মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

চট্টগ্রামে বাড়ছে করোনা

আক্রান্ত ৫শ’ অতিক্রম বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা

শফিউল আলম ও রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০২০, ১২:০৪ এএম

করোনাভাইরাস লাফাচ্ছে। চট্টগ্রাম পরিণত হয়েছে ভয়-বিপদের হটস্পটে। সংক্রমণ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ, টেস্ট, চিকিৎসা ব্যবস্থায় ঘাটতি-সীমাবদ্ধতা-সঙ্কট কাটছেই না। চসিক মেয়রসহ সচেতন সাধারণ নাগরিকগণ উদ্বেগ-শঙ্কার সাথে হতাশা প্রকাশ করেছেন। বিপাকে পড়েছে স্বাস্থ্য বিভাগও। লকডাউন, শাটডাউন, সামাজিক দূরত্ব শিথিল নাকি কড়াকড়ি? এ নিয়ে দৃশ্যত মাঠ প্রশাসন দোটানা ভ‚মিকায়। ভেঙে পড়েছে লকডাউন
এতে করে সামাজিক সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পেতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও তা স্বীকার করছেন। হাট-বাজার, গার্মেন্টসহ শিল্প-কারখানা, সড়ক, রাস্তাঘাট, বিভিন্ন ধরনের যানবাহনসহ সর্বত্র মানুষের ভিড়-জটলা, হুড়োহুড়ি অবস্থা। চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫শ’ অতিক্রম করে গেছে। মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৮ জনে।

প্রতিদিন ক্রমেই বাড়ছে আক্রান্ত আর মৃত্যু সংখ্যা। সেই সঙ্গে মৃত্যু ঘটছে শনাক্তহীন এবং উপসর্গহীন অবস্থায়ও। সবমিলিয়ে করোনায় উচ্চঝুঁকির অঞ্চল বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম চরম নাজুক অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
চট্টগ্রামে সার্বিকভাবে টেস্টের হার কম। এক্ষেত্রে ধীরগতি কাটেনি। ফলে শনাক্ত হওয়ার তুলনায় উপসর্গ ও উপসর্গহীন মৃত্যুহার উদ্বেগজনক। চিকিৎসকরা বলছেন, মানুষের ঘরে থাকা নিশ্চিত না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রামে একদিনে নমুনা পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ১১৪ জন করোনা সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হন সর্বশেষ বুধবার। তিন ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় তারা শনাক্ত হন। এরমধ্যে শুধু চট্টগ্রাম জেলাতেই ৯৫ জন। যা চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার এ যাবৎ সর্বোচ্চ রেকর্ড। বুধবার পর্যন্ত আক্রান্ত ৫১২ জন। চব্বিশ ঘণ্টায় পাঁচ জনসহ মারা গেছেন ২৮ জন। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৯২ জন। প্রতিদিনই চিকিৎসক, পুলিশসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এদের ৪৫ শতাংশের বয়স ৩১ থেকে ৫০ এর কোটায়। হাসপাতাল এবং বাসাবাড়িতে বাড়ছে মৃত্যু সংখ্যা। বিনাচিকিৎসায়ও মারা যাচ্ছেন।

তা সত্তে¡ও চট্টগ্রামে টেস্ট এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা, সার্বিক প্রস্তুতিই এখনো যথেষ্ট নয়। হাসপাতালে শয্যা প্রস্তুত মাত্র ২২০টি। আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ১০টি আইসিইউসহ শয্যা ১১০টি। ফৌজাদারহাটের বিআইটিআইডিতে ৩০ এবং চমেক হাসপাতালে ৩০ শয্যার আইসোলেশন এবং সীতাকুÐে বেসরকারি ফিল্ড হাসপাতালে ৫০টি শয্যা আছে।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, বর্তমানে আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতালে ৮১ জন এবং বাকি ৩১৫ বাসবাড়ি ও আইসোলেশনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনা টেস্টে ল্যাবের সংখ্যা একটি থেকে বাড়িয়ে চারটি করা হলেও রিপোর্ট পেতে চার-ছয় দিন পার হয়ে যাচ্ছে। ল্যাবে কিট এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সঙ্কট লেগেই আছে। নমুনা সংগ্রহে নেই দক্ষ লোকবল। শুধু যাদের প্রবল উপসর্গ তাদের নমুনা নেওয়া হচ্ছে। উপসর্গ কম এমন লোকজনকে নমুনা সংগ্রহ না করে ফিরিয়ে দেয়া হয়। জেনারেল হাসপাতালে একজন দিয়ে চলছে নমুনা সংগ্রহ।
বিআইটিআইডি ল্যাবে এখনও ৭শ’ নমুনার জট সৃষ্টি হয়ে আছে বলে জানান স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। এ প্রসঙ্গে বিআইটিআইডির পরিচালক প্রফেসর ডা. এম এ হাসান চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, নমুনা জট কমে আসছে। নোয়াখালীতে টেস্ট শুরু হচ্ছে। নোয়াখালী, ল²ীপুর ও ফেনী জেলার নমুনা এখানে পাঠানো হবে না। আবার কক্সবাজারের ল্যাবেও পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এতে আরও কম সময়ে রিপোর্ট পাওয়া যাবে।

সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে চট্টগ্রাম নারায়নগঞ্জকেও ছাড়িয়ে যাবে। সামাজিক সংক্রমণের কারণে এখন সব এলাকা থেকেই রোগী আসছে। অর্থাৎ সংক্রমণ ও সংক্রমিত এলাকার বিস্তার ঘটছে। এ অবস্থায় টেস্ট আরো বাড়ানো হচ্ছে। নগরীতে চারটি নমুনা কালেকশন সেন্টার এবং চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে একটি ল্যাব চালুর প্রক্রিয়া চলছে। বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম ভয়াবহ সংক্রমণের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

সরকারের উচ্চ পর্যায় বরাবর দেওয়া চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এক জরুরি পত্রে বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরী ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। তাই টেস্ট ও চিকিৎসাসেবার পরিধি বাড়ানোর বিষয়ে তিনি হস্তক্ষেপ কামনায় (গত ১২ মে) জরুরি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং স্বাস্থ্যসচিব মো. আসাদুল ইসলামের।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন