সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না, দিন দিন বাড়ছে কর্মব্যস্ততা, এক নদী পার হাজার কোস এ কথাটা আর কেউ এখন মনে করেন না। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মানুষ বিশ্বের নামীদামি দেশের চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সে দিক থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই, শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়ে হয়েছে ডিজিটাল, অনলাইন ব্যাবস্থা, কৃষিক্ষেত্রে অনলাইন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধিতে চলছে চাষ আবাদ, কৃষকদের উৎপাদিত ফসল কাটা, মাড়াই কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি।
ভুমি অফিস গুলোতে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। দেশের প্রতিটি সেক্টরে ব্যপকভাবে তথ্যপ্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে অল্প সময়ে বেশী কাজ করার, মানুষের সেবা দেয়ার প্রবনতাও বেড়েছে।
সে দিক থেকে পিঁছিয়ে নেই চর অঞ্চলের মানুষও, তাদের মাঝে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, হচ্ছে রাস্তা ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভবণ, যাচ্ছে বিদ্যৎ, সোলার প্লান্ট আরও কত কিছু। নদী পারা পারের নৌকায়ও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, দাঁড়ের পরিবর্তে শ্যালোমেশিন চালিত ফ্যান, যেখানে পূর্বে নৌকা চালাতে মাঝিসহ ৩ জন মানুষের প্রয়োজন হত, ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লাগত নদী পার হতে সেখানে বর্তমানে ১ জন মাঝি দিয়ে নৌকা চালানো হচ্ছে, নদী পার হতে সময় লাগে মাত্র ২৫ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট। নদী পার হয়ে বহু দুর দূরান্তের গ্রাম গুলিতে পৌঁছাতে একমাত্র পায়ে হেঁটে যেতে হত, হাঁটতে হত ঘন্টার পর ঘন্টা, পায়ে ফুসকা পড়ে যেত, চলার পথে বিশ্রাম নিতে হত অনেক বার, ছোট শিশু, মহিলাদের নিয়ে সমস্যা হত বেশী, একটু যাদের অবস্থা ভাল তারা ব্যবহার করা হতো গরু মহিষের গাড়ি, উপরে থাকত টাঁপর দেখত খুব সুন্দর লাগত, বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য গাড়িগুলো সাজানো হত রং, রঙিন কাগজ দিয়ে, আর পটকা ফুটাতে ফুটাতে শব্দ করে জানান দিত বিয়ের বহর আসছে। সেগুলি এখন রুপকথার গল্প ও বইয়ের পাতায় লিখিত ভাবে স্থান পেয়েছে মাত্র। এখন নদীর পারের মানুষের সে অবস্থা নেই তাদের মাঝে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, চরঞ্চালের কেউ কেউ মাদক ব্যবসা সাথে জড়িত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে অবস্থার পরিবর্তন করে এপার ওপারে দুপারে গড়ে তুলেছে বিলাস বহুল একাধিক বাড়ি। বাড়ীতে রেখেছেন সদস্য প্রতি নামিদামি ব্যান্ডের মোটর সাইকেল, বাইক। একবাড়িতে ৪।৫ টি বাইক, কয়েকটি কার মাইক্রো রাখা অবস্থায়ও দেখা যায়। এদের বেশীর ভাগই ১৫ আগে ছিল কামলা, মাঝি, কৃষি শ্রমিক, গরুর রাখাল। ওই সব মানুষগুলো অল্প সময়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ, তার পর বট বৃক্ষ হয়েছেন, এ যেন যাদুর চেরাক হতে পেয়েছেন। ওই সব লোক গুলি শকের বসে এখন চরে যান, কিংবা মাদক বিরোধী অভিযান যখন জোরদার হয় তখন পুলিশ, ডিবিপুলিশ, বিজিবিসহ প্রশাসনের লোকজনের ভয়ে চরের বাড়ী গিয়ে আত্নগোপন করে থাকেন। আবার কেউ কেউ রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, পাবনা, রংপুর, সিরাজগজ্ঞ, শেরপুর, মানিকগজ্ঞ, ঢাকা, চিটাগাং, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিজদের অবৈধ কালো টাকায় নির্মিত রাজকীয় বাসায় অবস্থান করেন। আবার কেউ কেউ ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালেশিয়ায় গিয়ে আত্নগোপন করে থাকেন। সে যাই হউক না কেন? চর অঞ্চলেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া।
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চর বোয়ালমারী ঘাট, হাটপাড়া ঘাট, বিদিরপুর ঘাট, হরিসংকরপুর ঘাট, সুতাগগজ্ঞ ঘাট প্রভূতি এবং চাঁপাই নবাবগজ্ঞ সদর উপজেলার আলাতুলি, বগচর, চাটাইডুগিসহ ঘাটে যাত্রীদের নিজস্ব দামীদামি ব্যান্ডের বাইক ও যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল বা বাইক দেখা যায়।
এতে করে বাইক চালকগণ আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছে, এভাবে চলে যাচ্ছে তাদের সংসার অপর দিকে যারা যাত্রী তারাও উপকৃত হচ্ছেন। পাঁয়ে না হেঁটে স্বল্প সময়ে গন্তব্য স্থলে পৌঁছে যাচ্ছেন, কাজ শেষে ফিরে আসছেন অনেকে। রাজনৈতিক সভা সমাবেশ, ইসলামী সমাবেশ গুলি সহজে করা যাচ্ছে, সভা শেষে আগের মত ওপারে আর রাত্রী যাপন করেন না।
এ ব্যপারে কথা হয় ঠিকাদার শিক্ষক মোঃ মনিরুল ইসলামের সাথে তিনি বলেন, ভাড়ায় চালিত বাইকের কারণে মানুষ সহজে পদ্মা নদী পার হয়ে গ্রামে, মাঠে যাচ্ছেন, যাত্রীদের উপকার হচ্ছে, আমি সেখানে একটি বিদ্যালয়ের ভবণ করেছি, এতে করে প্রকৌশলীদের কাজ পরিদর্শনের জন্য নিয়ে গেছি ভাল হয়েছে। তিনি আরো বলেন দলীয় কোন প্রোগ্রাম হলে ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি মহোদায়কে আমার বাইকে করে নিয়ে গেছি চরাঞ্চলের সমাবেশ গুলোতে। উপজেলার চেয়ারম্যানও গেছেন আমার গাড়িতে।
সাটারিং মিস্ত্রী দুরুল হোড়া বলেন, ভাড়ায় চালিত বাইক থাকার কারণে আমাদের কাজ করতে সুবিধা হয়েছে নদী পার হয়ে খুব তাড়াতাড়ি গিয়ে কাজে যোগ দিতে পেরেছি। দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সানাউল্লাহ বলেন, চরের ব্যপক উন্নয়ন হয়েছে, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভবণ, ফ্লাড সেন্টারসহ অনেক উন্নয়ন হয়েছে, ভাড়ায় চালিত বাইক মানুষের উপকার হচ্ছে, প্রশাসনের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা এখন চরে নেই তারা প্রশাসনের ভয়ে পালিয়ে বাড়াচ্ছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন