স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় নতুন পাসপোর্টের জন্য হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের মাঝে চলছে হাহাকার। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের দরুণ গত ১৮ মার্চ থেকে দেশটিতে লকডাউন চলছে। কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন বন্ধ থাকায় কর্মীদের নতুন পাসপোর্ট সরবরাহ বন্ধ রয়েছে গত দু’মাস ধরে। প্রবাসী কর্মীরা সরকার নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য হাই কমিশনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে ৩/৪ মাসেও নতুন পাসপোর্ট পাচ্ছে না।
এতে হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীর ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছে। পাসপোর্ট না পাওয়ায় প্রবাসী কর্মীরা চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। যথা সময়ে নতুন পাসপোর্ট হাতে না পাওয়ায় কর্মীরা চাকরি হারানোর ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। দেশটিতে ঘরবন্দি প্রবাসী কর্মীরা প্রতিদিন কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনে দফায় দফায় ফোন ও ই-মেইল করেও কোনো সাড়া পাচ্ছে না। কুয়ালালামপুর থেকে আজ একাধিক ভুক্তভোগি এসব তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে, দেশটিতে লকডাউন কিছুটা শিথিল করায় মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগ অভিবাসী কর্মীদের অনলাইনে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর কার্যক্রম শুরু করেছে। পাসপোর্ট যথা সময়ে না পেলে এসব প্রবাসী কর্মীরা অবৈধ হয়ে যাবে। ফলে চাকরি হারিয়ে তাদের খালি হাতে দেশে ফিরতে হবে। আগামী সোমবার থেকে স্বাস্ব্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিদিন দু’শতাধিক আটকা পড়া নতুন পাসপোর্ট বিতরণের জন্য কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন মালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য চিঠি দিয়েছে। কিন্ত আজ শনিবার পর্যন্ত হাই কমিশন থেকে পাসপোর্ট বিতরণের জন্য মালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মেলেনি। আজ কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।
কুয়ালালামপুর থেকে ভেস্ট মাকের্টিং এসডিএন বিএইচডি’র পরিচালক মো.রুহুল আমিন জানান, লকডাউনের দরুণ হাই কমিশন বন্ধ থাকায় হাজার হাজার প্রবাসী কর্মীরা নতুন পাসপোর্ট না পাওয়ায় চরম হতাশায় ভুগছে। বিগত দু’মাস ধরে পাসপোর্ট না পাওয়ায় প্রবাসী কর্মীরা ভিসা নবায়নের জন্য ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট জমা দিতে পারছে না। এতে অনেকেই চাকরি হারানোর ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশটিতে লকডাউন পুরোপুরি উঠেনি। সেহেতু কুয়ালালামপুরের বাইরের শহরগুলোতে বসবাসকারী কর্মীদের ঠিকানায় হাই কমিশন থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে নতুন পাসপোর্ট সরবরাহ করার উদ্যোগ নিলে কর্মীরা ঘরে বসেই পাসপোর্ট পেতো। এছাড়া পুলিশী গ্রেফতার আতঙ্কে অনেক প্রবাসী কর্মী পাসপোর্টের জন্য হাই কমিশনে যেতেও ভয় পাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এদিকে,মালয়েশিয়া হাই কমিশন মালয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাসপোর্ট বিতরণে অনুমোদন প্রাপ্তির লক্ষ্যে কোনো যোগাযোগও করেননি বলে জানা গেছে। আজ হাই কমিশনের পাসপোর্ট বিভাগে দায়িত্বরত কর্মকর্তা মশিউর রহমান তালুকদারের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
বিএমইটি’র সূত্র মতে, ১৯৭৮ সনে দেশটিতে ২৩ কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে জনশক্তি রফতানি শুরু হয়। দশ সিন্ডিকেট চক্রের অপতৎপরতায় মালয়েশিয়া সরকার ২০১৮ সনের শেষ দিকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেয়। শুরু থেকে এযাবত দেশটিতে ১০ লাখ ৫৭ হাজার ১৪৪ জন কর্মী চাকরি লাভ করেন। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে মালয়েশিয়া থেকে প্রবাসী কর্মীরা ২২৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে ছয় লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মী ঘরবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই চরম খাদ্য সঙ্কটের মুখে পড়েছে। সরকার মালয়েশিয়ার ঘরবন্দি কর্মীদের জরুরি ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য ৪০ লাখ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্ত হাই কমিশনের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে অনেক ক্ষুধার্ত ঘরবন্দি প্রবাসী কর্মীর ভাগ্যে ত্রাণ জুটেনি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন