বঙ্গোপসাগরে গতকাল শুক্রবার সৃষ্টি হয়েছে সক্রিয় নিম্নচাপ। এটি শক্তি সঞ্চয় করছে। আরও ঘনীভ‚ত হচ্ছে। ধাপে ধাপে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সম্ভাব্য এ ঘূর্ণিঝড়ের থাইল্যান্ডের দেয়া নাম ‘আমফান’। ঘূর্ণিঝড়টির গতিমুখ হতে পারে ভারতের দক্ষিণ উপক‚ল হয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল। এমনটি আভাস আন্তর্জাতিক আবহাওয়া নেটওয়ার্ক-সংস্থার।
করোনা-মহামারীর মাঝেই আরেক বিপদের শঙ্কা বয়ে নিয়ে এসেছে নিম্নচাপটি। যা ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াসে রূপ নিতে পারে। সাইক্লোনের আলামতে দেশের সমুদ্র উপক‚ল, চর ও দ্বীপাঞ্চলবাসীর বুক কাঁপে। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ দশ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত নিয়ে ভারত হয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ উপক‚লে আঘাত হানে গতবছর ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর। চলতি মে মাসে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় তৈরির শঙ্কা জানানো হয় আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ কমিটির দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে।
নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। আবহাওয়ায় পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত দেখানো হচ্ছে।
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, নিম্নচাপটির গতকাল সন্ধ্যায় সর্বশেষ অবস্থান ছিল ১০.৬ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.৩ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে।
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি সামান্য পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৭০ কি.মি. দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩২৫ কি.মি. দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২৮৫ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটরের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৪০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছাকাছি সাগর উত্তাল রয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে ভ্যাপসা গরম পড়ে। দেশের বিভিন্ন জেলায় তাপদাহ বইছে। তবে বেশিরভাগ এলাকায় তাপমাত্রা নেমেছে সহনীয় পারদে। বিক্ষিপ্ত দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় ঈশ্বরদীতে ৯৮ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ৬ মি.মি. বৃষ্টিপাতের সঙ্গে তাপমাত্রার পারদ নেমে গেছে সর্বোচ্চ ৩৪.৬ এবং সর্বনিম্ন ২৫.৬ ডিগ্রির অবস্থানে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৭.২ ডিগ্রি সে.। সেখানে এক মি.মি. বৃষ্টি ঝরে।
আজ (শনিবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। খুলনা বিভাগসহ নোয়াখালী অঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু এলাকায় কমে আসতে পারে। সারাদেশে সার্বিক তাপমাত্রা প্রায় অপরির্তিত থাকতে পারে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টিসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন