রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

করোনা থেকে মুক্তির উপায়

অধ্যক্ষ মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভি | প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি রোগ ও ঔষধ দুটিই সৃষ্টি করেছেন। তিনি প্রত্যেক রোগ-ব্যাধির চিকিৎসা ও আরোগ্য দানের উপকরণ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মহাগ্রন্থ আল কুরআনকে মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত স্বরূপ অবতীর্ণ করেছেন। সূরা বনী ইসরাইল: ৮২। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি একক ও অদ্বিতীয় তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তিনি অমুখাপেক্ষী। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমাদের সরদার, মহান নবী, আমাদের অভিভাবক, হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় বান্দা ও প্রিয় রাসূল, যিনি রোগাক্রান্ত ব্যক্তির শিফার জন্য প্রভুর কাছে প্রার্থনা করেছেন, ‘হে মানুষের প্রতিপালক মানুষের দুঃখ কষ্ট দূর করে দিন। তাকে আরোগ্য দান করুন। কেননা আপনি আরোগ্য দানকারী। তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম। 

আল্লাহ তা’য়ালাকে ভয় করুন। জেনে রাখুন, অসংখ্য রোগ-ব্যাধি যা মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করে। একমাত্র আল্লাহর রহমত ও দয়া ছাড়া এসব প্রাণঘাতী মরণব্যাধি থেকে সুস্থতা ও আরোগ্য লাভ এবং জীবনের নিরাপত্তা অর্জন করা সম্ভব নয়। করোনাভাইরাস একটি কঠিন মরণব্যাধি, সকল প্রকার সতর্কতা, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ সর্বোপরি আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের বিধি-নিষেধ মেনে চলার মধ্যে মুক্তি ও সুস্থতা নিহিত।
যখনই কোনো জাতি গোষ্ঠি ও সম্প্রদায়ে ব্যাভিচার, যৌনাচার ও অশ্লীলতার বিস্তার ঘটে তখন আল্লাহ তা’য়ালা তাদের মধ্যে ভয়ঙ্কর মহামারী রোগ প্রেরণ করে শাস্তি দেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই, মহান আল্লাহ আমাদের উপর নারাজ হয়েছেন। এ কারণেই বিশ্বব্যাপী মানব সভ্যতা আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। গোটা বিশ্ব আজ আক্রান্ত। মানবতা আজ বিপর্যস্ত। এ অবস্থা ধৈর্যশীল মু’মীনদের জন্য কঠিন ঈমানী পরীক্ষা। এ ভয়াবহ ক্রান্তিকাল ও দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে মহান রাব্বুল আলামীনের নির্দেশিত ও প্রিয় নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত পথে ফিরে আসতে কায়মনোবাক্যে আল্লাহর দরবারে অনুতপ্ত ও পাপমুক্তির ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। মহান আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেছেন, ‘মানুষের কৃতকর্র্মের দরুণ জলে স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে যার ফলে তাদের কোনো কোনো কৃতকর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান যাতে তারা ফিরে আসে।’ সুরা রূম: ৪১।
রোগ-ব্যাধি, মহামারী, দুর্ভিক্ষ, অভাব, অনটন, ধনসম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি প্রাণহানি ও বড় বড় দুর্ঘটনা, ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ঘূর্ণিঝর, অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ আল্লাহর পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকার আযাব, যা মুমীনদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। আযাব যতই কঠিন হোক, বিস্তৃত হোক, বিপদ যতই ভয়াবহ হোক, মু’মিন আল্লাহর উপর ভরসা রেখে বিপদ মোকাবিলা করবে। আল্লাহকে ও তদীয় রাসূলকে স্মরণ করবে। বিপদ থেকে মুক্তি পেতে তাওবা এস্তেগফার করবে, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবে, নবীজির উপর বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করবে। আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেছেন, ‘আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দ্বারা অবশ্য পরীক্ষা করব। সুসংবাদ দিন ধৈর্য্যশীলদেরকে।’ সূরা বাক্বারা: ১৫৫।
করোনাভাইরাস একটি মুসিবত। মহান আল্লাহ এই মুসিবত প্রথমে চীন দেশে প্রেরণ করে। অতঃপর গোটা বিশে^ তা ছড়িয়ে পড়ে। তা থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসকদের নির্দেশনা ও পরামর্শ মেনে চলতে হবে। সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, সরকারের প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর থেকে প্রচারিত সতর্ক বার্তাগুলো মেনে চলতে হবে। তবে এমন সতর্কতা কাম্য নয়, যা আল্লাহর স্মরণ থেকে মানুষকে বিরত রাখবে। মৃত্যু অনিবার্য, চিরন্তন। এ বাস্তবতাকে অস্বীকারের সুযোগ নেই। যতদিন বেঁচে থাকব জীবন মৃত্যুর মালিক আল্লাহর উপর ভরসা করে তাঁর ইবাদত থেকে বিমুখ হবো না। মহান আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর অনুমতি ব্যাতিরেকে কোনো বিপদই আপতিত হয় না। এবং যে আল্লাহকে বিশ্বাস করে তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত।’ সূরা তাগাবুন: ১০।
বিপদের ভয়াবহতা যতই মারাত্মক হোক মু’মিন আল্লাহর উপর ভরসা রেখে সতর্কতার পাশাপাশি চরম ধৈর্য্যরে পরাকাষ্টা প্রদর্শন করবে। আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেছেন, ‘যারা তাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলে, আমরাতো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তারই প্রতি প্রত্যাবর্তনকারী।’ সূরা বাকারা: ১৫৬।
করোনাভাইরাস একটি মহামারী। এ ধরনের রোগের বিস্তার যাতে ছড়িয়ে না পড়ে নবীজি সকল প্রকার সতর্কতার নির্দেশ প্রদর্শন করেছেন। হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যদি তোমরা শুনতে পাও কোনো জনপদে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে তখন তোমরা সেখানে প্রবেশ করবে না। আর যদি তোমরা সে জনপদে অবস্থান করে থাক তাহলে পলায়ন করে সেখান থেকে বের হবে না।’ সহীহ বোখারী শরীফ, হাদীস নং: ৫৭২৯।
কে কখন অসুস্থ হয়ে পড়বে কারো জানা নেই, রোগ-ব্যাধি সবার জন্য অবধারিত, অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতাকে গনীমত মনে করুন, সতর্ক হোন, সচেতন হোন, অন্যকে সচেতন করুন। স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্বন্ধে ইসলামের রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। শরীর ও মন সুস্থ থাকার নামই স্বাস্থ্য। সুস্থ মানুষ পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী। অসুস্থ মানুষ নিজের ও পরিবারের জন্য বোঝা স্বরূপ। অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা করার চেয়ে সুস্থ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি পালন করা উত্তম। সুস্থতা আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিধি-বিধান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষকে স্বাস্থ্য ও সুস্থতার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোনো নিয়ামত দান করা হয়নি।’ সুনানে নাসাঈ।
রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে নিজের জন্য পরিবার, দেশ ও জাতির জন্য দোয়া করা নবীজির সুন্নাত। হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, নবীজি এরূপ দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সুস্থতা, পবিত্রতা, আমানতদারিতা, উত্তম চরিত্র ও তাকদীরের উপর সন্তুষ্টি প্রার্থনা করি।’ কানযুল উম্মাল, খন্ড: ২, হাদীস নং: ৩৬৫০।
এভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে নবীজি ধৈর্যধারণ করার প্রার্থনা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দ্রুত সুস্থতা অর্জন, বিপদে ধৈর্যধারণ এবং দুনিয়া থেকে আপনার রহমতের দিকে প্রত্যাবর্তনের প্রার্থনা করছি।’ মুসতাদরাকে হাকীম, হাদীস নং: ১৮৭২।
আল্লাহ আমাদের সকলকে কুরআনের বরকত দান করুন, পবিত্র কুরআনের আয়াত প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ দ্বারা আমাদের নাজাত দান করুন। নিশ্চয় তিনি মহান দানশীল, রাজাধিরাজ, পূণ্যময় অনুগ্রহশীল ও দয়ালু।
লেখক: অধ্যক্ষ, মাদরাসা-এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল (ডিগ্রী) ও খতীব, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ, মোমিন রোড, চট্টগ্রাম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন