শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

চট্টগ্রামে অটোরিকশার ভাড়া নৈরাজ্য আবার মাঠে নামছে পুলিশ

প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে অটোরিকশার ভাড়া নৈরাজ্যে যাত্রীরা জিম্মি। মিটারে ভাড়া আদায় করে না চালকেরা। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার কয়েকগুণ আদায় করছে তারা। দীর্ঘদিন ধরে এই ভাড়া নৈরাজ্য চলছে। গণপরিবহন সংকটকে পুঁজি করে চালকেরা যাত্রীদের রীতিমত জিম্মি করে রেখেছে। এ অবস্থা থেকে যাত্রীদের রেহাই দিতে ফের অভিযানে নামার ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ।
তবে এ অভিযান কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। কারণ আর আগেও মিটারে সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া আদায়ে দফায় দফায় অভিযান হয়েছে। কোন সুফল মিলেনি। কিছু অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা আর কিছু আটক করেই অভিযান শেষ হয়েছে। অটোরিকশায় মিটার সংযোজন বাধ্যতামূলক করা হলেও বেশির ভাগ অটোরিকশায় মিটার বসেনি। আবার মিটার বসলেও মিটারে সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় হয়নি।
কিছুদিন পর ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে অটোরিকশা চালকদের লাগাম টেনে ধরতে তোড়জোড় শুরু হয়। আগামীকাল রোববার থেকে আবারও মাঠে নামছে পুলিশ ও বিআরটিএ। মিটার ছাড়া ও কোন ধরনের ত্রুটিপূর্ণ মিটার নিয়ে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। এ সিদ্ধান্ত কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দিহান যাত্রীরা।
সিএমপি সদর দপ্তরে সিএনজি অটো রিকশা মালিক সমিতির প্রতিনিধি ও সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়  রোববার থেকে থ্রী-হুইলার বেবী ট্যাক্সি (সিএনজি অটোরিকশা) মিটার ছাড়া কোন ধরনের ত্রুটপূর্ণ মিটার নিয়ে গাড়ি চলাচল করতে দেয়া হবে না। সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (যানবাহন) মাসুদ উল হাসানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে তিনি জানিয়ে দেন এমনিতেই মিটারবিহীন অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ, রোববার থেকে এই বিষয়ে পূর্ণমাত্রায় কড়াকড়ি আরোপ করা হবে, মহানগরীতে চলাচলকারী সব অটোরিক্সা মিটারে চলাচলের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। মিটারবিহীন অটোরিকশার বিরুদ্ধে চলমান অভিযান আরো জোরদার করা হবে, একই সাথে ত্রুটিপূর্ণ মিটারে চলাচলকারী অটোরিকশার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে মিটারে অটোরিকশা চলাচল বাধ্যতামূলক করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল সিএমপি। কিন্তু পরবর্তীতে মিটার সংযোজনের সময় এক মাস বাড়িয়ে দেয়। জানানো হয় ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নগরীর রাস্তায় মিটার ছাড়া কোন অটোরিকশা থাকতে পারবে না। এর মাস খানেক পর যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা যায় চট্টগ্রাম মহানগরীতে মিটার ছাড়া চুক্তিতে চলে ৯৮ শতাংশ সিএনজি অটোরিকশা। ৮৭ শতাংশ চালক অতিরিক্ত বকশিস দাবি করে যাত্রীদের কাছে। যাত্রীদের পছন্দের গন্তব্যে যায় না কমপক্ষে ৮৫ শতাংশ চালক। মিটার লাগানো ছাড়া চলাচল করছে ৩৩ শতাংশ। ২৮ শতাংশ সিএনজি অটোরিকশার মিটার থাকে নষ্ট। নগরীর বিভিন্ন স্পটে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।
সম্প্রতি সমিতির চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটি ‘সিএনজি অটোরিকশা মিটারে চলাচল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ’ কর্মসূচি পরিচালনা করে। নগরীর বহদ্দারহাট, শাহ আমানত ব্রিজ, কালুরঘাট, চকবাজার, লালদীঘি পাড় এলাকায় একদিন সকাল ১০ টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ৩৬২টি অটোরিকশা, ৩৮৪ জন যাত্রী ও ৩৬২ জন চালকের সাথে কথা বলেন ১২ সদস্যের পর্যবেক্ষণ দল। যার আলোকে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের যাত্রী সাধারণের বাহন হিসেবে পরিচিত সিএনজি অটোরিকশা। দেশিয় প্রাকৃতিক গ্যাসে নামমাত্র খরচে পরিচালিত হয় এ বাহনটি। কিন্তু হঠাৎ করে মালিক, চালক, সরকার মিলে যাত্রীদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে এক লাফে যাত্রী ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু ভাড়া বাড়িয়েও এই সেক্টরে সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে।
মালিক-চালকদের মনঃপূত ভাড়া ১ নভেম্বর ২০১৫ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। পুলিশ প্রশাসনের অনুরোধে দুই দফা সময় বাড়িয়ে সর্বশেষ চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে অটোরিকশা মিটারে চলাচল ও যাত্রীদের গন্তব্যে যাতায়াত নিশ্চিত করার কথা। কিন্তু, বার বার সময় বাড়ানোর পরেও সিএনজি অটোরিকশা মিটারে চলে না। যায় না যাত্রীদের পছন্দের গন্তব্যেও। এ সেক্টরটিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানি নিয়ে যাত্রী সাধারণের অভিযোগের অন্ত নেই। অতিরিক্ত দৈনিক জমা ও আনুষঙ্গিক খরচের পুরোটাই যাত্রীদের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে সাধারণ যাত্রীরা অভিযোগ করেন।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরীতে লোকসংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। লোকসংখ্যা অনুপাতে এখানে গণপরিবহনের সংখ্যা একেবারেই কম। নগরীর ১২টি রুটে যত সংখ্যক বাস মিনিবাস থাকার কথা বাস্তবে তা নেই। রুট পারমিট নিয়েও বাস মিনিবাস রাস্তায় চলে না। বিভিন্ন রুটের বাস সকাল বিকাল কারখানা শ্রমিকদের পরিবহন করতে রির্জাভ ভাড়ায় চলে যাচ্ছে। এতে করে নগরীর বিভিন্ন রুটে বাস, মিনিবাসে সংকট লেগেই আছে। যাত্রীদের অভিযোগ, এই সংকটকে পুঁজি করে তাদের জিম্মি করে রেখেছে অটোরিকশা চালকরা। চট্টগ্রাম মহানগরী বৈধ অটোরিকশা আছে ১৩ হাজারের মতো। কিন্তু অবৈধ অটোরিকশার সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।
আবেদিত (এএফআর) লিখে চলছে কয়েক হাজার অটোরিকশা। আদালতের নির্দেশে এধনের অটোরিকশা চলাচল মাঝে মধ্যে বন্ধ করা হলেও পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে চলছে এসব অটোরিকশা। এছাড়া সরকার সমর্থক পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সাইনবোর্ড ঝুলিয়েও রাস্তায় অটোরিকশা চলছে।
তবে এসব অটোরিকশাকে নিয়ন্ত্রণ করার কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। গণপরিবহন সংকটকে পূঁজি করে অটোরিকশা চালকেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে তারা। নূন্যতম ভাড়া ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে, যা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার কয়েকগুন। বেশিরভাগ অটোরিকশায় মিটার নেই। আবার কিছু অটোরিকশায় মিটার থাকলেও তা নষ্ট, কিংবা মিটারে যেতে রাজি নয় চালক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন