করোনাভাইরাসের মহাদুর্যোগের মধ্যে এখন রাজধানীবাসীর আরেক অতঙ্কের নাম এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু আর চিকুনগুনিয়া। করোনাভাইরাস বিস্তারের কারণে ঢাকার দুই সিটির মনোযোগ সেদিকে বেশি চলে যাওয়ায় রাজধানীজুড়ে মশার অত্যাচার বেড়েছে। ফলে ঘরবন্দি মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। মশার কয়েল, স্প্রে ও ইলেক্ট্রিক ব্যাট ব্যবহার করেও মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। ছোট ছেলে মেয়েদেরকে মশার যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করতে অনেকে দিনের বেলাতেও ঘরে মোশারি টানিয়ে রাখছেন। এই যন্ত্রণার শেষ কোথায় কেউ যানে না। তবে ঢাকার সিটি কর্পোশেন থেকে দাবি করেছেন, তারা করোনার কার্যক্রমের পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে যাচ্ছেন।
গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীতে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর মধ্যে বেড়েছে মশার উৎপাত। গত বছর এ সময়ে এডিস মশাবাহিত রোগে প্রায় আড়াই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। অসুস্থ হয়েছিলেন লক্ষাধিক মানুষ। এ কারণে এ সময়ে মশার উৎপাতে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর ভয় বেড়েছে নগরবাসীর মনে।
ঢাকার নির্মাণাধীন ভবনগুলো মশার প্রজননের অন্যতম নিরাপদ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে বলে সা¤প্রতিক একটি জরিপে উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সচেতনতা এবং আন্তরিকতার অভাবেই মশা জন্মানোর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। দুই সিটি কর্পোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের ১০০টি এলাকায় জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে ডিএনসিসির ৪১ এবং ডিএসসিসির ৫৯টি ওয়ার্ডের মোট এক হাজার বাড়ি ও স্থাপনা ছিল এই জরিপের আওতায়।
সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। মৌসুম শুরুর আগে মার্চ মাস থেকেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে কর্মসূচি শুরু করার কথা। কিন্তু করোনাভাইরাস নিয়ে আলোচনায় মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মনোযোগ কম ছিল। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শহরের বিভিন্ন জায়গা জীবাণুমুক্ত করছেন সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা। সে কারণে মশার ওষুধ ছিটানো এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে কিছুটা ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন ইনকিলাবকে বলেন, ডেঙ্গু মৌসুম শুরুর আগেই এ নিয়ে একাধিক প্রস্তুতিমূলক সভা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মশা নিধন, জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা সঙ্কটের কারণে আমাদের চলমান কাজের গতি কিছুটা নষ্ট হয়েছে, একথা অস্বীকার করা যাবে না।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, গত বছর এই সময়ের তুলনায় এবার এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি দ্বিগুণের বেশি। সচেতনতা না বাড়লে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়ানক হবে বলে মনে করছে সংস্থাটির স্বাস্থ্য বিভাগ।
মানিকনগর এলাকার গৃহবধু সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, এ এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের লোকেরা মাঝেমাঝে মশার ওষুধ দিয়ে যায়, কিন্তু কোন কাজ হয় না। শুধু ধোয়া উড়ে আর শব্দ হয়। ডিএসসিসির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মুগদাপাড়া এলাকার বাসিন্দা রফিকুজ্জামান বলেন, এখন জ্বর নিয়ে কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে করোনা আতঙ্কে তাকে ভর্তি করছে না কর্তৃপক্ষ। করোনার সঙ্গে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটলে বিনা চিকিৎসায় লোকজন মারা যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন