টানা প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর আজ থেকে গণপরিবহন খুলছে। এর মধ্যে লঞ্চ ও ট্রেন চলবে আজ থেকে। বাস চলবে কাল থেকে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে গণপরিবহনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়েছে। এজন্য তিন ধরনের গণপরিবহনেই অর্ধেক যাত্রী বহন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র বাস ভাড়া বাড়ছে। ট্রেন ও লঞ্চের ভাড়া বাড়ছে না।
করোনাকালে কেমন হবে গণপরিবহন? সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কিভাবে চলবেন যাত্রীরা-এমন প্রশ্ন সবার মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে। বাস ও লঞ্চের মালিকরা যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলের বিষয়ে রীতিমতো সন্দিহান। রেলের কর্মকর্তারা মুখে কঠোর হওয়ার কথা বললেও বাস্তবতা নিয়ে তাদের মধ্যেও সন্দেহ আছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ট্রেনের টিকিট শুধুমাত্র অনলাইনে বিক্রি শুরু হয়েছে। এটা একটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এদিকে, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে মোবাইল কোর্টের অভিযান।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, দীর্ঘ সাধারণ ছুটি শেষে বহুসংখ্যক মানুষ জীবিকার তাগিদে একসঙ্গে রাস্তায় নামবে। এ অবস্থায় সড়কে গণপরিবহনের স্বল্পতা থাকলে মানুষ হুড়াহুড়ি-গাদাগাদি করে গাড়িতে উঠবে, ওঠার চেষ্টা করবে। এতে করে স্বাস্থ্যবিধি বলে কিছু থাকবে না। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য তদারকি থাকতে হবে। আইন না মানলে অভিযান চালানোর ব্যবস্থাও থাকতে হবে। সামাজিক দূরত্ব গণপরিবহনে মানা সবচেয়ে কঠিন, বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীতে।
গণপরিবহনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাত্রী বহন করে দুরপাল্লার বাস ও মিনিবাস। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে বাসের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বিআরটিএ। আজ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে ভাড়া সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। এ প্রসঙ্গে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইউছুব আলী মোল্লা (অতিরিক্ত সচিব) ইনকিলাবকে বলেন, পরিবহন মালিকদের দাবি ছিল যাত্রী সংখ্যা যেহেতু কমছে তাই ভাড়া ১০০ ভাগ বাড়ানোর জন্য। আমরা সেটা না করে ৮০ ভাগ ভাড়া বাড়ানোর সুপারিশ করেছি। একজন বাস মালিক বলেন, এক্ষেত্রে একজন যাত্রীকে দুটো টিকিট কিনতে হবে। সেখান থেকে ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট করা হবে। তিনি বলেন, ৩০০ টাকা ভাড়ার জন্য যাত্রীকে দিতে হবে ৪৮০ টাকা।
পরিবহন মালিকরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন পরিচালনা করা খুবই কঠিন। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রণয়ন করার পরও সরকার সড়কে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। রাস্তায় বাস নামালে শ্রমিকরা যে অতিরিক্ত যাত্রী তুলবেন না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানানো কঠিন কাজ। তারপরেও আমরা সচেষ্ট থাকবো। এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বাস চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তে¡ও কিভাবে দূরপাল্লার বাস চলবে এমন প্রশ্নের জবাবে পরিবহন শ্রমিক নেতা ওসমান আলী বলেন, দূরপাল্লার বাসগুলো পথে কোথাও যাত্রী তুলবে না। তবে কেউ নামতে চাইলে নামানো হবে।
অন্যদিকে, রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অন্যান্য গণপরিবহন অর্ধেক যাত্রী নেবে তাই ভাড়া বাড়ছে। তবে আমরা রেলের ভাড়া বাড়াচ্ছি না। রেলে একটু বেশি ভিড় হবে। তাই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে আমরা পুরো টিকেট অনলাইনে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, আজ থেকে আট জোড়া ট্রেন ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন স্টেশন থেকে ঢাকায় আসবে। আর ৩ জুন থেকে আরও ১১ জোড়া ট্রেন চলাচল করবে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, সুবর্ণ এক্সপ্রেস; ঢাকা-সিলেট কালনী, সিলেট-চট্টগ্রাম পাহাড়িকা বা উদয়ন এক্সপ্রেস চলাচল করবে। এছাড়া ঢাকা-রাজশাহী লাইনে বনলতা এক্সপ্রেস, ঢাকা-খুলনা লাইনে চিত্রা এক্সপ্রেস, ঢাকা-পঞ্চগড় লাইনে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, ঢাকা-লালমনিরহাট লাইনে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন পরিচালনা করা হবে। যাত্রা শুরুর পাঁচদিন পূর্বে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। টিকিট ছাড়া কেউ স্টেশনে প্রবেশ করতে পারবেন না। এছাড়া স্বল্প দূরত্বের যেমন- ঢাকা বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, নরসিংদীতে কোনো ট্রেন থামবে না। যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপের সুবিধার্থে ট্রেন ছাড়ার কমপক্ষে ৬০ মিনিট পূর্বে স্টেশনে পৌঁছাসহ যাত্রীসাধারণকে বেশ কিছু বিধি মেনে ট্রেনে চলাচল করতে হবে।
এদিকে, আজ থেকে লঞ্চ চালানো হবে। বন্দরে যাত্রীদের জন্য ‘জীবাণুনাশক টানেল’ বসানো হবে। লঞ্চে ওঠার সময় যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হবে। সুন্দরবন লঞ্চের মালিক ও কেন্দ্রীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, আগামী ১০ জুন পর্যন্ত চলতি ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করা হবে। এরপর না পোষালে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে। তিনি জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চলাচল করবে। গতকাল থেকে কীর্তনখোলা, এ্যাডভেঞ্চার, সুরভী লঞ্চের কাউন্টারগুলোতে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। সকাল থেকেই কাউন্টারগুলোতে দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়। যাত্রীরা বলেছেন, তারা আগের ভাড়াতেই টিকিট কেটেছেন।
এদিকে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আজ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে প্রশাসন। এজন্য স্থানীয় প্রশাসনকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় সহায়তা দেয়ার জন্য সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আব্দুল জলিল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন