লকডাউন প্রত্যাহার ও গণপরিবহন চালূ হওয়ায় দিনাজপুরের লিচু ব্যবসায়ীরা প্রাণ ফিরে পেয়েছে। লোকডাউন থাকা অবস্থায় বিক্রি না হওয়ার আশংকায় না পাকতেই গাছ থেকে পেরে পানির দামে বিক্রি শুরু করেছিল। ব্যবসা বাণিজ্যে গতি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি খেটে খাওয়া সাধারন মানুষের জীবন-জীবিকার স্বার্থে লোক ডাউন প্রত্যাহার ও গণপরিবহন চালু করার ঘোষনায় দৃশ্যপট যেন পাল্টে যায়। দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখার কারিগর কৃষকেরা ধানসহ অন্যান্য পণ্যের ন্যায্য মুল্য না পেলেও মৌসুমী ফল লিচু’র ক্ষেত্রে উল্টো চিত্র দেখা দিয়েছে। ক্রেতাদের চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। ফড়েয়া ব্যাপারীরা বাজারে নয় ছুটছে কৃষকের বাগান ও বাড়ীতে। ফলে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে লিচু’র দাম বেড়ে দ্বিগুনের বেশী হয়ে যায়। অবশ্য লিচুর মূল বাজার শুরু হয়েছে গত ১ জুন অর্থাৎ মাত্র দুই দিন আগে। প্রথম দিন লিচুর দাম না থাকলেও দ্বিতীয় দিনে দাম বেড়ে যায়। ২ থেকে আড়াই হাজার টাকার বেদেনা লিচু’র দাম বেড়ে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার ও ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার চায়না থ্রি লিচু ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা হাজার টাকা দরে বিক্রি হতে থাকে। তারপরেও মানসম্মত লিচু পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়েছে। এরপরেও ব্যবসায়ীদের আশা আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে দাম আরো বাড়বে। ফলে তারা যে ক্ষতির আশংকা করেছিল তা কেটে গেছে এবং কৃষক ব্যবসায়ী সন্তুষ্ট। অপরদিকে দাম যাই হোক লিচু খেতে পারছে এবং আত্বীয়-স্বজনকে পাঠাতে পারায় ক্রেতারাও খুশি।
প্রতিবছরের মত এবারও দিনাজপুরে লিচুর ফলন ভাল হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় এক হাজার হেক্টর বেশী জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। নদী-বন্দর এলাকা না হলেও এবার আম্ফান ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে দিনাজপুরসহ উত্তরের অনেক জেলায়। চলে লাগাতার ঝড়ো হাওয়া। ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে লিচু। তারপরেও ঝড়ে ক্ষতির পর যা লিচু ছিল তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়ে বাগান মালিক ফড়েয়া ও ব্যবসায়ীরা। কেননা দিনাজপুরের লিচুর সিংহভাগই যায় জেলার বাহিরে। বাগানগুলিও আগে ভাগে কিনে রাখে ফড়েয়ারা। করোণার প্রভাবে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। গণ পরিবহন বন্ধ থাকায় ফড়েয়ারা দিনাজপুরে আসতে পারে না। ফলে বাগানের পরিচর্যা থেকে সার বা ভিটামিন প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে পরিচর্যা না হলেও ফলন খুব খারাপ হয়নি। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার লিচুর সাইজ একটু ছোট হয়েছে। ফলন যাই হোক করোনা’র কারনে কৃষক ও বাগানীরা এবার লিচু থেকে কোন অর্থ পাবে না বলেই ধরে নিয়েছিল।
দুশ্চিন্তার মেঘ মাথায় নিয়ে বাগানীরা পূরোপুরি পরিপক্ক না হতেই গাছ থেকে লিচু পাড়তে শুরু করে। উদ্দেশ্য আগে ভাগে যতটুকু দাম পাওয়া যায় তাই যেন প্রাপ্তি। মে মাসের শেষ থেকেই বাজারে লিচু উঠতে শুরু করে। করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে দিনাজপুরের নিউ মার্কেট এলাকার লিচু বাজার বন্ধ করে দিয়ে স্থানীয় গোর-এ-শহীদ মাঠের দক্ষিন প্রান্তের খোলা জায়গায় স্থানান্তর করা হয়। ২ জুন বাজারের উদ্বোধন করেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাহবুবুল আলম। এসময় তিনি ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতের কথা জানান।
প্রথম দু-তিন দিন বাজারে বিপুল পরিমান লিচু উঠলেও ক্রেতা সমাগম কম হয়। ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়ে। বিক্রি হয় স্মরনাতীতকালে সর্বনি¤œ দামে। মাদ্রাজি জাতের লিচু বিক্রি হয় ৫ থেকে ৬’শ টাকা হাজার দরে। ঐতিহ্যবাহী বেদেনা লিচু বিক্রি ১৫’শ থেকে দুই হাজার টাকা দরে। পক্ক না হলেও অজানা আতংকে কাঁচা অবস্থায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হতে থাকে। মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে বাজারে ক্রেতারা যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এক লাফে সকল লিচু’র দাম বেড়ে যায় দ্বিগুনের বেশী। বৃহস্পতিবার বেদেনা লিচু সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫ হাজার, চায়না থ্রি লিচু ৬ থেকে প্রকারভেদে সাড়ে ৭ হাজার টাকা হাজার দরে বিক্রি হয়েছে। ক্রেতার চাহিদা মেটাতে ব্যবসায়ীরা হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে।
কোন সময় আবার লোকডাউন হয়ে যায় অজানা এই আতংকে ক্রেতারা যে ভাবে পারছে লিচু কিনছে। একইভাবে ব্যাপারী ও ফড়েয়ারা বাজার ও বাগান থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক লিচু ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে।
দাম যাই হোক লিচু কিনে খাওয়া যাচ্ছে এবং নিকট আত্মীয়দের পাঠানো যাচ্ছে তাতেই ক্রেতারা খুশি।
লিচু’র দামের সাথে কুরিয়র ও পরিবহন খরচও দ্বিগুন হয়ে গেছে।
দিনাজপুরের বেদেনা ও চায়না থ্রি লিচু অন্তত আরো পনের দিন বাজারে থাকবে। এর মধ্যে আসবে বোম্বেসহ অন্যান্য জাতের লিচু সাথে মিশ্রিভোগ ও গোপালভোগ সুস্বাদু আম। এ অবস্থায় করোণা ভাইরাসের কারনে ঢাকা ও চট্রগ্রামে লোকডাউনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও বিশেষ ব্যবস্থায় লিচু ও আম পরিবহন ব্যবস্থা সচল রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়েই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন