প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে সউদীসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রায় ৪০ লাখ বাংলাদেশি নারী-পুরুষ কর্মী আজ রোববার ঘরবন্দি অবস্থায় অন্য রকম ঈদ উদযাপন করছেন। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবার প্রবাসে ঈদের দিন দেশি-বিদেশিদের সাথে কুশল বিনিময়, কোলাকুলি করা এবং এক শহর থেকে অন্য শহলে ঘুরে বেড়ানোর কোনো সুযোগ ভাগ্যে জুটেনি। প্রবাসে শুধু বাসা-বাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে উঁকি দিয়েই সময় কাটছে তাদের। আবার কেউ কেউ ঈদের আগে দেশে স্বজনদের কাছে টাকা পাঠাতে না পেরে বাসার ভেতরেই চোখের পানি ফেলছেন। দেশের বাড়িতে এদের পরিবার পরিজনের মাঝেও এবার ঈদের আনন্দ নেই।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রায় ১ কোটি প্রবাসী বাংলাদেশির পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে। সম্প্রতি ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী কর্মীরা। চলতি মাসের প্রথম ২১ দিনে ১১২ কোটি ১০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৯ হাজার ৫২০ কোটি টাকা । এছাড়া গত এপ্রিলে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীকর্মীরা।
সউদী আরবের তায়েফ শহর থেকে আজ রোববার নারায়ণগঞ্জের বন্দরের প্রবাসী ব্যবসায়ী জামান ইসমাইল বেপারী ইনকিলাবকে জানান, রিয়াদ, দাম্মাম, জেদ্দা, মক্কা, মদিনা ও তায়েফে লাখ লাখ ঘরবন্দি প্রবাসী বাংলাদেশি চরম দুর্দিনে বসবাস করছে। এসব প্রবাসীদের মাঝে ঈদ উদযাপনের কোনো আমেজ নেই। সউদীর নির্মাণ খাত, শপিংমল, বিভিন্ন মার্কেট, সেলুন, টেইলারের দোকান-পাট বন্ধ। অবৈধ কর্মীরা মাহে রমজানে অনেকেই শুধু গাড়ি ধোয়া মোছার কাজ করে ৩/৪ হাজার রিয়াল কামাতো। মার্কেটগুলোতে মালামাল উঠা নামার কাজ করেও অনেকেই প্রতি মাসে ২/৩ হাজার রিয়াল কামাতো। এসব আয়ের পথ গত দু’মাস ধরে পুরোপুরিই বন্ধ।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী ব্যবসায়ী জামান বলেন, ঈদের দিনেও সউদী প্রবাসী কর্মীদের অনেকেই দেশে টাকা পাঠাতে না পেরে শুধু ঘরে বসেই চোখের পানি ফেলছে। তিনি বলেন, সউদীতে আমার পাঁটি দোকান বন্ধ। প্রতি মাসে এসব দোকান থেকে আমার ৫ থেকে ৬ লাখ রিয়াল আয় হতো। রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে অধিকাংশ প্রবাসী কর্মীরা কোনো ত্রাণ না পেয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সউদীতে ৮৫% অভিবাসী কর্মীরাই প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। অতিসম্প্রতি রিয়াদের একটি কোম্পানীর ডরমিটরিতে গাদাগাদি করে বসবাস করা ৯৫ জন অভিবাসী কর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এর পর থেকেই দেশটির সরকারের টনক নড়েছে। সরকার এখন আজনবী (ব্যাচেলর রুম) তল্লাশি করে একই রুমের কর্মীদের স্থানীয় স্কুল-মাদরাসা মক্তবে সরিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে, কুয়েত সরকারের সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশটির চারটি অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীরা আগামী ২৭ মে থেকে দেশে ফিরতে শুরু করবে। আজ রোববার কুয়েত সিটিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।
গত এপ্রিল মাসে কুয়েত সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করায় দূতাবাসের তত্বাবধানে প্রায় ৪ হাজার ৯শ’ অবৈধ বাংলাদেশি কর্মী স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করে। কুয়েত সরকার প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারীতে অবৈধ কর্মী কমাতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। দেশে ফেরার জন্য নিবন্ধিত অবৈধ কর্মীদের থাকা-খাওয়া এবং বিমানের টিকিট ফ্রি দিয়ে পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। প্রথম দিকে এসব নিবন্ধিত অবৈধ কর্মীদের থাকা খাওয়ার কিছু সমস্যা হয়। কুয়েতস্থ ক্যাম্পে অপেক্ষমান এসব কর্মীদের বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ দেখভাল করেনি বলেও অভিযোগ উঠে। দেশটিতে তিন লক্ষাধিক বৈধ-অবৈধ বাংলাদেশি কর্মী ঘরবন্দি জীবন-যাপন করছে। প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা ঘরবন্দি অবস্থায়ই ঈদ পালন করছে। দীর্ঘ দিন যাবত অবৈধ কর্মীরা পালিয়ে পালিয়ে কাজ করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাতো। এসব অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীর অনেকেরই বৈধ ভিসা ও পাসপোর্টও নেই।
উল্লেখ্য, মাহে রমজানের শেষের দিকে কুয়েত সরকার সাধারণ ক্ষমার আওতায় কয়েকটি বিশেষ ফ্লাইট যোগে প্রায় ১৮শ’ অবৈধ কর্মীকে দেশে পাঠিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন