মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সরকারি ‘আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স’ নেই

বেসরকারি রয়েছে মাত্র ১৬টি : খরচ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

দেশে করোনা চিকিৎসা সেবার সঙ্কট এখন চরমে। হাসপাতাল, ডাক্তার, টেকনিশিয়ান, ওষুধ, অক্সিজেন সঙ্কটের সাথে যোগ হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স সঙ্কট। সময়মতো সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সও পাওয়া কঠিন। রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলে লাইফ সাপোর্ট সুবিধাযুক্ত সরকারি কোনও ‘আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স’ নেই। বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ও ব্যক্তি মালিকানাধীন কয়েকটি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেগুলোর খরচ অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শ্বাসকষ্টের রোগীকে মানসম্পন্ন অ্যাম্বুলেন্স সেবা সঠিক সময় দিতে পারলে তার জীবনের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। তাছাড়া দেশের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডের সংখ্যা কম থাকায় রোগীদের এক জেলা থেকে আরেক জেলায় নিতে হচ্ছে। এজন্যও আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান খান বলেন, আমাদের প্রকৃত অর্থে কোনও আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স নেই। তবে সাতটি হাইটেক কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এগুলোতেও আইসিইউ’র কিছু সুবিধা পাওয়া যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে এই মুহূর্তে দেশে সরকারি কোনও আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে সরকারি সাতটি হাইটেক কার্ডিয়াক অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এগুলো তুরস্ক থেকে আনা হয়েছে। তবে এগুলো আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স নয়। এরকম আরও দুটি অ্যাম্বুলেন্স আনার প্রস্তাব রয়েছে। এই সাতটি অ্যাম্বুলেন্স দেশের বড় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোকে দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ঢাকা মহানগর অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে বেসরকারি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে মাত্র ১৬টি। এগুলোতে ভেন্টিলেশনসহ সব ধরনের সুবিধা রয়েছে বলে দাবি করেছে সংগঠনটি। এরমধ্যে ঢাকা সিটিতে ১২টি, চট্টগ্রামে দুটি, খুলনা ও সিলেটে একটি করে বেসরকারি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ এপ্রিল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মঈন উদ্দিন। এর আগে গত ৫ এপ্রিল তার শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ৭ এপ্রিল তাকে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। অবস্থার কোনও উন্নতি না হওয়ায় ৮ এপ্রিল সেখান থেকে পরিবারের ইচ্ছায় চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে আনা হয়। তার পরিবারের পক্ষ থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের দাবি করা হলেও তার ব্যবস্থা করা যায়নি। পরবর্তী সময়ে পরিবারের উদ্যোগে একটি বেসরকারি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকা নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসক মঈন উদ্দিনের পরিবারের মতো অনেকেই গুরুতর অসুস্থ রোগী স্থানান্তর নিয়ে জটিলতায় পড়েন। কারণ, দেশে সরকারি কোনও আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স নেই, আর বেসরকারি যা রয়েছে তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও মনে করেন, দেশে সরকারি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স থাকা দরকার। কখনও কখনও মুমূর্ষু রোগীদের লাইফ সাপোর্ট দিয়ে স্থানান্তর করতে হয়। আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স হলো একটি সুসজ্জিত নিবিড় পরিচর্যা অ্যাম্বুলেন্স। কোনও হাসপাতালের আইসিইউতে যা যা থাকে, মোবাইল আইসিইউ বা আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সেও সেসব সুবিধা থাকে। এই অ্যাম্বুলেন্স যাত্রাপথে রোগীকে সবরকম সুবিধা দিতে সক্ষম। এটির ভেতরে চিকিৎসক, উচ্চ প্রশিক্ষিত প্যারামেডিক্স ও নার্সদের জন্য জায়গা রয়েছে। মোট কথা, এটি অত্যাধুনিক অ্যাডভান্সড লাইফ সাপোর্ট (এএলএস) সংযুক্ত মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি দিয়ে সুসজ্জিত। ভেতরে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা ও আলো থাকে।
এদিকে, বেসরকারি দুটি হাসপাতালে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও তা পেতে শর্ত পূরণ করতে হয়। দেশে অত্যাধুনিক বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে কেবল ইউনাইটেড ও এভার কেয়ার হাসপাতালের আইসিইউ সুবিধাসহ অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এরমধ্যে ইউনাইটেড হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার বাইরে রোগী বহন করে না। কেবল ঢাকা সিটিতে তারা রোগী বহন করে বলে হাসপাতালটির কাস্টমার কেয়ার বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে। অপরদিকে এভার কেয়ার হাসপাতালের আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার বাইরে গেলেও তাদের শর্ত হচ্ছে-রোগীকে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। তাহলেই তাদের আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সের সেবা পাওয়া যাবে।
বেসরকারি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সের সেবা পেতে খরচ অনেক বেশি। ঢাকার ভেতরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা, ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। রোগীকে আনা-নেওয়ার সময় এসব অ্যাম্বুলেন্সে একজন চিকিৎসক ও একজন নার্সের সেবা পাওয়া যাবে। এত বেশি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে ঢাকা মহানগর অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সগুলোতে একজন নার্স ও চিকিৎসক দিয়ে থাকি। তাদের টাকা দিতে হয়। ঢাকার বাইরে একজন চিকিৎসক পাঠালে তাকে ন্যূনতম ৮/১০ হাজার টাকা দিতে হয়। নার্সকে দিতে হয় পাঁচ হাজার টাকা। তাই খরচ একটু বেশি পড়ে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রায় এক হাজারের বেশি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। দেশের ৪৯২টি উপজেলার সব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। তবে কিছু অ্যাম্বুলেন্স পুরনো হওয়ায় ব্যবহারের উপযোগিতা হারিয়েছে। বর্তমানে দেশের সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও কয়েকটি উপজেলার অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট রয়েছে। এছাড়া, দেশের সরকারি জেলা হাসপাতালে দেড় শতাধিক, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অর্ধশতাধিক, স্নাতকোত্তর ও বিশেষায়িত হাসপাতালে ১৬টির বেশি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এছাড়া, দেশে ২০টির মতো নৌ অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে, যেগুলো রোগীদের সেবা দিয়ে থাকে। তবে দেশে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে প্রায় ৮ হাজার। যদিও এগুলোর সব অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে নিবন্ধিত না। কিছু মাইক্রোবাস কেটে অ্যাম্বুলেন্স বানানো হয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
মোহাম্মদ আলী ৯ জুন, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
এম্বুল্যান্স গাড়ির ভাড়া বেশি কেন? বাস্তবতা হিসাব করিনা সরকার একটি গাড়ি থেকেই কত টাকা ভ্যাট আরোপ করে থাকে, ঔ গাড়িটির রিপেয়ার কস্ট, গাড়ির তৈলের ভ্যাট আরোপ,চালক, বাৎসরিক টোকেন, ইনকাম ভ্যাট ও ইনবেস্টম্টেন রিটার্ন কিংবা ব্যাংক লোন কখনও করি না। একশো টাকার গাড়ি কিনতে হয় পাঁচ শত টাকা দিয় আর বিশ টাকার তৈল কিনতে হয় একশো টাকায়। সবদিকে সরকার আয়, আয়ের উৎস আয়োজন করবে আর ভাল ও সস্তায় সেবা খুজবেন। এটা আমার কাছেই হাস্যরস ছাড়া আর কিছু মনে হয়না।
Total Reply(0)
Mohammad Sirajullah, M.D. ৯ জুন, ২০২০, ৩:১০ এএম says : 0
Thank you Mr. Ali for your comment.
Total Reply(0)
Obaid ৯ জুন, ২০২০, ১২:৪৪ পিএম says : 0
Ami chai sob upojelai 1ti icu ambulance governments k dity onurud korbo R prottrk village korona test korty akjon kory sample man pathan emergency baceses Thanks Obaid
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন