সাতক্ষীরার সংগৃহিত লালারস নষ্ট হচ্ছে খুলনার ল্যাবে। এছাড়া,পরীক্ষার রিপোর্টও আসে দেরিতে। এনিয়ে অভিযোগ তুলছেন খোদ চিকিৎসকরা। বলছেন, লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হলেও তা দিনের পর দিন সেখানে পড়ে থাকে। ফলে নষ্ট হয়ে যায় লালারসের মান।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, করোনা সংক্রমন সারাদেশে ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ায় লালারসের নমুনা পরীক্ষায় জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সাতক্ষীরায় প্রথম দিকে ২০/২২ জনের নমুনা ঢাকাতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে খুলনায় ল্যাব চালু হলে সেখানে পাঠানো হচ্ছে সংগৃহিত লালারস। দুই মাস ধরে সাতক্ষীরা থেকে ৪৩৮ জনের লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষীর জন্য পাঠানো হয়েছে ল্যাবে। আর রিপোর্ট এসেছে ২২৮ জনের। এরমধ্যে এক এনজিও কর্মীর করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। তবে, ৫ দিন অতিবাহিত হলেও ওই এনজিও কর্মীর পরিবারের লালারসের কোনো রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাতক্ষীরার একজন সরকারি চিকিৎসক জানিয়েছেন,অনভিজ্ঞ ডাক্তার বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকুরিরত সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) কর্মীদের দিয়ে লালারস সংগ্রহ করা হয়। এবং ওই সংগৃহিত লালারস যে পাত্রে রেখে সিলগালা করে ল্যাবে পাঠানো হয় সেটিও যথোপযুক্ত প্রক্রিয়ায় করা হয় না। এছাড়া, ল্যাবে জমা দেওয়ার পর সেখানে কয়েকদিন অরক্ষিতভাবে পড়ে থাকে লালারস। যার ফলে সাতক্ষীরায় অনেক পজেটিভ রোগী থাকলেও তা শনাক্ত হয় না। তিনি বলেন, বিষয়টি উদ্বেগজনক। যেকোনো সময় সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমন ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের এক চিকিৎসক জানান,নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণে কিছু ত্রুটি থাকতে পারে তবে সবগুলো নয়। তিনি বলেন, ল্যাবে র্দীঘদিন নমুনা পড়ে থাকা এবং দেরিতে রিপোর্ট আশা মোটেও ভালো নয়। যতো দ্রুত রিপোর্ট পাওয়া যায়, ততোই বিষয়টি সম্পর্কে পরিস্কার হওয়া যায়।
কিভাবে নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় এবং অভিজ্ঞ কোনো ডাক্তার লালারস সংগ্রহ করেন কি-না এমন জিঙ্গাসাবাদে তিনি আরো বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে মাত্র একজন ডাক্তার রয়েছেন করোনায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তিনি অন্যদের এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর যারা টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন এসমস্ত ইপিআই টেকশিয়ানদের দ্বারাই নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এরপর ভ্যাকসিন ক্যারিয়ারের বাক্সে বরফ দিয়ে তা ল্যাবে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, ২ থেকে ৮ ড্রিগ্রি তাপমাত্রায় নমুনা ভালো থাকে। তবে, সময় পার হওয়ার সাথে সাথে বরফ গুলে যেয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এতে নমুনা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃ হুসাইন শাফায়াত বলেন, লালারস সংগ্রহে তেমন অভিজ্ঞতা না থাকলেও চলে। এছাড়া, খুলনা ল্যাবে তারা যে কিভাবে নমুনা সংরক্ষণে রাখা হয় এটা ল্যাব কর্তৃপক্ষই জানেন। তিনি আরো বলেন, নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে লিখে পাঠানোর জন্য রিপোর্ট আসতে দেরি হয়ে থাকে। তবে, আজ সোমবার খুলনা থেকে তাকে ফোনে জানানো হয়েছে যে, সাতক্ষীরার পাঠানো নমুনার মধ্যে পাঁচটি নমুনা নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের পুনরায় নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সাতক্ষীরায় গত দুই মাসে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষ সাতক্ষীরায় এসেছেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ছয়জন। বহু বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। হোমকোয়ারেন্টিনসহ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন অনেকে। আর চার শতাধিক মানুষের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন মাত্র একজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন