ্চল মেইন রোডের ৯ কিলোমিটার রাস্তার পূনর্নিমাণের প্রকল্পটির গত বছরের ১০ ডিসেম্বর উন্মুক্ত টেন্ডার আহŸান করেছিল কেডিএ। টেন্ডার শিডিউল জমা দেবার শেষদিনের সকাল থেকেই কেডিএ ভবনের চারিপাশে সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের শীর্ষ একজন নেতা ও মহানগর যুবলীগের যুগ্ম-আহŸায়কের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক অস্ত্রধারী ক্যাডার সাধারণ ঠিকাদারদের শিডিউল জমা দিতে বাঁধা দিয়েছিল। তবে প্রকল্প পরিচালক কেডিএ’র সহকারী প্রকৌশলী মোরতোজা আল মামুন বলেন, ‘অফিস কক্ষের বাইরে কেউ কাউকে বাঁধা দিয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। তবে অফিসের মধ্যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আর্ক এমডিজেভি, এসএমএমপিএস কনসেভিয়ার এবং ডিএমকো নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের তিনটি শিডিউল জমা পড়ে।’ কেডিএ’র তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মোঃ সাবিরুল আলম বলেন, আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। আবার, গত ২৮ জানুয়ারি খুলনা সিটি করপোরেশনে (কেসিসি) প্রায় ৮ কোটি টাকা ২০ লাখ ব্যয়ে অ্যাসফল্ট প্লান স্থাপন প্রকল্পের টেন্ডারটি আওয়ামী লীগ সমর্থিত ঠিকাদার সিন্ডিকেটে দফারফা করেন। প্রথম দু’দফা পুনঃদরপত্রের পর তৃতীয় বারও কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে আওয়ামী লীগের নেতার প্রতিষ্ঠানকে কাজটি পাইয়ে দেন। শিডিউল জমা দেবার শেষদিনে সদর থানা ও সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দু’জন নেতার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা নগরভবনে সশস্ত্র পাহারা বসিয়েই কাজটি বাগিয়ে নেন।
প্রকল্প পরিচালক ও কেসিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আজিজ বলেন, ‘দাখিলের শেষ দিনে তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শিডিউল জমা পড়ে। অস্ত্রের মহড়া ও সিন্ডিকেট বা শিডিউল জমা দিতে বাঁধার কোন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি।’ উপরোক্ত টেন্ডার আহŸানকারী প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, আসবাবপত্রের কাঠ অনেকেই সরবরাহ করতে পারেন। কিন্তু ভাল খাট-আলমারি তৈরি করতে পারেন একজন যোগ্য মিস্ত্রি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন