রাসুলুল্লাহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বাধীন, দাস, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সকল মুসলমানের ওপর ফিতরা আদায়কে আবশ্যক করেছেন। আর তা ঈদের নামাজে যাওয়ার পূর্বেই আদায়ের আদেশ দিয়েছেন।
ফিতরা বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হলো : যাদের ওপর ফিতরা ওয়াজিবযার ওপর জাকাত ওয়াজিব, তার ওপর সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব। এমনিভাবে যে সকল লোকদের ওপর জাকাত ওয়াজিব নয়, কিন্তু প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের বাইরে এতটুকু সম্পদ তার আছে, যার মূল্য নিসাব পরিমাণ, এমন ব্যক্তির ওপরও সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব।
ফিতরা যাদের পক্ষ থেকে আদায় করতে হবে: সাদকায়ে ফিতর নিজের পক্ষ থেকে, নিজের নাবালেগ বাচ্চার পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজিব। যদি সে নিসাব পরিমাণ মালের মালিক না হয়। নিজের মালিকাধীন ক্রীতদাসের ফিতরা আদায় করাও ওয়াজিব। তাছাড়া মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রীর পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় ওয়াজিব নয়। তবে যদি আদায় করা হয় তবে তা আদায় হয়ে যাবে।
নাবালেগ ও পাগলের ফিতরা : সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক, জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া শর্ত নয়। বরং যে ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হবে, তার ওপর সাদকায়ে ফিতর আদায় ওয়াজিব। সুতরাং কোনো অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা পাগল যদি নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হয়, তাহলে তার ওপর সাদকায়ে ফিতরা ওয়াজিব। এ সাদকায়ে ফিতরা তার অভিভাবক তার মাল থেকে আদায় করে দেবে। যদি অভিভাবক আদায় না করে তবে পাগল ভালো হওয়ার পর এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর ফিতরা আদায় করবে।
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ফিতরা : অতিরিক্ত সামানপত্র বিক্রয়লব্ধ অর্থ দ্বারা যদি সাদকায়ে ফিতর আদায় করার পরও ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির নিসাব পরিমাণ টাকা অবশিষ্ট থাকে, তাহলে সাদকায়ে ফিতর আদায় ওয়াজিব হবে।
ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার সময় : সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয় ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময় তথা ফজরের সময়। কোনো ব্যক্তি যদি ফজরের পূর্বেই মারা যায়, বা তার সম্পদ হাত ছাড়া হয়ে যায়, তাহলে তার ওপর সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব নয়।এমনিভাবে কোনো সন্তান যদি ফজর উদিত ওয়ার পর জন্মগ্রহণ করে; কোনো কাফের ফজরের পর মুসলমান হয়, তাহলে তার ওপর সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব নয়। কিন্তু কোনো সন্তান যদি ফজরের পূর্বে ভূমিষ্ঠ হয় বা কোনো অমুসলিম যদি ফজরের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করে তবে তার ওপর সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হবে।
ফিতরা আদায় করার সময় : ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই সাদকায়ে ফিতর আদায় করা উত্তম। বেরোজাদারের ফিতরা: যে ব্যক্তি রোজা পালন করেনি, তারও ফিতরা আদায় ওয়াজিব। সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য রোজা রাখা বা না রাখা সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। বরং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হলো- ঈদের দিন সকালে নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হওয়া।
ফিতরার পরিমাণ : হাদীস অনুযায়ী এক সা বা সাড়ে তিন সের এবং অন্য হাদীস অনুযায়ি আধা সা বা পৌনে দুই সের গম বা গমের আটা বা প্রধান খাদ্য। অথবা তার সমপরিমাণ মূল্য।
ফিতরা দেয়ার পদ্ধতি : একজনের ফিতরা একজন গরিব-মিসকিন বা ফকিরকে দেয়া যাবে। আবার কয়েকজন ফকির বা মিসকিনকেও কিছু কিছু করে দেয়া যাবে। এমনিভাবে কয়েক জনের ফিতরা একত্র করে একজন ফকিরকেও দেয়া যাবে।
প্রবাসীদের ফিতরা আদায় : সাদকায়ে ফিতরের মূল উদ্দেশ্য হলো- গরিব, মিসকিনদের উপকার হওয়া। সুতরাং যে দেশের গমের মূল্য ধরলে গরিব-মিসকিনদের উপকার বেশি হবে, সে দেশের পৌনে দুই সের গমের মূল্য ধরে সাদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে। যেমন বাংলাদেশের পৌনে দুই সের গমের মূল্য ৭০ টাকা। ঠিক আমেরিকায় এ পরিমাণ গমের মূল্য ২৫০ টাকা। সুতরাং আমেরিকা প্রবাসীকে ২৫০ টাকা হিসেবে সাদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে। আবার কেউ এক সা দিতে চাইলে ৫০০ টাকা দেবেন।
স্ত্রীর ফিতরা : স্ত্রী যদি নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হয়, তবে সে তার সাদকায়ে ফিতর আদায় করবে। আর যদি তা না হয় এবং বালেগ হয়, তাহলে তার পক্ষ থেকে সাদকায়ে ফিতর স্বামী যদি আদায় করে দেয়, তাহলে আদায় হয়ে যাবে।
মসজিদের ইমাম বা মুয়াজ্জিনকে ফিতরা দেয়া : ইমামতির বা আজান দেয়ার কারণে ফিতরা দেয়া বৈধ নয়। হ্যাঁ, যদি সে ফিতরা নেয়ার উপযুক্ত হয়, তাহলে তাকে ফিতরা দেয়া যাবে।
গরিব নাবালেগ বাচ্চাকে ফিতরা দেয়া : গরিব নাবালেগ বাচ্চাকে ফিতরা দেয়া বৈধ নয়; তবে বাচ্চা যদি নাবালেগ হলেও বুঝবান হয়, তাহলে তাকে ফিতরা দেয়া যাবে।
নিজ বাড়ির কাজের লোককে ফিতরা দেয়া : নিজ বাড়ির কাজের লোক যদি নিসাব পরিমাণ মালের মালিক না হয়, তবে তাকে ফিতরা দেয়া যাবে। তবে পারিশ্রমিক হিসেবে ফিতরা দেয়া জায়েজ নেই।
মহান আল্লাহ তাআলা ফিতরা আদায়ের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন