চট্টগ্রামমুখী মানুষের স্রোত বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনার কারণে কাজকর্ম হারিয়ে শহর-নগর ছেড়ে গ্রামে-গঞ্জে নিজেদের বাড়িঘরে গিয়ে নিদারুন অভাব-অনটনে পড়ে গেছেন অগণিত মানুষ। পরিবারের জন্য দুই মুঠো খাবার জোগাড় করাসহ নিত্যদিনের দুঃখ-যাতনা ওদের সীমাহীন। তাদের আশা ঈদের আগে হয়তোবা চট্টগ্রাম শহরে কোথাও কোনো কাজের একটা ‘ব্যবস্থা’ হয়ে যাবে।
অনেকে আসছেন চট্টগ্রাম বন্দর ও ঘাটগুলো সচল থাকার কথা জেনে। সেখানে দিনমজুরের কাজ জুটবে এই আশায়। গার্মেন্ট কারখানাগুলো আংশিক উৎপাদনে যাবার কথা শুনেও কাজ পাওয়ার আশায় বুক বেঁধে আসছেন অনেকেই। কিন্তু করোনা-মহাদুর্যোগে কে কোথায় কী কাজ দেবে? অনিশ্চিত যাত্রায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন ওরা চট্টগ্রামে।
আয়-রোজগারহারা দিন এনে দিনে খাওয়া, রিকসা, ভ্যান ও ঠেলা চালক, ঘাট শ্রমিক, দিনমজুর, কুলি, মাঝি, হোটেল রেস্তোঁরা ও পরিবহন শ্রমিক-কর্মচারী, গ্যারাজ শ্রমিক, কারিগর, হকারসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠির কর্মজীবী মানুষজনকে গতকাল সোমবারও দেখা গেছে নগরীতে ভিড় করতে। প্রবেশপথে বাধা থাকার কথা থাকলেও তারা ফাঁক গলিয়ে অথবা মূল সড়ক মহাসড়ক এড়িয়ে চট্টগ্রাম নগরে এসে যাচ্ছেন।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দরিদ্র কর্মজীবীরা। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও পিকআপ, ট্রাক-মিনিট্রাক, মাইক্রোবাসসহ নানা যানবাহনে চট্টগ্রামে পেীঁছে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় নিম্নআয়ের নানাশ্রেণি-পেশার কর্মজীবীদের চট্টগ্রামমুখী স্রোতের কারণে করোনা সংক্রমণে বাড়তি ঝুঁকি ও উদ্বেগের কারণ তৈরি হচ্ছে। অঘোষিত লকডাউন ডিঙিয়ে বন্দরনগরীর প্রতিটি প্রবেশ মুখ এবং শহরতলী আশপাশের বিভিন্ন এলাকা অতিক্রম করে বাইরের জেলা থেকে প্রতিদিনই প্রচুর লোকজন শহরে প্রবেশ করছেন।
নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগত কর্মজীবীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছেন। পাহাড়ের পাদদেশ ও নগরীর বস্তি এলাকাগুলোতে ঠাঁই নিচ্ছেন। সেখান থেকে ভিড় জটলা, ঘোরাঘুরি ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় শহরময়। এভাবে কাজের সন্ধানে বন্দরনগরীতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মানুষের বাড়ছে ভিড়। বাড়ছে করোনা-ঝুঁকির মাত্রা।
নগরীর পতেঙ্গা, হালিশহর, বহদ্দারহাট, চকবাজার, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ, ডবলমুরিং, চান্দগাঁও, রেয়াজুদ্দিন বাজার, বাটালি রোড, স্টেশন রোড, কদমতলী, মনসুরাবাদসহ অনেক এলাকায় বিশেষত বাইরে থেকে আসা কর্মজীবী মানুষের ত্রাণ এবং কাজের সন্ধানে দিনভর ঘোরাঘুরি, ভিড়, জটলা, হুড়াহুড়িতে সামাজিক দূরত্ব কিংবা লকডাউনের উদ্দেশ্যই ভঙ্গ ও নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রামে গতকালসহ কয়েকদিনে ঈদকে ঘিরে বাইরের কর্মজীবী শ্রেণির লোকজনের আগমন প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান ইনকিলাকে বলেন, বাইরে থেকে শহরে লোকজনের প্রবেশ বন্ধে কড়াকড়ি পাহারা ও তদারকি রয়েছে। আমরা বিশেষ করে সামকানিয়া-লোহাগাড়ার মতো কয়েকটি হট স্পট থেকে যাতে কেউ নগরীতে প্রবেশ না করতে পারে এরজন্য জোর দিচ্ছি। পুলিশও সতর্ক রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন