মহসিন রাজু, টি এম কামাল : উত্তরাঞ্চলে এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ‘পাতা পচা’ মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি ভালো বাজার মূল্য এবার মরিচ চাষিদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। প্রথমে কাঁচা মরিচ বিক্রি করে ভালো দাম পেয়ে এখন মৌসুম শেষে লাল রঙা পাকা মরিচ শুকানো হচ্ছে। যমুনা নদীর চরাঞ্চলসহ ‘মরিচ চাষ’ এর নির্দিষ্ট এলাকায় এখন বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে শুকনো মরিচের গন্ধ। বাড়ির উঠান, বালুর চরে আর ঘরের চালে শোভা পাচ্ছে লাল বর্ণের মরিচ। বগুড়ার গাবতলী, সারিয়াকান্দি, ধুনট, সোনাতলা, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, শাহজাদপুর, চৌহালী, গাইবান্ধার সাঘাটা সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি উপজেলার ঘরে ঘরে পড়েছে মরিচ শুকানোর ধুম।
বগুড়া অঞ্চলের কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যমুনা নদীর চরাঞ্চলে এবার মরিচের উৎপাদন ভালো হওয়ার পাশাপশি ও বাজারে উপযুক্ত দাম পেয়ে কয়েক হাজার প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষি এবার নিজদের ভাগ্যই বদলে ফেলেছে। মরিচ চাষিরা জানিয়েছে, ‘গত ৪/৫ বছর মরিচের দাম বাড়লেও ভালো ফলন পাওয়া যায়নি। এবার একই সাথে ভালো ফলন ও দাম পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। চাষিরা এবার কয়েক বছরের লোকসান এক মৌসুমেই পুষিয়ে নিচ্ছে।’ সিরাজগঞ্জের নাটুয়ারপাড়া, খাসরাজবাড়ী, মাইজবাড়ী, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ, মনসুরনগর, গাইবান্ধার হরিপুর, ভরতখালি, জারিয়া, কামারজানি, বগুড়ার সারিয়াকান্দির কাজলা, সোনপচা, চালুয়াবাড়ি, মানকদাইর, শংকরপুর, মাজবাড়ি, পাকুরিয়া চরের বাড়ির উঠান, ঘরের চালে ও বালুর চরে লাল টুকটুকে মরিচ শোভা পাচ্ছে। জমি থেকে দু’দফা কাঁচা মরিচ তুলে বিক্রি করে শেষ পর্যায়ে মরিচ শুকানো হচ্ছে। যমুনা নদীর দুর্গম চরজুড়ে প্রায় প্রতিটি বাড়ির উঠানে ও বালুর চরে লাল টুকটুকে মরিচ শোভা পাচ্ছে। কাজিপুরের মাজনাবাড়ী চরের আব্দুল মালেক, কাদের, কোরবান আলী, মজিবর, কোবাদ আলী, হাসিনা বানু, মেহেরুন্নেছা বাড়ির উঠানে মরিচ শুকাতে ব্যস্ত। মরিচের ঝালের ঝাঁজ ওদের কাবু করতে পারছে না। ভালো ফলন ও দাম পেয়ে মরিচের ঝাঁজকে আমলেই আনছে না তারা। প্রকৃতির অনুকূল পরিবেশে মরিচ চাষ করে ভালো ফলন পেয়ে হাসিমাখা মুখে কয়েকজন চাষি জানায়, মরিচ চাষে এবার খরচ বেশি হলেও বাজার মূল্যও ছিল বেশি। নাটুয়ারপাড়া মিলন সরকার এবার দেড় বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করে দু’দফায় কাঁচা মরিচ বিক্রি করে পেয়েছে ৩০ হাজার টাকা। শেষ দফায় যে মরিচ শুকনা করা হচ্ছে তার দামও পাওয়ার আশা করছেন, আরো ২০ হাজার টাকা। মরিচ চাষে সব মিলে তার খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। নাটুয়ারপাড়া, সোনপচা, ভরতখালি চরে বসেছে মরিচের হাট। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারী মহাজন হাট ছাড়াও জমি থেকেই প্রায় প্রতিদিন মরিচ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এবার কাঁচা মরিচের দাম ছিল নয়শ’ টাকা থেকে সাড়ে নয়শ’ টাকা মণ। চাষিদের আশা এবার শুকনা মরিচ ৪ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করা যাবে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মচির চাষে খ্যাত বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট জেলায় প্রায় ৯০ হাজার হেক্টর জমি এবার মচির চাষের আওতায় আনা হয়েছিল। ২১ হাজার মরিচ চাষি চিহ্নিত করেছে কৃষি বিভাগ। ফলনও হয়েছে আশাতীত। এবার উন্নত জাতের মরিচ চাষ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তিন দফায় দু’মাসের ব্যবধানে একই জমি থেকে তিনবার মরিচ তুলে বিক্রি করার সুযোগও পেয়েছে চাষিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন