ঢাকায় এসে আটকে গেলেন করোনা চিকিৎসা দিয়ে আলোচিত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস। গত রোববার বিশেষ ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে তাকে আটকে দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। বিশেষ ওই বিমানে ১২৮ জনের মধ্যে তাকে ছাড়া সবাইকে ছেড়ে দিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। বর্তমানে তিনি মহাখালীতে অবস্থিত ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন।
ডা. ফেরদৌস জানান, তার করোনা নেগেটিভ সনদ এবং অ্যান্টিবডি টেস্ট পজিটিভ রিপোর্ট থাকার পরেও তাকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে তার আটটি স্যুটকেসও আটকে রেখেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। যেগুলোতে করোনার সুরক্ষা সরঞ্জামসহ কিছু ওধুষ রয়েছে। করোনার চিকিৎসা সেবা দিতে দেশে আসায় বিমান বন্দরে শুধুমাত্র ডা. ফেরদৌসকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানোতে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, ডা. ফেরদৌস খন্দকারের করোনার লক্ষণ থাকায় তােেক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। তিনি বর্তমানে মহাখালীতে ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন।
ডা. সাজ্জাদ বলেন, ডা. ফেরদৌস খন্দকারের করোনা নেগেটিভ সনদ থাকলেও অ্যান্টিবডি টেস্ট পজিটিভ থাকায় করোনা হয়েছিল এটি বোঝা যায়। এখন সেটি রিকভারি হয়ে গেছে না-কি এখনো অ্যাক্টিভ আছে সেটি আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না। এজন্য তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। সেখানে যদি দেখা যায় তার মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি নেই তাহলে তিনি চলে যেতে পারবেন।
গত রবিবার বিকেল ৫টায় ফেরদৌস খন্দকারসহ ১২৯ জনকে নিয়ে কাতার এয়ারওয়েজের বিশেষ ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, উচ্চতর ডিগ্রি নিতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, দর্শনার্থী, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী ছিলেন ফ্লাইটটির যাত্রীদের মধ্যে।
এদিকে, ডা. ফেরদৌস বাংলাদেশে পৌঁছলেও তার আটটি স্যুটকেস বিমানবন্দরে আটকে দেয়া হয়েছে। সে স্যুটকেসগুলোতে করোনা প্রতিরোধে ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস, পিপিইসহ চিকিৎসাসামগ্রী রয়েছে। এসব তিনি এনেছিলেন করোনার সম্মুখযোদ্ধাদের দিতে। এসব পণ্য আমদানিতে স¤প্রতি এনবিআর সব ধরনের শুল্ককর মওকুফ দিয়েছে। কিন্তু ডা. ফেরদৌস অভিযোগ করেন, শুল্ককর দিতে হবে। না হয় ছাড়া হবে না বলে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এসব সামগ্রী কাউকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেকোন হাসপাতালে দিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি। তবে এনবিআরের একটি সূত্র বলছে, শুল্ককর নয় কিছু প্রক্রিয়া শেষে স্যুটকেসগুলো ছাড়া হবে। এ নিয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।
গতকাল সোমবার নিজের ফেসবুক পেইজে (ডা. ফেরদৌস) লাইভে এসে তিনি এসব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমি ৮ টি স্যুটকেস নিয়ে এসেছিলাম। বেশকিছু মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই ইত্যাদি সামগ্রী ডাক্তার নার্সদের দেবো বলে। কিন্তু এয়ারপোর্টে আটকে দিলো। ট্যাক্স নাকি দিতে হবে। রেখেই দিলো। আনতে পারিনি। আপনাদের কেউ যদি থাকেন ছাড়াতে পারবেন। ছাড়িয়ে নিয়ে যান। তিনি বলেন, ফ্রন্টলাইনের যে কাউকে দিতে পারেন। আমি এসেছি আপনাদের পাশে, আমি কাজটুকু করতে চাই। আপনাদের মধ্যে যদি কেউ পারেন ছাড়িয়ে সেসব যে কোনো একটি হাসপাতালে দিয়ে দিতে পারেন। আমার কোনো দাবি নেই।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক প্রবাসী ডা. ফেরদৌসকে বঙ্গবন্ধুর খুনি মোশতাকের আত্মীয় এবং সাবেক ছাত্রদলের নেতা বলে উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন একজন সাংবাদিক। এর প্রেক্ষিতেই ডা. ফেরদৌসকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। যদিও এরই মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেলের সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ অনেকেই ফেরদৌসকে এক সময়ের ছাত্রলীগের সম্মুখযোদ্ধা উল্লেখ করে প্রমাণস্বরুপ সেই সব দিনের ছবিও ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন