শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

জাতীয় ঐক্য বনাম অনাকাঙ্কিত বিদ্বেষ

তৈমূর আলম খন্দকার | প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

করোনা মহামারী ঠেকানোর জন্য বিশ্বের শাসক গোষ্ঠি ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি সঠিক দিক নির্দেশনাও দিতে পারছে না। এর মূল কারণ, বিজ্ঞানীদের মতে, এটি এমন একটি ভাইরাস যা সময়ে সময়ে রকম পরিবর্তন করে। দ্বিতীয়ত পৃথিবী যখন অমার্জনীয় পাপ, জুলুম, অত্যাচার, মিথ্যাচার, অশ্লীলতা, নির্যাতন, অবিচার, দুঃশাসনে নিম্মজ্জিত হয়ে পড়ে তখনই এ ধরনের মহামারীর উৎপত্তি হয়। করোনা একটি ব্যতিক্রমধর্মী ভাইরাস, যা নির্দিষ্ট কোন রাষ্ট্র বা এলাকায় আর্ভিভূত হয়নি, বরং একই সময়ে প্রকাশ পেয়েছে গোটা বিশ্বে। ভাইরাসটি প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়ে এক রাষ্ট্র অপর রাষ্ট্রের ওপর দোষ চাপাচ্ছে, সুনির্দিষ্ট কোন প্রতিকার দিতে পারছে না।
সর্দি, হাঁচি, কাশি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোন কঠিন রোগ হিসাবে বিবেচিত হতো না, যেমনিভাবে ক্যানসার, যক্ষ্মা, ডাইবেটিস, হার্ট প্রবলেম, কিডনি, গ্যাসটিক, প্রেসার প্রভৃতিকে মানুষ জটিল রোগ হিসাবে বিবেচনা করে চিকিৎসক বা হাসপাতালের শরণাপন্ন হতো। ‘বাঙ্গালীর আবার সর্দি হয় না কি’ এটা একটি জনপ্রিয় প্রবাদ। অর্থাৎ ব্যাঙ যেমন পানিতে বাস করে ঠিক তেমনি বাঙ্গালীকে বন্যা, বৃষ্টির পানিতে ডুবে থেকেই কৃষি কাজসহ অন্যান্য কাজ করতে হয়। সর্দি, কাশি বা গলাব্যাথা হলে গরম পানিতে গড়গড়া করার উপদেশ চিকিৎসকরা এতোকাল দিয়েছেন। সর্দি হলে আমার দাদী বলতেন যে, এতে শরীর নতুন পুরান হয়, হাঁচি দিলে শরীর পাতলা হয় এবং কারো হাঁচির আওয়াজ শোনার সাথে সাথে বলতেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ’। অথচ সেই হাঁচি, কাশিই হলো মরণ ব্যাধির প্রধান হাতিয়ার, যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা বলেছে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে, অর্থাৎ কেউ কারো সংস্পর্শে বা সন্নিকটে যেতে পারবে না। নাক, মুখ ঢেকে চলাফেরা করতে হবে। পরীক্ষান্তে করোনা নেগেটিভ হলেও নিজ স্ত্রী দূরত্ব রক্ষা করে চলে। মরলে আত্মীয়-স্বজনতো পরের কথা নিজ স্ত্রী, সন্তানরাও কাছে আসে না। এ উপলক্ষে মানুষ কয়েকটি শব্দের সাথে পরিচিত হলো যেমন, লকডাউন, আইসোলেশন, সেলফ কোয়ারেন্টাইন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন। আরো পরিচিত হলো মাস্ক ব্যবহার, যা ব্যবহার করা অসস্থিকর তো বটেই, অন্যদিকে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক নিজ হাতে সৃষ্ট মানুষের সুন্দর চেহেরা ঢেকে রাখার মনবেদনা। তারপরও রয়েছে বাঁচার তাগিদ, তাই এ অস্বাভাবিকতাকেও মানুষ ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
কোন রাজা, বাদশাহ, শাসনকর্তা, দলীয় প্রধান, অফিসের বস এক কথায় বলতে গেলে কোন সরকারই সমালোচনা পছন্দ করা তো দূরের কথা, সহ্যই করে না। তবে পূর্বের চেয়ে অসহ্যের তাপমাত্রা দিন দিন অনেক বৃদ্ধি পেয়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন নিবর্তনমূলক ডিজিটাল আইন। করোনা মোকাবেলায় সরকারি ব্যর্থতাকে ঢাকা দেয়ার উদ্দেশ্যে মিডিয়াকে সুকৌশলে আরো নিয়ন্ত্রিত রাখার জন্য গত ৭ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ‘সরকারী প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশনা, ২০১৯ (পরিমার্জিত সংস্করণ) প্রণয়ন করে কতিপয় নিষেধাজ্ঞাসহ কিছু নির্দেশনা জারি করেছে। উক্ত নির্দেশাবলীর মধ্যে একটি নির্দেশ রয়েছে যা কার্যত: যা হোক না কেন, শুনতে ভালো লাগে, বাস্তবায়িত হলে জাতীয় পরিবেশ আরো সুন্দর ও জাতি সমৃদ্ধশালী হওয়ার কথা। নির্দেশনাটি হলো, ‘জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী কোন রকম তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।’ আশার কথা এ জন্য বলছি যে, নির্দেশিকায় জাতীয় ঐক্য ও চেতনার প্রতি সরকার গুরুত্ব প্রদান করেছেন বলে প্রতিয়মান। এখন প্রশ্ন হলো, জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা কি সরকার উপলব্দি করে? বিরোধী দলের সাথে সরকারের পূর্বাপর ব্যবহার ও মন্ত্রীদের বক্তব্য পর্যালোচনা করলে ঐক্যের প্রশ্নে সরকারের মতলব কি পজেটিভ না নেগেটিভ? জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উক্ত প্রজ্ঞাপনের নির্দেশিকা ও মন্ত্রীদের চটকদার বক্তব্য কি একই সুরে বাজছে, নাকি এখানে উল্টো সুর রয়েছে? বিএনপি’র মহাসচিব জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় পূর্ব থেকেই জাতীয় ঐক্যের কথা বলছেন, মাহামুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যোর দাবি তুলেছেন। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক ড. জাফরউল্লাহ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। ড. কামাল হোসেন ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে জাতীয় ঐক্য চেয়েছেন, যা দায়সারা গোছের, জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে তার নিকট থেকে যতটুকু ভূমিকা প্রত্যাশা ছিল তা তিনি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এর পিছনের কারণ হতে পারে তার স্বাস্থ্য বা নিজ সংগঠনের সাংগঠনিক দুর্বলতা বা ঝুঁকি না নেয়ার প্রবণতা। ঐক্যফ্রন্টের অগোছালো অবস্থা তো রয়েছেই, তদুপরি গণফোরামের নিজস্ব মতবিরোধ এখন চরমে। যে এমপিকে গেট আউট বলে অফিস থেকে বের করে দিয়েছিলেন তাকেই দলের মহাসচিব বানিয়ে একটি অনৈক্যের বীজ রোপণ দৃশ্যমান করেছেন। গণফোরামের অফিস দখল, পাল্টা দখলের হুমকির খবর মিডিয়াতে প্রকাশ পেয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব নিয়েও ড. কামাল হোসেনের ভাবমর্যাদা তৃণমূলের নিকট মেঘাচ্ছন্ন, কারণ ফ্রন্টের মূল শক্তি বিএনপি চেয়ারপার্সনের মুক্তির বিষয়ে তিনি ভূমিকা রাখাতো দূরের কথা, দেশের প্রখ্যাত আইনজীবী হিসাবে অনুরোধ করা স্বত্তে¡ও একদিনের জন্যও তিনি উচ্চ আদালতে জামিনের শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন নাই। এ বিষয়টি ঐক্যফ্রন্টের সর্ববৃহত শরীক দলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বুঝতে পেরেছেন কিনা, তবে সাধারণ মানুষের বোধ্যগম্য হয়েছে ঠিকই, যা তৎসময়ে চাউর হয়ে ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। মেঘাচ্ছন্ন ভূমিকা নিয়ে জনগণের আস্থা অর্জিত হয় না। ২০১৮ জাতীয় নির্বাচনে ঘটেছে তাই। বিএনপি চেয়ারপার্সন জামিন নামক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, ৭৫ বছর বয়স্ক একজন অসুস্থ নারী (যিনি রাজপথে আন্দোলন করে তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন)-কে আপিলে জামিন না দিয়ে আইন পেশাদারীত্বের প্রশ্নে আদালত প্রাঙ্গনে একটি খারাপ নজির সৃষ্টি হলো। ভবিষ্যতে সরকারগুলিও বিরোধী দলকে হেনস্থা করতে এ নজির রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহারের সুযোগ পাবে। একজন খ্যাতনামা আইনজীবী ও আইনজীবীদের অভিবাবক হিসাবে উক্ত নজিরের বিরুদ্ধে তিনি স্বোচ্চার ছিলেন না। মানসিকভাবে তৃণমূলে ঐক্যের ফাটল তখন থেকেই সূচিত হতে থাকে। তবে ৬০/৭০টি আসন নিয়ে যারা বিরোধী দলের আসনে বসার অতিআগ্রহে আশায় দিন গুনছিলেন তাদের কথা ভিন্ন। উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপার্সনের সম্মানজনক মুক্তির প্রশ্নে সংলাপটি ভেঙ্গে দিলে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির ভাবমর্যাদা বৃদ্ধি পেতো, শূন্য হাতে ফিরতে হতো না। বরং মুক্তির প্রশ্নে সরকারকে ছাড় দেয়া হয়েছে। এ সংলাপের রেজাল্ট শেখ হাসিনা কোর্টে জমা পড়েছে এবং সংলাপের উসিলায় কালক্ষেপণ করে প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনী নীলনকশা সাজাতে পেরেছেন। সরকার যেখানে বারংবার জাতীয় ঐক্য প্রত্যাখ্যান করেছে, সেখানে বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট জাতীয় ঐক্যের দাবি করছে কেন? এতে রাজনৈতিক কি ফায়দা রয়েছে? নির্বাচনপূর্ব অনেক আকাক্সিক্ষত সংলাপের ফলাফল কী হয়ে ছিল তা কি বিএনপি ভুলে গেছে? দীর্ঘ সংলাপের পর শূন্য হাতে ঐক্যফ্রন্টকে ফিরতে হয়েছিল। সেখানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের জোরালো মুক্তির দাবিটিও তারা উপস্থাপন করে রেজাল্ট নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়েছেন। বরং পত্রিকান্তরে মুখরোচক আপ্যায়নের সংবাদ শুনতে হয়েছে জনগণকে। শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব গোলাম কিবরিয়া, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অর্থমন্ত্রী, যিনি জঙ্গীবাদের শিকার হয়ে নিহত হলে বিএনপি’র অনেক পরীক্ষিত নেতা আসামী হিসাবে জেল খেটেছেন। তারই পুত্র রেজা কিবরিয়া ঐক্যফ্রন্টের টিকেটে জাতীয় সংসদ সদস্যের পাশাপাশি গণফোরাম মহাসচিব। কিবরিয়া পুত্র সরকারের বিরুদ্ধে কতটুকু স্ট্যান্ড নিতে পারবে, এ মর্মে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত জনগণ আস্থাশীল হতে পারবে বলে মনে হয় না।
জাতির ক্রান্তিকালে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার রেওয়াজ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বিনা ভোটের সরকার, আস্থার প্রশ্নেও প্রশ্নবিদ্ধ(!) যতটুকু গলাবাজি ততটুকু সফলতা কোথায়? সরকারি দলের দায়িত্ব প্রাপ্তরাই ত্রাণের চাল চুরিতে মহাব্যস্ত, তবে চোরদের সরকার গ্রেফতার করছে, ছাড় দিলে ১৯৭৪ সনের দুর্ভিক্ষের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। এসব পৈশাচিক ঘটনা ১৯৭৪ সালের কম্বল চুরির আক্ষেপের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়। থিউরী ও প্রাকটিক্যাল সমভাবে চলে না। একটি জঙ্গলে কয়েকটি বাঘ একত্রিত হলে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে নিজেরা খেলাধূলা করে, একে অপরের গা চুলকিয়ে দেয়, নিজেরা নিজেদের আক্রমণ করে না। এরই মধ্যে একটি হরিণ দেখলে দৌড়ে গিয়ে আক্রমণ করে ভ‚রিভোজ করে। বন্ধুত্ব হয় সবলে সবলে। সবলের সঙ্গে দুর্বলের বন্ধুত্ব হয় না। শেখ হাসিনা হয়তো সে মানসিকতাতেই রয়েছেন, তবে তিনি এটা সঠিক করছেন না ভুল করছেন বা যে মানসিকতায় তিনি রয়েছেন তা তার জন্য কল্যাণকর কিনা তা সময়ই বলে দিবে। প্রথমত: রাষ্ট্রীয় নিরপেক্ষ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে কবজা, দ্বিতীয়ত: বিএনপি’কে ভোট বিহীন পার্লামেন্টে শপথ গ্রহণের কৌশল অবলম্বনের মধ্যে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দৃশ্যত: একটি রাজনৈতিক বিজয় অর্জন করেছেন বলে তিনি অবশ্যই মনে করতে পারেন। অন্যদিকে নিজ দলের চেয়ারপার্সনকে জামিনে মুক্ত করতে না পারাটাই বিএনপি’র সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বিপর্যয়। তারপরও বিএনপিই গণমানুষের বিরোধী দল, জনগণের প্রত্যাশা এ দলের নিকট অনেক বেশি। জনগণের প্রত্যাশার সাথে বিএনপি সমানতালে কেন চলতে পারছে না, এ মর্মে একটি অনুসন্ধানী গবেষণামূলক প্রতিবেদনের অনুশীলনই হতে পারে দলটির রাজনৈতিক বিজয়ের যাত্রা পথের পাথেয়।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঐক্য দিল্লির লাড্ডুর মতো। তবে এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দল দুইটি, একটি আওয়ামী লীগ, অন্যটি বিএনপি। বাকিগুলি মালবাহী পালতোলা বড় বড় নৌকার দাঁড়টানা মাঝির মতো। বড় দলের আওয়াজের সাথে হৈইও, হৈইও বলা ছাড়া তাদের কোন দায়িত্ব নাই। এরশাদ মরে গিয়ে বেঁচে গেছেন, নতুবা যতদিন বাঁচতেন তাকে লেজুড়বৃত্তি করেই বাঁচতে হতো। জীবনে পাল্টি খেয়েছেন অনেক বার। সকালের কথা বিকালে করেছেন পরিবর্তন। পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন কোথাও চতুরতা বা কোথাও বুদ্ধিমত্তার সাথে, নতুবা ক্ষমতার অংশীদারিত্বের পরিবর্তে তাকে কারাগারেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হতো হয়তোবা? বাম দলগুলির চুলচেরা মতবিরোধে একে অপরের মত পার্থক্য যোজন যোজন দূরে। দেশে অনেক পীর মাশায়েখ আছেন যাদের বড় রাজনৈতিক দলের মতই অনেক বিরাট কর্মী বাহিনী আছে, তবে একজনের সাথে অন্যজনের মতের মিল নাই। তারা ক্ষণে সরকারের সমালোচনা করেন, আবার দোয়া করে সরকারের প্রশংসা করেন, যাদের জনগণ একবার আস্থায় নিলেও পরবর্তীতে আর নেয় নাই। তবলীগ জামাত অনেক বড় একটি জনগোষ্ঠি, কিন্তু তারা গণমানুষ বা মুসলমানদের অধিকার আদায় বা অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার কোন ভূমিকা রাখে না।
মোটা দাগে জাতিই মূলত: দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এখানে ১৯৭১ এর পাশাপাশি ১৯০৫ এবং ১৯৪৭কে বাদ দিয়ে রাজনৈতিক অংকের যবনিকা টানা সহজ হচ্ছে না। উপমহাদেশের রাজনীতি একে অপরের সম্পূরক না হলেও প্রবলভাবে প্রভান্বিত। ভারত মোদী সরকার ১৯৪৭ এর দিকেই ধাবমান হচ্ছে বলে প্রতিয়মান। ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঐক্য আবেগে হতে পারে, বাস্তবতায় নয়। মসজিদ ভাঙ্গলে জোড়া লাগে, কিন্তু মন ভাঙ্গলে তা লাগে না। খরস্রোতা নদীও শুকিয়ে যায়, কিন্তু রক্তের দাগ শুকায় না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ১৫ আগস্ট, ৩০ মে, ২১ আগস্ট, ওয়ান/ইলেভেনসহ কিছু দিন অনেক ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা মিমাংসীত না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় ঐক্য সুদূরপরাহত। কারণ এখানে বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্ন প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে কাক্সিক্ষত ঐক্যে উপনীত হওয়ার জন্য জাতিকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম অপেক্ষা করতে হবে, যদি এ ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার ভিন্ন কোনো চিন্তা না থাকে। অন্যদিকে নিজের পায়ের উপর ভর করেই বিএনপি’কে হাঁটতে হবে। তাও আবার ফুল বিছানো পথে নয়, বরং পিচ্ছিল কণ্টকময় পথে, যাতে দুর্ঘটনা ঘটার অনেক আশঙ্কা থাকলেও জয়ের সম্ভবনা অনেক বেশি, যদি জনগণকে আস্থায় আনা যায়। এ জন্য শুধুমাত্র বুদ্ধিভিত্তিক বক্তৃতা ও কাগজী বিবৃতি দিলে চিড়া ভিজবে না, তার সাথে সংযোযিজ হতে হবে রাজপথে গগণবিদারী মুর্হমুহ শ্লোগান, যে শ্লোগান শাসকদের কর্ণকুহরে পৌঁছবে বিমান বিধ্বংসী কামানের শেলের মতো এবং এর কোনো বিকল্প চিন্তা গুড়ে বালি ছাড়া অন্যকিছু নয়।
লেখক: রাজনীতিক, কলামিস্ট ও আইনজীবী

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন