মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

আমেরিকাজুড়ে বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভ, ১৩ শহরে কারফিউ

প্রতিবাদীদের ঠান্ডা করে দেয়ার হুমকি ট্রাম্পের : হত্যাকারীকে আজ আদালতে হাজির করা হবে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০২০, ১২:১২ এএম

গত ২৬ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুর খবর ছড়াতেই হিংসাত্মক বিক্ষোভ শুরু হয় আমেরিকা জুড়ে। একদিকে যখন যুক্তরাষ্ট্র করোনা মহামারী ঠেকাতে ব্যতিব্যস্ত সেই সময় এমন বিক্ষোভে রীতিমতো নাজেহাল হয়ে পড়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেটেও থামানো যাচ্ছে না বিক্ষোভকারীদের। ফলে ১৩টি বড় শহরে জারি হয়েছে কারফিউ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের ঠান্ডা করে দেবেন।

নিউ ইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস, পুলিশের নির্মম নির্যাতনে নিরীহ কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুতে ফুঁসছে গোটা আমেরিকা। রাস্তায় নেমে শনিবার পুলিশের গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। করোনার মৃত্যুভয়, সামজিক দূরত্বকে হেলায় অবজ্ঞা করে, মুখে মাস্ক না-পরে হাজারে হাজারে প্রতিবাদী পথে নেমেছেন। কোনও নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলের গন্ডিতে আর আটকে নেই বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে এদিন রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। কিন্তু, তাতেও পরোয়া করছেন না প্রতিবাদীরা। এই অস্থিরতা সামাল দিতে অধিকাংশ প্রদেশের গভর্নর গতকাল ন্যাশনাল গার্ড নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুক্রবার মিনেসোটায় ন্যাশনাল গার্ডের কয়েকশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ন্যাশনাল গার্ড যুক্তরাষ্ট্রের সংরক্ষিত সামরিক বাহিনী যাদেরকে অভ্যন্তরীণ জরুরী অবস্থা সামাল দিতে প্রেসিডেন্ট কিংবা রাজ্যের গর্ভনর ডাকতে পারে।

জর্জ ফ্লয়েডকে গ্রেফতারের সময় ডেরেক চাওভিন নামে এক পুলিশ অফিসার তার ঘাড়ে হাঁটু দিয়ে চাপ দিয়েছিলেন আট মিনিটেরও বেশ সময় ধরে। তাতেই ফ্লয়েড গুরুতর আহত হন। যে শহরে ফ্লয়েড মারা গিয়েছেন, সেই মিনিয়াপোলিসেই বিক্ষোভ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। টানা পাঁচদিন ধরে সেখানে অশান্তি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। লস এঞ্জেলিস, আটলান্টা সহ ১৩ টি শহরে নাগরিকদের বলা হয়েছে, বাড়ির ভেতরে থাকুন। সিয়াটল থেকে নিউ ইয়র্ক, আমেরিকার সর্বত্র রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। তাদের স্লোগান, ‘আই ক্যান নট ব্রিদ’, আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। পুলিশ যখন ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু দিয়ে চাপ দিয়েছিল, তখন তার দম আটকে যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘আই ক্যান নট ব্রিদ’। তার কথাটিই এখন বিক্ষোভকারীদের স্লোগান হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইসঙ্গে স্লোগান উঠেছে, ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’, কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনেরও দাম আছে।

একটি সূত্রে জানা যায়, লস এঞ্জেলসে জনতা পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। পুলিশ তাদের দিকে রবার বুলেট ছোড়ে। শিকাগো ও নিউ ইয়র্ক থেকেও পুলিশ জনতা সংঘর্ষের খবর পাওয়া গিয়েছে। ফিলাডেলফিয়ায় বিক্ষোভকারীরা বহু দোকানের কাচ ভাঙচুর করে। মিনিয়াপোলিসে ব্যাপক লুঠপাট হয়েছে। অনেকের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে দেশটির বেশকিছু বড় বড় শহরে কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। কারফিউ আরোপ করা শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে- আটলান্টা, লস অ্যাঞ্জলস, ফিলাডেলফিয়া, ডেনভের, সিনসিনাটি, পোর্টল্যান্ড, ওরেজন, লুসভিলে এবং কেনটাকি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্য, অতি বামপন্থীরাই আছে বিক্ষোভের পিছনে। তার দাবি, বিক্ষোভকারীরা ফ্লয়েডের স্মৃতির প্রতি অসম্মান করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অল্প কয়েকজন অপরাধীকে শহরে হামলা চালাতে দেব না। আমার প্রশাসন এই হিংসা থামাবেই। আমরা সব ঠান্ডা করে দেব।’ আমেরিকায় বিভিন্ন ফ্যাসিবিরোধী সংগঠন মিলে অ্যান্টিফা নামে একটি জোট তৈরি করেছে। ট্রাম্পের দাবি, সেই জোটই হিংসায় উস্কানি দিচ্ছে। এর আগে তিনি বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার জন্য মিনিয়াপোলিসের ডেমোক্রেট মেয়রকে দোষারোপ করেছেন। তিনি ক্ষমতায় আসার পর এটা সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। তিনি বলেছিলেন, ‘বিক্ষোভ যদি নিয়ন্ত্রণে নেয়া না হয় তাহলে ন্যাশনাল গার্ডের সেনারা সেটি নিয়ন্ত্রণে নেবে।’

২০১৪ সালের আগস্টে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের ফার্গুসন শহরে এমনই আর এক নিরস্ত্র কৃষাঙ্গ যুবককে গুলি করে হত্যা করেছিলেন ড্যারন উইলসন নামে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশকর্তা। সেই অফিসারের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করতে সেসময় অস্বীকার করেছিল গ্র্যান্ড জুরি। সেন্ট লুইস কাউন্টি প্রসিকিউটর রবার্ট ম্যাককুলচের বক্তব্য ছিল, ড্যারন উইলসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সম্ভাব্য কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই হত্যাকান্ড ঘিরেও সেন্ট লুইসে ছয় বছর আগে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ দানা বেঁধেছিল। অবস্থা সামাল দিতে মিসৌরি জুড়ে এক মাসের জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়েছিল প্রশাসনকে। নামাতে হয়েছিল ন্যাশনাল গার্ড। এ বারও বিক্ষোভ সেদিকেই যাচ্ছে।

জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকন্ডে ইতিমধ্যে মিনিয়াপোলিস পুলিশ বিভাগের চার অফিসারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার পরেও কিন্তু বিক্ষোভ সামাল দেয়া যায়নি। উপরন্তু, আমেরিকার ছোট-বড় শহরগুলিতে নতুন করে দানা বাঁধছে বিক্ষোভ। আজ পঞ্চম দিনে পড়ল এই বিক্ষোভ। লকডাউনের তোয়াক্কা না-করে, বিভিন্ন প্রান্তে ১০ হাজারেরও বেশি মার্কিনি প্রতিবাদে শামিল হন।

বিক্ষোভকারীরা এদিন ফোর্ট গ্রিন পার্কে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। একাধিক দোকানেও ভাঙচুর করা হয়। কয়েক’শো প্রতিবাদী ক্লিনটন হিলের ৮৮ তম এলাকা এদিন ঘিরে ফেলে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। ছুড়তে হয় রবার বুলেট।

চলমান এই বিক্ষোভে গুলিবিদ্ধ হয়ে শুক্রবার দেশটির ফেডারেল প্রটেক্টিভ সার্ভিসের এক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। বিষয়টিতে এক বিবৃতিতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর সান ফ্রান্সিসকো শাখা বলেছে, ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ফেডারেল প্রটেক্টিভ সার্ভিসের চুক্তিভিত্তিক দুই কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করে এক ব্যক্তি গুলি ছুড়েছে। পরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে এই ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার জন্য অভিযুক্ত সাবেক পুলিশ ডেরেক চাওভিনকে আজ আদালতে হাজির হতে হবে বলে জানা গেছে। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Safiul Bari Zuel ১ জুন, ২০২০, ১:২১ এএম says : 0
পুলিশ কর্তৃক কৃষ্ণাঙ্গ 'জর্জ ফ্লয়েড' কে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তা একটি মানবতা বিরোধী অপরাধ। আমেরিকান জনগন নিজ দেশে মানবতার মৃত্যু সইতে পারছে না। এ বিক্ষোভ সহজে থামবার নয়।
Total Reply(0)
Atm Abdur Rahim ১ জুন, ২০২০, ১:২২ এএম says : 0
আমেরিকার দূতাবাসের দূত সাহেব এখন কি বলেন সেটাও প্রচার হওয়া উচিৎ (সাথে আমাদের আইনশৃংখলা নিয়ে তাদের নসিহত প্রসঙ্গেও যেন কিছু বলেন
Total Reply(0)
Anamul Hoque ১ জুন, ২০২০, ১:২৩ এএম says : 0
অন্যের ঘরে আগুন দিলে নিজের ঘরেও লাগতে পারে । আমেরিকা এখন সংকটে । কিন্তু সেই কতো মানুষের সংকটের কারণ একবার কি শান্ত মস্তিষ্কে ভেবে দেখেছেন । লিবিয়া, ইরাক,সিরিয়া, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান সর্বোপরি বিশ্বের সমস্ত সমস্যার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমেরিকা জড়িত । কোথাও টাকা দিয়ে , কোথাও বুদ্ধি দিয়ে, কোথাও সরাসরি সেনা হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তারা সমস্যা সৃষ্টি করে এবং তা বাচিঁয়ে রাখে । আমেরিকার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভাববেন না আমি খুশি । আমি বলছি নিজে যখন অন্য দেশে সমস্যা সৃষ্টি করে সেই একি সমস্যাতে যখন নিজে জর্জরিত হয় বুঝতে পারছেন কেমন লাগে । কথাই আছে না হাতি যখন গর্ত পরে চামচিকা ও তখন লাত্থি মারে ।
Total Reply(0)
Saifullah Bin Toyab ১ জুন, ২০২০, ১:২৩ এএম says : 0
যারা দাবী করে যে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভদ্র মানুষ আমরা (আমেরিকা)। তাহলে, একটা মানুষ কালো হওয়ার কারণে কি করে তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করতে পারে? সকলকে ইসলামের ছায়াতলে আহ্বান করছি, যেখানে নেই কোনো কালো এবং সাদার পার্থক্য।
Total Reply(0)
Mahin Khan ১ জুন, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
আমেরিকা এখন বুঝো, আরেক ঘরে আগুন লাগানোর মজা। এক দেশ আরেক দেশের সাথে ঝগড়া লাগলে আমেরিকা আসে পক্ষ নিতে। সমাধান করার জন্যে নয়।
Total Reply(0)
Sourav Mazhar ১ জুন, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
অথচ ফিলিস্তিন, আফগানিস্তানে বছরের পর বছর ধরে এই আমেরিকা এর চেয়ে নৃশংস হত্যাকান্ড চালাচ্ছে। তখন কোন প্রতিবাদ নাই পশ্চিমা বিশ্বে।
Total Reply(0)
Mohammed Syed ১ জুন, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
আল্লাহ ওপর ভরসা রাখি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দুনিয়ার মুসলমানদের ওপর ইহুদীদের অত্যাচার নির্যাতনের বিচার করবে ইনশাআল্লাহ ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন