রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কমলাপুর যেন বিরানভূমি

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ রয়েছে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। তাই কমলাপুর রেলস্টেশনে নেই মানুষের পদচারণা। তবে পাখিদের আনাগোনা বেড়েছে। ইঞ্জিনের শব্দ, হুইসেল আর যাত্রী হাকাহাকির বদলে স্টেশনজুড়ে শালিক, চড়–ইসহ বিভিন্ন পাখির কিচিরমিচির শব্দ। হাজারো যাত্রীর ট্রেনে আসা যাওয়ায় মুখর থাকা কমলাপুর স্টেশন এখন খা খা বিরানভ‚মি যেন। স্টেশন জুড়ে এখন পাখিদের কলতান। ২৪ মার্চের পর থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ, সিগন্যাল পোস্টের বাতিও আর সবুজ হয়নি।

গতকাল রোববার রাজধানীর কমলাপুরে রেলস্টেশনে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রেলের প্ল্যাটফর্মে নেই যাত্রী, নেই শ্রমিকদের কোলাহল। একটু পর পর বেজে উঠছে না হুইসেল, নেই ট্রেনের ঝিক ঝিক শব্দ। দিন-রাত ব্যস্ত স্টেশনের চারদিকে এখন শুধুই সুনসান নীরবতা। স্টেশনে একমাসেরও বেশি সময় পড়ে আছে কয়েকটি ট্রেন।
জানা যায়, এত দীর্ঘ সময় যাত্রীবাহী ট্রেন সারাদেশে একযোগে বন্ধ থাকেনি কখনো। কিন্তু করোনাভাইরাস সে অবস্থা পাল্টে দিয়েছে। গত ২৪ মার্চ বিকেল থেকে দেশের সব রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এর পর থেকে সারাদেশে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। আগামী ১৬ মে পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ রয়েছে।
গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনের সড়কে যেখানে রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার ভিড় লেগেই থাকত সেখানে এখন নেই কোনো যানবাহন। মানবশূন্য স্টেশনের সামনের গেটে ঝুলছে তালা। ভেতরে চার-পাঁচজন নিরাপত্তারক্ষী দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৪ মার্চ বিকেল থেকে রেল চলাচল বন্ধ হয়েছে। ২৫ মার্চ থেকে স্টেশন বন্ধ। রেলের কর্মী ছাড়া কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। রেলস্টেশনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এক ব্যক্তি বলেন, কয়েক বছর ধরে স্টেশনে দায়িত্ব পালন করছি। এছাড়া এই স্টেশনে যাতায়াত করছি প্রায় ১৫ বছরের ওপরে। কিন্তু কোনো সময় এমন অবস্থা দেখি নাই, অথচ আগের বছরগুলোতে ১৫ রমজানের পর ঈদে যাত্রীরা বাড়ি যাবার জন্য রেলস্ট্রেশনে দিন রাত দীর্ঘলাইনে ভিড় লেগেই থাকত বাড়ি যাবার জন্য। একটি অদৃশ্য ভাইরাস গোটা স্টেশন নয় পুরো দেশই প্রায় জনশূন্য করে দিয়েছে। আল্লাহ জানে আগামীতে কি হবে।
কমলাপুর রেলস্টেশনের কর্মী তুষার বলেন, আমাদের ছুটি নেই। ৮ ঘণ্টা করে ডিউটি করতে হচ্ছে। কারণ রেল চলাচলা বন্ধ থাকলেও রেলের ইঞ্জিন চালু রাখতে হয়। তা না হলে ইঞ্জিন বসে যাবে। এছাড়া ইঞ্জিনের কোনো সমস্যা আছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়। তাই নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রতিটি ইঞ্জিন চালানো হচ্ছে। যাতে কোনো সমস্যা না হয়। তুষার আরও জানান, প্রতিদিন তিন শিফটে কাজ করছেন তারা। প্রতি শিফটে ৮ থেকে ৯ জন করে আছেন। ভোর ৫টা থেকে শুরু হয়েছে তাদের ডিউটি চলবে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এসময় তারা চারটি ট্রেনের ইঞ্জিন দেখভাল করবেন বলে জানান। এদিকে শুধু স্টেশন নয়, এর আশপাশ এলাকায়ও সব ধরনের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
গত ২৪ মার্চ দুপুরে রেল ভবনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেছিলেন, ২৪ মার্চ থেকেই সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সময় ৪ এপ্রিল পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে বলে জালালেও পরবর্তীতে ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়। তবে তেল, খাদ্যসহ জরুরি পণ্য পরিবহনের জন্য সীমিত আকারে ট্রেন চলবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন