করোনা পরিস্থিতির কারণে নারায়ণগঞ্জ জেলাকে লকডাউন করা হয়েছে। রূপগঞ্জ উপজেলাও লকডাউনের মধ্যে রয়েছে। এ লকডাউনের মাঝে কর্মহীন দিন পার করছে রূপগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়ার জামদানি পল্লীর প্রায় সাড়ে ৫ হাজার তাঁতী। আর মাত্র কয়েকদিন পর ঈদ। ঈদকে সামনে রেখে কোন কর্মব্যস্ততা নেই জামদানি পল্লীতে। লকডাউনের মাঝে কর্মহীনভাবেই তাঁতীদের দিন কাটছে। কাজ না থাকায় তাদের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।
ঈদের আগ মুহূর্তে নোয়াপাড়ার জামদানি পল্লীতে প্রবেশ করতেই তাঁত বুননের শব্দ শুনতে পাওয়া যেত। জামদানি তৈরির তাঁতীদের নিশ্বাস ফেলার সুযোগ থাকতো না। তারা রাতদিন জামদানি তৈরির কাজের ব্যস্ত থাকতো। ঈদের আগে এই সময়ে তাদের ব্যস্ততায় ডুবে থাকার কথা ছিল। অথচ করোনা পরিস্থিতির কারণে জামদানি পল্লীতে নিরবতা বিরাজ করছে। কোথাও কোন সারা শব্দ নেই, গান বাজনা নেই।
পল্লীতে স্থানীয় তাঁতীদের প্রায় ২৫টি স্থায়ী জামদানি বিক্রির দোকান রয়েছে। লকডাউনের কারণে এ দোকানগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ যেন এক ভূতুরে নগরী। কোন তাঁতী স্বল্প পরিসরে জামদানির কাজ করলেও বিক্রি করতে পারছেন না। তাঁত বুননের কাজ না থাকায় কয়েকজন তাঁতী রমজানে কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। আবার অনেকে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটালেও কাউকে বলতে পারছেন না।
জানা যায়, শীতলক্ষ্যা নদীপাড়ের আদ্র আবহাওয়া জামদানি তৈরির জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত। স্বাধীনতার পূর্বেই থেকে নোয়াপাড়া এলাকায় জামদানি শিল্প গড়ে উঠে। স্বাধীনতার পর থেকে জামদানি পল্লীর তাঁতীরা সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা ও জমিতে প্লট পান। জামদানি পল্লীতে প্রায় ৬ হাজার তাঁতী জামদানি শিল্পের সঙ্গে জড়িত। রূপগঞ্জের নোয়াপাড়াকে জামদানির আতুরঘরও বলা হয়ে থাকে। এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে জামদানি কিনে নিয়ে যেত। এখানে একেকটি জামদানি শাড়ি মানভেদে ২ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি হয়। জামদানি শাড়ির দাম যত বেশি হয় সেটি তৈরি করতে সময়ও তত বেশি লাগে। এছাড়া শীতলক্ষ্যা নদীর পাশ ঘেষে সপ্তাহে একদিন বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত নোয়াপাড়া ও পার্শ্ববর্তী ডেমরা এলাকায় জামদানির হাট বসে। এ হাটের দূর দূরান্ত থেকে পাইকাররা জামদানি শাড়ি কিনতে আসেন। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে সেই হাটে নেই কোন আমেজ।
তাঁতীরা জানান, তাঁত বুননের কাজ না থাকায় আয়ও বন্ধ হয়ে গেছে। সংসার চালাতে এখন দু’চোখে সরিষা ফুল দেখেছেন তারা। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উচ্চবিত্তরা মাঝে মধ্যে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে যাচ্ছেন। তবে এ খাদ্য সামগ্রী কয়েকদিন যেতে না যেতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। পরে আবার শুরু হয় তাদের খাদ্য যুদ্ধ। জামদানি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে তাঁতীরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। জামদানি পল্লী বিসিকের সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, লকডাউনের কারণে শতকরা ৯০ ভাগ তাঁতী কর্মহীন হয়ে কষ্টে দিন পার করছে। দুঃসময়ে তাঁতীদের পাশে দাঁড়াতে সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন